চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে ভাসমান বেডে সবজি চাষে সাফল্য

জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শত-শত’ কৃষক আধুনিক ও নতুন মাত্রায় বিশেষ ব্যবস্থা অবলম্বন করে ভাসমান সবজি চাষে সাফল্য অর্জন করেছে।

বর্তমানে বর্ষার শেষ দিকের এ সময়ে অলস সময় না’কাটিয়ে ও বেকার বসে’না থেকে শীতের ফসল উৎপাদনের জন্য শ্রমদিয়ে যাচ্ছে। কৃষকরা ভাসমান বেডে বিষমুক্ত সবজি চাষ ও চারা উৎপাদন করে নিজেরা নিজেদের ভাগ্য বদল করে লাভবান হচ্ছে ব্যাপক হারে। শত-শত কৃষক এ অসময়ে পানির উপর বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে সবজি চাষের মাধ্যমে শাক-শবজি উৎপাদনের মাত্রা বৃদ্বি করে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করছেন।

এতে করে এ চাষকে কাজে লাগিয়ে নিজেরা যেমন স্বাবলম্বী হয়েছেন,তেমনি ফসল উৎপাদন করে এলাকার ও অন্যজেলারও চাহিদা পূরণ করতে পারছেন বলে কৃষি বিভাগ জানান। কৃষকরা জানান, শীতে আগাম ফসল উপাদন করে বাজারজাত করতে পারলে তারা অন্য সময় ফসল উৎপাদন করে যে পরিমান লাভবান হতো তার চেয়ে অনেক গুন বেশী অর্থ উপাজন করে লাভবান হচ্ছেন।

চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলায় সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়,ফরিদগঞ্জের শোভান এলাকার কৃষকরা ভাসমান বেডে শীতের সবজি চাষ ও চারা উৎপাদনে কৃষকের ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে এবং তাদের নিজস্ব লক্ষ্য মাত্রা অর্জন করে পারিবারিক আর্থিক সমস্যা সমাধান করেছেন। কৃষক ও কৃষি বিভাগের প্রচেষ্টায় ভাসমান বেডে জলজ উদ্ভিদ কচুরিপানার মাধ্যমে নিজেদের বুদ্বিমত্তায় ভাসমান বেড তৈরি করে সবজি ও চারা চাষাবাদ করার মাধ্যমে এ এলাকায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। বর্তমান বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে নিচু এসব এলাকার অধিকাংশ নিচু জমি পানির নিচে তলিয়ে যেতে দেখা যায়। তখন কৃষকের তেমন কাজ থাকে না।

তারা বেকার সময় কাটাতো । এ মৌসুমে যখন শাক সবজির আকাল থাকে, তখন এ চাষাবাদে কৃষক পরিবার নিজেদের কর্ম সৃষ্টি ও বিষমুক্তভাবে বিভিন্ন প্রকার ফসল, উৎপাদিত সবজি বাজারে অধিক মূল্যে বিক্রয় করে আর্থিকভাবে লাভবান হতে দেখা যাচ্ছে। এভাবে ফসল চাষ করে গত কয়েক বছর এ এলাকার কৃষকরা অনেক ভাল ভাবে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন যাপন করছেন বলে একাধিক কৃষক জানান।

ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৯ নং গোবিন্দপুর ইউনিয়ন এর শোভান গ্রামের মিজান গাজীসহ এ পদ্ধতিতে এ গ্রামের শত শত কৃষক ফরিদগঞ্জ রায়পুর সড়কের পূর্ব পাশের ডাকাতিয়া নদীর চরে এবং পাশের খালের পাশে ভাসমান বেডে আগাম শীতের সবজি চাষ ও চারা উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ডাকাতিয়া নদীর অববাহিকার ভাটি অঞ্চল ও ফরিদগঞ্জ উপজেলার বেশ কিছু এলাকা বর্ষাকালে পানিতে তলিয়ে থাকায় সেখানে অধিক হারে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও এ ধরনের চাষাবাদে রাসায়নিক সার ব্যবহার না হওয়ায় বিষমুক্ত সবজি উৎপাদিত হওয়ায় এ এলাকার মানুষের যেমন উৎপাদন বৃদ্বি হওয়ায় তারা লাভবান হচ্ছেন তেমনি স্বাস্থ্য সম্মত ভাবে নিরাপদ খাদ্য পোচ্ছেন ।

বর্তমানে ফরিদগঞ্জ উপজেলার সেকদী, কামতা, শোভান, বাঘপুর,ধানুয়া ও টুবগি এলাকায় কৃষকরা ১৫/২০ ফুট দৈঘ্যের প্রায় ৫শত বেড তৈরি করে ভাসমান বেডে সবজি চাষ করছেন। কৃষকরা এ সব বেডগুলোতে মিষ্টি কুমড়া, লাউ, কলমী শাক, লাল শাক, শসা, ডাটা শাক ও ধনিয়া পাতাসহ বিভিন্ন ফসল আবাদ করে রেখেছে। যা দেখে মনে হচ্ছে পুরো শীতের আগেই এ ফসল উৎপাদন করে কৃষক বহু গুন লাভের মূখ দেখবে।

উপজেলার বাঘপুর গ্রামের কৃষক আবদুল কাদের ও শোভান গ্রামের আলমগীর হোসেনসহ আরো কয়েক জন জানান, কয়েক বছর ধরে কচুরিপানার স্তুপ করে জলজ সারের মাধ্যমে বিশেষ ব্যবস্থায় সবজি চাষ করে আসছি। বর্তমানে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় ভাসমান বেডে সবজি চাষ করে অনেক ভাল ভাবে চলতে পারছি। আমরা আগের তুলনায় এখন বেশি ফসল উৎপাদন করতে পেরে বেশী লাভবান হচ্ছি। এবং পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ভালো আছি।

ভাসমান বেডে বিষমুক্ত ফসল উৎপাদনের ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশিক জামিল মাহমুদ জানান, কৃষকরা ভাসমান বেডে ফসল ফলানোর মাধ্যমে সবজি চাষে কৃষকদের জন্যে আমাদের পক্ষ থেকে সহায়তা এবং পরামর্শ অব্যাহত রয়েছে। কচুরিপানা স্তুপের উপর ভাসমান বেডে বিষমুক্ত সবজি চাষ হওয়ায় এ ফসলের চাহিদা সকলের কাছে অনেক বেশি লক্ষ্য করা গেছে। যার ফলে বিষমুক্ত ফসল ও সবজির বাজারে ও সকলস্থানে অনেক চাহিদা যেমন রয়েছে, তেমনি ওইসব সবজি চড়া দামে বিক্রি করা ও হচ্ছে।

আমাদের ফরিদগঞ্জ উপজেলার কৃষকরা ভাসমান বেডে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন এবং সবজি চাষের পূর্বে বীজতলা তৈরি করতে অন্যস্থানের চেয়ে খুব বেশী পারদর্শী এবং কম খরচে তারা করতে পারছে। এ জেলায় উৎপাদিত সবজি পাশের জেলাগুলোতে ও সবজির চাহিদা মেটাচ্ছে।