খুলনা-কলকাতা রুটে ৫২ বছরের অপেক্ষার অবসান কাল

অবশেষে বহুল প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে খুলনা-কলকাতা রেল চলাচল। তবে আগামীকাল থেকে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও আসছে ১৬ নভেম্বর থেকে সেবাটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর যাত্রী পরিবহণ শুরু করবে বন্ধন এক্সপ্রেস। আর এর মধ্য দিয়ে কলকাতা ও খুলনার মধ্যে ৫২ বছর পর নিয়মিত চালু হতে যাচ্ছে যাত্রীবাহী রেল সেবা।

বাংলাদেশ রেলওয়ের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বাসসের এক খবরে জানানো হয়েছে এই তথ্য। খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ওই দিন বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে এগারটায় এক যৌথ ভিডিও কনফারন্সের মাধ্যমে এই রেল চলাচল কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন।

কলকাতা থেকেই বন্ধন এক্সপ্রেস প্রথমে যাত্রা শুরু করবে। বন্ধনের সময়সূচি অনুসারে বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে এগারটায় কলকাতা স্টেশন থেকে ছেড়ে ১৭৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে খুলনা স্টেশনে এসে থামবে।

এর আগে কথা ছিল গত ৩ আগস্ট থেকে খুলনা-কলকাতা নতুন রেল সার্ভিস চালু হবে। সেই উপলক্ষ্যে আর সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছিল। কিন্তু ভারতের কেন্দ্রীয় রেল বোর্ডের প্রয়োজনীয় অনুমতি না পাওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ে কলকাতা-খুলনা যাত্রীবাহী রেল সার্ভিস।

তবে গত ১৩ সেপ্টেম্বর নয়া দিল্লিতে দুই দেশের রেল কর্মকর্তাদের মধ্যেকার এক বৈঠকে আসছে ১৬ নভেম্বর থেকে সেবাটি চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ৩ তারিখের ওই বৈঠকে নতুন এই রেল সেবাটির নাম বন্ধন এক্সপ্রেস করার প্রস্তাব করা হয়।

প্রথম পর্যায়ে ট্রেনটি সপ্তাহে দুই দিন চলবে বলে জানানো হয়েছে। ট্রেনটিতে মোট ১০টি এসি কোচ থাকছে। থাকছে এসি কেবিন ও চেয়ার কার। থাকছে ৪১৮ যাত্রীর বসার ব্যবস্থা। অভিবাসন ও শুল্ক বিভাগের কাজ হবে পেট্রাপোল ও বেনাপোল সীমান্তে।

কলকাতা-খুলনার এই ১৭৬ কিলোমিটার পথের ভাড়া নির্ধারিত হয়েছে এসি কেবিন ৮ ডলার ও চেয়ার কার ৫ ডলার।

উল্লেখ, ভারতের পেট্রাপোল এবং বাংলাদেশের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে এক সময় যাত্রী ট্রেন চলাচল করত। কলকাতা থেকে এই লাইন দিয়েই ছুটত উত্তরবঙ্গ ও অসমমুখী ট্রেনগুলিও। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই লাইনে একটি সেনাদের ট্রেন নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। রাজনৈতিক পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ায় তার পরে আর ট্রেন চলেনি। পরে দুইদেশের মধ্যে ওই লাইনটিও ছিন্ন করে দেওয়া হয়।

কিন্তু মানুষের দীর্ঘদিনের চাহিদার কথা মনে রেখে ২০০১ সালে তৎকালীন রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুরোধে দুইদেশের রেল মন্ত্রণালয় আলোচনার পরে পেট্রাপোল ও বেনাপোলের লাইনটি ফের সংযুক্ত করে।

তখন থেকেই ওই লাইনে ট্রেন চালানোর বিষয়ে আলোচনা চলেছে। গত বছর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ঢাকা সফরে ট্রেন চলাচলের বিষয়টি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আর একপ্রস্ত কথা হয়। ঠিক হয়, এ বছরেই ট্রেন চলাচল শুরু হবে।

পরীক্ষামূলকভাবে গত এপ্রিলে সোনার তরী এক্সপ্রেস নামে চলতেও শুরু করে একটি ট্রেন। তবে ভারতের কেন্দ্রীয় রেল বোর্ডের প্রয়োজনীয় অনুমতি না পাওয়ায় অনিশ্চিত হয়ে পড়ে কলকাতা-খুলনা যাত্রীবাহী রেল সার্ভিস। সোনারতরীর পরীক্ষামূলক চলাচলে অতিরিক্ত ভিড় হয়ে যায়। অথচ তখন তা নিয়ন্ত্রণ করার মতো ব্যবস্থা ছিল না। ফলে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থেকেই স্থগিত করা হয় সেবাটি।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে ৮ নভেম্বর ২০১৭