শুরু হয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ভোট গ্রহণ। মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়। চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
সুষ্ঠুভাবে এই সিটিতে নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য সর্বস্তরের নিরপত্তা ব্যবস্থা জোড়দার করেছ নির্বাচন কমিশন। তাইনিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে পুরো সিটি করপোরেশন এলাকা।
নির্বাচনী এলাকায় টহল দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ভোট গ্রহণের জন্য নির্বাচনী এলাকার সব অফিস, কল-কারখানা, স্কুল কলেজসহ প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর ২০১৩ সালে এ সিটিতে প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে মেয়র পদে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নর্বাচিত হন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক এম.এ. মান্নান।
সে সময় অধ্যাপক মান্নান মেয়র পদে নির্বাচিত হলেও গত পাঁচ বছরের অধিকাংশ সময় তিনি কারাগারে বন্দি ছিলেন। দ্বিতীয় বারের মতো এ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে মোট ৪২৫টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনী প্রচারণা গত রোববার রাত ১২টায় শেষ হয়। সোমবার প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ না নিয়ে ভোটের কর্মকৌশল নিয়ে কর্মব্যস্ত দিন পার করেছেন। এদিন আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম সকাল থেকেই মালেকের বাড়ি ছয়দানা এলাকায় প্রধান নির্বাচন পরিচালনা কার্যালয়ে নির্বাচনী দাপ্তরিক কাজ নিয়ে ব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেন। মহানগরীর ৫৭টি ওয়ার্ডে ৪২৫ কেন্দ্রের ২ হাজার ৭৬১টি বুথে পাঁচ সহস্রাধিক পোলিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করবে। সেইসব কর্মীদেরসহ সব কেন্দ্র কমিটি, কেন্দ্রের ভেতরে ও বাইরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীদের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তাছাড়া ইশতেহার, লিফলেট, ব্যাচ, পোস্টার ও নির্বাচনী উপকরণ কেন্দ্র কমিটির কাছে পৌছে দেওয়াসহ সব কর্মকাণ্ড তিনি তদারকি করেন।
নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও গাজীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. তারিফুজ্জামান জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এলাকার পরিবেশ, কেন্দ্রগুলোর অবকাঠামো ও যাতায়ত ব্যবস্থা এবং এলাকাবাসীর শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ নানা বিষয় বিবেচনায় নিয়ে ছয়টি ভোট কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করে ভোট গ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হয়। ওই প্রস্তাব অনুমোদিত হওয়ায় ইভিএম ভোটিং প্রশিক্ষণ প্রদানের কাজ শুরু করা হয়।
নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মন্ডল জানান, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে চাপুলিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (ভোটার-২৪৮০), চাপুলিয়া মফিজউদ্দিন খান উচ্চবিদ্যালয় (ভোটার-২৫৫২), পশ্চিম জয়দেবপুরের মারিয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র-১ (ভোটার-২৫৬২), মারিয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র-২ (ভোটার-২৮২৭), রানী বিলাসমনি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র-১ ( ভোটার-১৯২৭) ও রানী বিলাসমনি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্র-২ (ভোটার-২০৭৭) এ ছয়টি কেন্দ্রে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করার জন্য নির্বাচন কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হয়। কেন্দ্রগুলোর অবকাঠামো ও যাতায়াত ব্যবস্থা, এলাকার পরিবেশ এবং এলাকাবাসীর শিক্ষাগত যোগ্যতাসহ নানা বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এ কেন্দ্রগুলো নির্বাচন করা হয়। নির্বাচন কমিশন থেকে ৪৮ জনের একটি প্রশিক্ষিত টিম ইভিএম ভোটিং শিক্ষাপ্রদান করেন।
প্রার্থী, সমর্থক কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেদিক থেকেই অনিয়ম হোক না কেন, তা কঠোরভাবে দমনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মন্ডল। নির্বাচনের আগের দিন সোমবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘যদি কেউ নির্বাচনে অন্যায়-অনিয়ম করে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের কড়া ম্যাসেজ দেওয়া হয়েছে যে, নির্বাচনের কাজে যদি বিঘ্ন সৃষ্টি করে, সে প্রার্থী হতে পারে বা সমর্থক হতে পারে, বা কোনো অফিসিয়াল হতে পারে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা আমরা কড়া আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
আজ সিটি মেয়র ও কাউন্সিলর পদে জনপ্রতিনিধি বাছাইয়ে ভোট দেবে গাজীপুরবাসী। এই নির্বাচনে ৪২৫টি কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। মোট সাত মেয়র প্রার্থীর পাশাপাশি ২৫৪ জন সাধারণ কাউন্সিলর ও ৮৪ জন সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
রাসেল/