খুলে গেল সূর্যতোরণ : শেরপুরবাসীর ঘরে ঘরে আলোর পরশ

প্রাক-নির্বাচনী প্রচার প্রচারনার ডামাডোলে রাজনীতির মাঠে অনেক প্রতিশ্রুতিই শোনা যায়। শেরপুরবাসীও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু বিগত নির্বাচনে ঘরে ঘরে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়ার যে ওয়াদা করা হয়েছিল আওয়ামী লেিগর নির্বাচনী ইশতেহারে, তা ছিল চমকপ্রদ। জেলার প্রত্যন্ত এলাকার মানুষের কাছে বিদ্যুতের ঝলমলে আলো পৌঁছবে, এও কি সম্ভব ! সেই কষ্টকল্পিত স্বপ্নই পূরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বর্তমান সরকার। ৪টি পৌরসভায় ও ৫২টি ইউনিয়নের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার তার নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করেছে।

শেরপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, জেলায় বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মিটিয়ে প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে আলোয় আলোকিত করা হয়েছে। জেলা পিডিবি’র নির্বাহী প্রকৌশলী সুব্রত রায় জানান, ‘২০০৮ সালে আমাদের বিদ্যুতের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ৬শত ২১টি, তা বৃদ্ধি পেয়ে ২০২২ সালে দাড়িয়েছে ৪৪ হাজার ৫শত ৫টি । ২০০৮ সালে সেচ সংযোগ ছিলো ৭শত ১৫টি, বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১ হাজার ৭শত ৫৮টি। সিস্টেম লস ছিলো ১৬.১৬, বর্তমানে তা হ্রাস পেয়ে দাড়িয়েছে ৭.৯৩, বিতরণ ট্রান্সফরমার ছিলো ১৪৫টি, বর্তমানে ৩১১টিতে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পুরাতন লাইন পরিবর্তন করে তা আধুনিকায়ন করার কাজ চলমান রয়েছে। পিডিবির ৩৪ হাজার ৫শত সংযোগে প্রিপ্রেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে, যা চলমান রয়েছে।

শেরপুর শহর থেকে ৫ কিলোমিটার পূর্বে গাজীরখামার ইউনিয়নে ২০১৫ সালে ১৩২/৩৩ কেভি উপগ্রীড নির্মাণ করা হয়েছে, যার ফলে শেরপুর জেলায় নিরবিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে। বিদ্যুতের ঘাটতি না থাকায়, এবার বোরো আবাদে কৃষকদের সেচ পানির ভোগান্তিতে ভোগতে হচ্ছে না।’

শেরপুর পল্লীবিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মোঃ আলী হোসেন বলেন, ‘২০০৮ সালে জেলায় আমাদের গ্রাহক সংখ্যা ছিল ৩৭ হাজার ৮শত ৪৭টি, বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে ২ লক্ষ ৪৬ হাজার ২শত ১৪টিতে দাড়িয়েছে। ফলে জেলার ৫২টি ইউনিয়নে শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা সম্ভব হয়েছে। ২০০৮ সালে বিতরণ লাইন ছিলো ১ হাজার ৬শত ৩৩ কিলোমিটার, বর্তমানে তা দাড়িয়েছে ৪ হাজার ১শত ৪৭ কিলোমিটার। ২০০৮ সালে পল্লীবিদ্যুতের সিস্টেম লস ছিল ১৬.৯২%, বর্তমানে তা ৫.৪৪% হ্রাস পেয়ে দাড়িয়েছে ১১.৪৮%।

শেরপুর-জামালপুরের পিডিবির সুপারেন্টেন্ড প্রকৌশলী মোঃ ফারুক হোসেন বলেন, ‘২০০৮ সালের পূর্বে শেরপুর জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহর অবস্থা নাজুক ছিলো। তখন আমরা শেরপুর জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারতাম মাত্র ২০-৩০ মেগাওয়াট, এখন আমরা প্রতিদিন ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে যাচ্ছি। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করায়, আমরা এখন নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারছি। যার ফলে জেলায় শিল্প বাণিজ্য ও কৃষি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।’

শেরপুর নয়ানী বাজারের বাসিন্দা স্বপ্না রাণী দে বলেন, ‘প্রিপেইড মিটারের সংযোগ দেওয়ার ফলে আমাদের আগের ন্যায় এখন আর ভূতোড়ে বিল দিতে হয় না। এখন যা প্রয়োজন তাই রিচার্জ করে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে পারি। এটা সরকারের একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ।’

শেরপুর সদর উপজেলার বলাইরচর ইউনিয়নের গ্রাহক হাবিবুল্লাহ মাস্টার জানান, ‘আমরা কোনদিনও এই প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিদ্যুৎ পাবো বলে চিন্তা করি নাই। কিন্তু বর্তমান সরকারের অসাধারণ সাফল্যেই আমরা এখানে বিদ্যুৎ পেয়েছি।’

শ্রীবরদী উপজেলার গারো পাহাড়ের গহীন জঙ্গলের বাসিন্দা পাঞ্জল সাংমা বলেন, ‘আমাদের বয়োবৃদ্ধ লোকেরা কোন দিন বিদ্যুতের আলো দেখেননি। কিন্তু বর্তমান সরকারে দূরদর্শী নেতৃত্বের ফলে আমাদের ঘরে এখন বিদ্যুতের আলো পৌঁছেছে।,

শেরপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ মোমিনুর রশীদ বলেন, ‘বর্তমান সরকারের বিদ্যুৎ খাতের অসাধারণ সাফল্য একটি মাইল ফলক হিসেবে ইতিহাসের পাতায় স্থান পাবে। এ খাতে যেমনি সিস্টেম লস কমেছে, তেমনি বকেয়া আদায়ের হারও বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে শিল্প কারখানা, বাসা-বাড়ি ও সেচ সংযোগে নিরবিচ্ছন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।’

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সরকার দলীয় হুইপ মোঃ আতিউর রহমান আতিক বলেন, ‘আমরা নির্বাচনী ইসতেহারে বলেছিলাম, দেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিবো। সেই অনুযায়ী ২০২২ সালের প্রথম দিকেই আমরা ১০০ ভাগ বিদ্যুতায়ন কওে, প্রতিটি বাড়ি আলোকিত করেছি।

শুধু তাই নয়, আমরা ডিজিটাল সেবা চালু করায় গ্রাহকরা ঘরে বসে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ, মিটার রিচার্জ ও বিভিন্ন তথ্যাদি জানতে পারছে। এখন আর গ্রাহকদের বিদ্যুৎ অফিসে যেতে হয় না। ঘরে বসেই সেবা নিতে পারছে। শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহণের পর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা ১০টি উদ্যোগের মধ্যে ‘ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ও একটি অন্যতম। তা আমরা বাস্তবায়ন করতে পেরেছি।’ খবর-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান