ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুলের’ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত সাতক্ষীরার কুল চাষিরা

সাতক্ষীরায় এ বছর কুল চাষ করে ৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা আয় হয়েছে। কুল চাষ বাড়লেও গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে কুলের ফলন কিছুটা কম হয়েছে। আর ফলন কম হওয়ার কারণ হিসেবে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুলকে’ দায়ী করছে কুল চাষিরা ও কৃষি বিভাগ।

এ অঞ্চলের কুলের সব থেকে বড় মোকাম খুলনার কাঁচা বাজার। সেখানকার ব্যবসায়ীরা সাতক্ষীরার কুল চাষিদের কাছ থেকে কুল কিনে নেন। সাতক্ষীরার এসব কুল ঢাকা, খুলনা, যশোরসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ির অফিস সহকারী শেখ হাফিজুর রহমান জানান, চলতি ২০১৯-২০ অর্থ বছরে জেলায় কুলের আবাদ হয়েছে ৬৫৪ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদরে আবাদ হয়েছে ১০৪ হেক্টর, কলারোয়া উপজেলায় ৩১৬ হেক্টর, তালা উপজেলায় ১৫৮ হেক্টর, দেবহাটা উপজেলায় ১৬ হেক্টর, কালিগঞ্জ উপজেলায় ২০ হেক্টর, আশাশুনি উপজেলায় ১৫ হেক্টর ও শ্যামনগর উপজেলায় ২৫ হেক্টর জমিতে। জেলায় কুল উৎপাদন হয়েছে ৬ হাজার ৭৬০ মেট্রিক টন।

তালা উপজেলার বাউখোলা গ্রামের কুলচাষি আজগর আলী মোল্লা বলেন, কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় সবজি চাষ বাদ দিয়ে পাঁচ বছর আগে কুলের চাষ শুরু করেছিলাম। গত বছর ৭৫ হাজার টাকায় তিন বিঘা জমিতে কুল চাষ করে দেড় লাখ টাকার ওপরে বিক্রি করেছি। চলতি বছর আরও এক বিঘা বেশি জমিতে কুল চাষ করেছি। তবে আশানুরূপ লাভ হয়নি। কুলের মুকুল আসার শুরুতেই ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে তা ঝড়ে পড়ে যায়। ভেবেছিলাম সাড়ে তিন লাখ টাকার ওপরে কুল বিক্রি করতে পারবো তবে ফলন কম হওয়ায় বিক্রি হয়েছে মাত্র দুই লাখ ২০ হাজার টাকা।

১৪ বছর ধরে কুল চাষ করছেন তালা উপজেলার বাউখোলা গ্রামের কাবিল শেখ। তিনি চলতি বছর ৫০ বিঘা জমিতে কুষ চাষ করেছেন। অন্যের জমি লিজ নিয়ে চাষাবাদ করেন এই কৃষক। এবার ২০ লাখ টাকা খরচ করে চাষাবাদ করেছেন। ৪০-৪২ লাখ টাকার কুল বিক্রির আশা করলেও বিক্রি হয়েছে ২৪-২৫ লাখ টাকা।

চাষি কাবিল শেখ বলেন, কুল চাষে খরচ কম আবার লাভও বেশি। জমিতে বাড়তি কোনো পরিচর্যার দরকার হয় না। এছাড়া কুলের মৌসুম শেষ হলে জমিতে অন্যান্য চাষাবাদও করা হয়। সেখান থেকেও বাড়তি আয় করা সম্ভব।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খামারবাড়ির উপপরিচালক অরবিন্দু বিশ্বাস জানান, সাতক্ষীরায় পাঁচ হাজার কুল চাষি রয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর কুল চাষ বেড়েছে তবে ফলন কমেছে। এ বছর জেলায় কুল উৎপাদন হয়েছে ৬ হাজার ৭৬০ মেট্রিক টন। কুল থেকে আয় হয়েছে ৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ৭ হাজার ৯২ মেট্রিক টন। আয় হয়েছিল ৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা।

তিনি বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের পরামর্শ ও সহযোগিতা দেয়া হয়। অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ায় সাতক্ষীরায় কুলের আবাদ বেড়েছে। তবে চলতি বছর ঘুর্ণিঝড় ‘বুলবুলের’ কারণে কুল চাষিদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।

তথ্য-ইউএনবি

আজকের বাজার/শারমিন আক্তার