গাজা সীমান্তে ফের বিক্ষোভ

গাজা সীমান্তে বিক্ষোভ অব্যাহত আছে। বিক্ষোভে ইসরায়েলি বাহিনীর ছোড়া গুলিতে শতাধিক ফিলিস্তিনি আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।

শুক্রবার (২৫ মে) বিক্ষোভেও কয়েক হাজার তরুণ-যুবক অংশ নেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

উল্লেখ্য,  ১৯৪৮ সালে শরণার্থী হওয়া লাখ লাখ মানুষকে ইসরায়েলের দখলে থাকা এলাকায় ফিরতে বাধা দেওয়ার প্রতিবাদে হামাসসহ বেশ কয়েকটি দল ও গোষ্ঠী এ বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিল।

বিক্ষোভের শুরুর দিন হিসেবে বেছে নেওয়া হয় ৩০ মার্চকে; ১৯৭৬ সালের এই দিনে ভূমি দখলের প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ছয় বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছিলেন।

ইসরায়েলের মার্কিন দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে সরিয়ে নেওয়ার আনুষ্ঠিকতার সময় চলতি মাসের মাঝামাঝি বিক্ষোভ তুঙ্গে ওঠেছিল। বিক্ষোভের পাল্টায় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে কেবল ১৪ মে-তেই ৬০ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছিলেন।

এরপর থেকে সহিংসতার পরিমাণ কমে এলেও বিক্ষিপ্তভাবে বিক্ষোভ চলছেই।

মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া সীমান্ত বরাবর এ বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ১১৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা।

শুক্রবারের বিক্ষোভে বেশিরভাগ ফিলিস্তিনিই সীমান্ত বেষ্টনির ৮০০ মিটার দূরে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ জানান। কয়েক ডজন তরুণ বেষ্টনির একটি স্থানের ৩০০ মিটারের কাছাকাছি গিয়ে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে দেয়। গাজার পূর্ব দিকের সীমান্তেও কিছু তরুণ সীমান্ত বেষ্টনির কাছাকাছি চলে এসে তা টেনে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা চালায়।

প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি বাহিনীর সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের দিকে তাজা গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। সৈন্যরা ইসরায়েলের মাটিতে নামার আগেই বেশ কয়েকটি ঘুড়িও গুলি করে ভূপাতিত করে। দখল করা এলাকায় ইসরায়েলি ফসলের ক্ষেত জ্বালিয়ে দিতে লেজের দিকে আগুন লাগিয়ে ঘুড়িগুলো উড়িয়েছিল ফিলিস্তিনি বিক্ষোভকারীরা।

বিক্ষোভে অন্তত ১০ ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন, সবমিলিয়ে ১০৯জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন গাজার স্বাস্থ্য কর্মীরা।

এদিনের বিভিন্ন বিক্ষোভে হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া ও দলটির গাজা অংশের শীর্ষ নেতা ইয়েহিয়া আল-সিনওয়ার অংশ নেন বলেও জানিয়েছে রয়টার্স। তাদের উপস্থিতি বিক্ষোভকারীদের আরও আন্দোলিত করে।

“মার্চ অব রিটার্ন শেষ হয়নি। হয়তো ছোট হয়ে এসেছে, তবে আমরা চালিয়ে যাব,” বলেন কাঁদানে গ্যাসের হাত থেকে বাঁচতে পরনের টিশার্টকে মুখোশ বানিয়ে গাজার দক্ষিণ সীমান্তে অবস্থিত খান ইউনুসের পূর্বদিকে হওয়া এক বিক্ষোভে অংশ আলি।

ইফতারের সময় ঘনিয়ে এলে সন্ধ্যার দিকে বিক্ষোভকারীরা ফিরে যান।

২০০৭ সাল থেকেই গাজা হামাসের নিয়ন্ত্রণে আছে, যাদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবে বিবেচনা করে ইসরায়েল ও তার মিত্ররা। দশককালেরও বেশি সময় ধরে হামাসের উত্থানে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত মিশর ও ইসরায়েল গাজা সীমান্তে অবরোধ আরোপ করে রেখেছে। তাদের এ অবরোধের ফলে ফিলিস্তিনি শহরটির অর্থনীতি একেবারেই ধ্বসে পড়েছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স।

মার্চের শেষদিক থেকে সীমান্ত বরাবর বিক্ষোভের ডাক দিয়ে হামাসই সহিংসতা উসকে দিয়েছে বলে অভিযোগ তেল আবিবের।

“তারা বেসামরিকদের, বিশেষ করে নারী ও শিশুদের লাইন অব ফায়ারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে, যেন হতাহতের পরিমাণ বাড়ে। আমরা কমানোর চেষ্টা করছি, আর তারা চাচ্ছে হতাহতের সংখ্যা বাড়িয়ে ইসরায়েলের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে, যা ভয়ানক,” গত সপ্তাহে সিবিএস নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছিলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।

আরজেড/