শাহজাহান সাজু:
নোবেল বিজয়ী ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে কর্মরত অবস্থায়, ব্যাংকের জন্য অবৈধভাবে আয়কর অব্যাহতি গ্রহণসহ ‘আয়কর অধ্যাদেশ’ ১৯৮৪-এর বিভিন্ন শর্ত ও বিধি-বিধান লংঘন করা হয়েছে। ওই সকল বিষয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগের মাধ্যমে বিশদভাবে তথ্য সংগ্রহ করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রীসভা।
একইসঙ্গে মন্ত্রীসভা বৈঠকে গৃহীত এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন অগ্রগতি মন্ত্রীসভাকে অবহিত করার জন্য, হালনাগাদ তথ্য সংবলিত প্রতিবেদন আগামী ১৮ ডিসেম্বর, সোমবার পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, নোবেল বিজয়ী ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় ব্যাংকের জন্য বিভিন্ন সময়ে আয়কর, সুপার ট্যাক্স, মুনাফা কর ইত্যাদি বিষয়ে জারিকৃত প্রজ্ঞাপনের শর্ত ভঙ্গ, অবৈধভাবে আয়কর অব্যাহতি গ্রহণ, আয়কর রিটার্নের সঙ্গে অসত্য হিসাব বিবরণী সংযোজন এবং ১৩ টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে আইন-বহির্ভূতভাবে আয়কর সুবিধা গ্রহণসহ ‘আয়কর অধ্যাদেশ’ ১৯৮৪-এর বিভিন্ন শর্ত ও বিধি-বিধান লংঘন করা হয়েছে। ওই সকল বিষয়ে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বিশদ তথ্য সংগ্রহ করে প্রয়োজনে আইন ও বিচার বিভাগের মতামত গ্রহণ করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রী সভা।
জানা যায়, গ্রামীণ ব্যাংকের আয়কর ফাঁকির বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই ব্যাংকগুলোতে গত ছয় বছরে গ্রামীণ ব্যাংকের লেনদেনের তথ্য চেয়েছে সংস্থাটি। এছাড়া অন্য কোন উপায়ে কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে কিনা তাও যাচাই করা হচ্ছে। এনবিআরের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) বিষয়টি দেখভাল করছে। সিআইসি’র দুইজন সিনিয়র কর্মকর্তাকে এই বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আয়কর অধ্যাদেশের বিদ্যমান ক্ষমতাবলে গ্রামীণ ব্যাংকের আয়-ব্যয় ও লেনদেনের তথ্য অনুসন্ধ্যান, তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা এবং ব্যাংকসহ যে কোনো প্রতিষ্ঠানে একক বা যৌথ নামে পরিচালিত লেনদেন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।
পুরো কার্যক্রমের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে আজকের বাজারকে বলেন, গ্রামীণ ব্যাংক কোন ধরনের কর ফাঁকি দিয়েছে কিনা – এ বিষয়ে অনুসন্ধানের বিষয়ে এনবিআরের সিন্ধান্ত আছে। বিগত ছয় বছরের লেনদেন পরীক্ষা করার বিষয়ে আইনে আমাদের ক্ষমতা দেওয়া আছে। আমরা সেটাই করছি।
সূত্র জানায়, আইনবহির্ভূতভাবে কর অব্যাহতি, গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে কর্মরত থাকা অবস্থায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিদেশ থেকে ওয়েজ আর্নারের সুবিধা গ্রহণ এবং সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে আইন ভঙ্গ করার বিষয়ও এনবিআর তদন্ত করছে।
এদিকে গত ২৬ জানুয়ারী অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন, দেশের প্রচলিত নিয়ম মেনে তদন্ত শেষে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে ‘প্রযুক্তি খাতে রফতানির সম্ভাবনা’ শীর্ষক মত বিনিময় সভায় অর্থমন্ত্রী এসব কথা বলেছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন, মুহাম্মদ ইউনূস অসংখ্য প্রতিষ্ঠান খুলেছেন। সবগুলোর হিসাব আমাদের কাছে নেই। এসবের বিষয়ে তদন্ত চলছে।
প্রসঙ্গত, নোবেল বিজয়ী ক্ষুদ্র ঋণদানকারী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. ইউনূসের সঙ্গে সরকারের মতবিরোধ তৈরি হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আয়কর সংক্রান্ত বিষয়ও আলোচনায় আসে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ব্যাংকটি আয়কর অব্যাহতি পেয়ে আসছিল। অবশ্য মাঝে ছয় মাসের কর অব্যাহতি দেওয়া নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। পরে এনবিআর ওই ছয় মাসের কর অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে প্রতিষ্ঠানটি অন্য কোন উপায়ে কর ফাঁকি দিয়েছে কিনা তা নিয়ে আলোচনা তৈরি হয়।
আজকের বাজার : এসএস/ডিএইচ/ আরআর ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭