খালেদা জিয়া কারাগারেতো রেস্টেই আছেন: অ্যাটর্নি জেনারেল

খালেদা জিয়ার হাটুঁতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তাই তিনি চলাফেরা করতে পারেনা। তাহলে উনার বাইরে হাঁটার দরকার কী? উনার রেস্ট প্রয়োজন। উনি কারাগারে তো রেস্টেই আছেন। এমন মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

মঙ্গলবার (৮ মে) দুপুর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৪ সদস্যের বেঞ্চে শুনানিকালে মাহবুবে আলম এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, সময় নষ্ট করে লাভ নেই। বরং আমরা আপিল শুনানি শেষ করি।

শুনানির  শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেল এ মামলার বিচারকি আদালতের দেওয়া সাজার নথিগুলো আদালতে উপস্থাপন করেন।

পরে তিনি বলেন, ‘বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিলের পেপারবুক এরই মধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। আমরা চাইলে এ মামলার আপিলের শুনানি শুরু করতে পারি। মূল আসামি যেহেতু খালাস পাননি। এ মুহূর্তে তাঁকে জামিন দেওয়া যায় না। তাই আপিল নিষ্পত্তি করা হোক।’

এ সময় তিনি দক্ষিণ কোরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট পার্ক গিউন হায়কে ২৪ বছরের কারাদণ্ড এবং ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট লুলা ডি সিলভাকে ১২ সাজা দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন এবং বলেন, তাঁদেরও জামিন দেওয়া হয়নি।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘মাই লর্ড, মেডিকেল রিপোর্টে বলা হয়, খালেদা জিয়ার পায়ের হাটুঁতে ব্যথা। তিনি হাঁটতে পারেন না। উনার ঘাড়ে ব্যথা। উনার উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। এত কষ্ট করে হাঁটার দরকার কী? উনি তো কারাগারে রেস্টেই আছেন।’

এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলে ওঠেন, ‘উনার এসব কথা বলার দরকার কী? উনি রাষ্ট্রের একজন প্রধান আইন কর্মকর্তা। উনি কি এসব বলতে পারেন?’ এ সময় আদালতে হৈচৈ শুরু হয়ে যায়। পেছন থেকে আইনজীবীরা ‘শেইম, শেইম’ বলা শুরু করেন।

এ পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘উনাকে বলতে দিন।’ এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল আবার বলা শুরু করেন। এ সময় তিনি এ মামলার সাজার বিভিন্ন নথি পড়া শুরু করেন। একপর্যায়ে বলেন, ‘কারাগারের ডাক্তার উনাকে চেকআপ করলেন। পরে নাপা ওষুধ সেবনের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু উনার ব্যক্তিগত ডাক্তররা দেখা করলেন, আবার বাইরে এসে সংবাদ সম্মেলন করেন। এটা কীভাবে সম্ভব। তারা তো ডাক্তার, ট্রিটমেন্ট করবে। সংবাদ সম্মেলন করতে পারে না। উনারা পরামর্শ দিলেন ইউনাইটেড হাসাপাতালে ভর্তির জন্য। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ উনাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা করিয়েছেন। তাই করাগারে উনার সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কেননা, উনার সঙ্গে একজন সেবিকাও দেওয়া হয়েছে।’

এ সময় খালেদা জিয়ার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘এটি দেশের সর্বোচ্চ আদালত। তিনি এগুলো বলতে পারেন না। এমন একটি মামলায় তিনি দাঁড়াতে পারেন না। তখন আইনজীবীরা চিৎকার করে বলতে থাকেন ইয়েস! ইয়েস!’

এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘তাঁকে সাবমিট রাখতে দিন।’ এরপর অ্যাটর্নি জেনারেল আবার মামলার নথি পড়া শুরু করেন।

এ সময় খালেদা জিয়ার অপর আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘এখন তো জামিনের শুনানি চলছে। আপিলের না। এ সময় আইনজীবীরা হৈচৈ শুরু করলে বিচারকক্ষের পরিবেশ কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।’

এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘হোক না। শেষ হয়ে গেছে! শেষ করতে দিন। আমরা এভাবে শুনতে পারব না।’ একপর্যায়ে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এ মামলায় আপিলের নথি প্রস্তুত। আমরা চাইলে আগামীকাল থেকে শুনানি শুরু করতে পারি।’

এরপর খালেদা জিয়ার আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী শুনানি শুরু করেন। তিনি এ সময় অ্যাটর্নিকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘দুদক (দুর্নীতি দমন কমিশন) একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। তাঁদের আইনজীবী রয়েছে। আপনি এখানে শুনানি করতে পারেন না। আপনি কি রাষ্ট্রের নাকি দুদকের আইনজীবী?’ এ সময় অ্যাটর্নি জেনারেল এবং এ জে মোহাম্মদ আলীর মধ্যে বাকবিতণ্ডা শুরু হয়। এ পর্যায়ে আদালত উভয়পক্ষকে শান্ত করেন। এর আগে সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে দুদকের আইনজীবী শুনানি শুরু করেন।

আদালতে খালেদা জিয়ার পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী, খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন, মাহবুবউদ্দিন খোকন, বদরুদ্দোজা বাদল, কায়সার কামাল।

গত ১৯ মার্চ প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বিভাগ খালেদা জিয়াকে হাইকোর্টের দেওয়া চার মাসের জামিন ৮ মে পর্যন্ত স্থগিত করেন। একই সঙ্গে জামিনের বিরুদ্ধে দুদক ও রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আপিল করে।

গত ১২ মার্চ খালেদা জিয়াকে চার মাসের জামিন দেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের দেওয়া চার মাসের জামিন স্থগিত চেয়ে পরের দিন রাষ্ট্রপক্ষ ও দুদক আপিল করে। পরে ১৪ মার্চ আপিল বিভাগ জামিনের স্থগিতাদেশ দেন। পরদিন ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম খান জামিনের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল দায়ের করেন।

গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ পাঁচ আসামিকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড এবং আসামিদের দুই কোটি ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। রায় ঘোষণার পর পুরান ঢাকার পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়াকে রাখা হয়।

আরজেড/