জুলাই’২০০৭ থেকে ডিসেম্বর’২০১২ পর্যন্ত ৫ অর্থবছরে ফাঁকি দেওয়া ২ হাজার ৪৮ কোটি টাকার কর দিতেই হচ্ছে দেশে ব্যবসা পরিচালনাকারী মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোকে। এর মধ্যে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি গ্রামীণফোনের কর ফাঁকির পরিমাণ ১ হাজার ২৩ কোটি ২৩ লাখ ৩১ হাজার টাকা। যা দেশের ৪টি বেসরকারি মোবাইল ফোন অপারেটরের ফাঁকি দেওয়া মোট করের অর্ধেকেরও বেশি।
অন্য ৩ কোম্পানির মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫৩২ কোটি ৪১ লাখ ৪৫ হাজার টাকার কর ফাঁকি দিয়েছিল বাংলালিংক। এছাড়া রবি ৪১৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকার এবং এয়ারটেল ৭৮ কোটি ৭৮ লাখ ২৪ হাজার টাকার কর ফাঁকি দিয়েছিল।
ওই করের অর্থ পরিশোধ থেকে বিরত থাকতে আইনি লড়াইয়ে নেমেছিল মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলো। এতে বিশেষ কোনো সুবিধা পাওয়া যায়নি। গত ২৯ জুন ওই মামলার রায় দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। এতে কোম্পানিগুলোকে ওই অর্থ পরিশোধ করতে বলা হয়েছে। ফলে গ্রামীণফোনসহ দেশের ৪ বেসরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোকে ওই ৫ অর্থবছরের ফাঁকি দেওয়া কর পরিশোধ করতেই হবে।
এদিকে নতুন করে দেশের বেসরকারি ৪ মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগ তুলেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সংস্থাটির তথ্য মতে, জুলাই’২০১২ থেকে জুন’২০১৫ পর্যন্ত ৩ অর্থবছরে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলোর সিম রিপ্লেসমেন্ট বাবদ ৮৮৩ কোটি ৩২ লাখ টাকার কর ফাঁকি দিয়েছে কোম্পনিগুলো। এর মধ্যে শুধু গ্রামীণফোনের কর ফাঁকির পরিমাণ ৩৭৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
অন্য ৩ কোম্পানির মধ্যে রবির কাছে ২৮৫ কোটি ২০ লাখ টাকা; বাংলালিংকের কাছে ১৬৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা এবং এয়ারটেলের কাছে ৫০ কোটি ২৬ লাখ টাকা দাবি করেছে সরকারের রাজস্ব আহরণকারী সংস্থা এনবিআর। পুরোনো সিম আবার বিক্রির মাধ্যমে ফাঁকি দেওয়া করের এই অর্থ চেয়ে গ্রামীণফোন, রবি, বাংলালিংক, এয়ারটেলকে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটির বৃহৎ করদাতা ইউনিট (এলটিইউ)।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ২০১২-১৩ অর্থবছর, ২০১৩-১৪ অর্থবছর এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে নতুন সিম কেনার জন্য ৬০০ টাকা হারে পরিশোধ করতে হতো গ্রাহকদের। সে সময়ে সিম বিক্রিতে মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ছিল ৩০০ টাকা। তবে সিম পরিবর্তনের ক্ষেত্রে কোনো ট্যাক্স নেওয়া হতো না। এই সুযোগের অপব্যবহারের মাধ্যমে পুরাতন সিম নতুন করে বিক্রি করেছিল কোম্পানিগুলো। অর্থাৎ নতুন গ্রাহকের কাছে বিক্রি করা হয়েছিল সিমগুলো।
সূত্র জানিয়েছে, পুরোনো বন্ধ সিম নতুন করে বিক্রি করেছে অপারেটরগুলো। তবে সিম পরিবর্তন দেখিয়ে নতুন গ্রাহকের কাছে পুরাতন সিম বিক্রি করেছিল তারা। আর এর মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ কর ফাঁকি দিয়েছে কোম্পানিগুলো। এখন বেসরকারি ৪ মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানির কাছে ফাঁকি দেওয়া করের অর্থ আদায়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
তবে মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানিগুলো বলছে, ২০১২-১৩ অর্থবছর, ২০১৩-১৪ অর্থবছর এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরের যে সিমগুলোর কর দেওয়ার জন্য এনবিআর চিঠি দিয়েছে- সেগুলোর জন্য একবার কর দেওয়া হয়েছিল। একই সিমের জন্য দুইবার কর দিতে হবে কেন?
আজকের বাজার: এলকে/এলকে ৮ জুলাই ২০১৭