চাকরির আড়ালে ভয়াবহ প্রতারণার ফাঁদ ছিলো শিক্ষা কর্মকর্তার

মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন। চাকরি করেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরে সহকারী শিক্ষা অফিসার পদে। এই চাকরির আড়ালে ভয়াবহ এক প্রতারণার ফাঁদ পেতে বসেছেন তিনি। প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষক পদে চাকরি পাইয়ে দেয়ার কথা বলে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।

এমন অভিযোগের প্রমাণ প্রতিবেদকের হাতে এলে সত্যতা জানতে অনুসন্ধানে নামে ডেইলি বাংলাদেশ। হাতে আসে মোশারফের দেয়া কিছু ভুয়া চেক। তার অ্যাকাউন্টে জমা হওয়া টাকার রশিদ, মামলার কপিসহ বহু প্রমাণাদি। দেখা যায়, চাকরি দেয়ার নাম করে কারো কাছ থেকে তিন লাখ, কারো কাছ থেকে ৫ লাখ, কারো কাছ থেকে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০০০ সালের দিকে পিয়ন পদে অধিদফতরে যোগদান করেন মোশারফ। ছিলেন সিবিএ নেতা। কয়েকজন পরিচালকের আর্শিবাদে এখন হয়েছেন সহকারী শিক্ষা অফিসার। যা কল্পনার বাইরে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, চাকরির নামে প্রতারণা করে হাতিয়ে নেয়া টাকা দিয়ে নিজের পদবী ভাগিয়ে নিয়েছেন। সেইসঙ্গে সখ্যতা বেড়েছে পরিচালকদের সঙ্গে।

এসব অভিযোগের সত্যতা জানতে অভিযুক্ত মোশারফ হোসেনের মুখোমুখি হলে। প্রথমে টাকা নেয়ার কথা অস্বীকার করেন তিনি। পড়ে যখন বলা হয় টাকা লেনদেনের চেকসহ সব প্রমাণ আমার হাতে। তখন নিজের অপকর্মের কথা অকপটে স্বীকার করেন। যদিও এসব অভিযোগের বিষয়ে কিছুই জানে না অধিদফতর।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, প্রাথমিক স্কুলে চাকরি দেয়ার নামে ভয়াবহ এই প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিফতরের এই কর্মকর্তা। চাকরি দেয়ার কথা বলে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। পথে বসিয়েছে অনেক মানুষকে। এমন বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীর অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে।

ভুক্তভোগী চান মিয়া ডেইলি বাংলাদেশকে বলেন, প্রাইমারি স্কুল শিক্ষক পদে বোনের চাকরির জন্য অভিযুক্ত মোশারফকে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা দেন তিনি। টাকা দেয়ার পর থেকে চাকরি তো দূরের কথা। এখন টাকা ফেরত পেতে পিছনে পিছনে ঘুরছেন তিনি।

চান মিয়া আরো বলেন, এখন টাকা চাইতে গেলেই সে মেরে ফেলাসহ নানাভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। টাকার জন্য পরিবারও আমার প্রতি অনেকটা মনক্ষুণ্ন যে- কেন আমি না জেনে টাকা দিলাম। সব মিলিয়ে পরিবারেও বিপদে রয়েছেন বলে জানান।

জানা গেছে, মোশারফের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন এমন অনেক মানুষ। তাদের কেউ কেউ টাকার জন্য ঘুরছেন ৫ বছর যাবত। নাহিদ হাসান বলেন, নিজের চাকরির জন্য পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছেন মোশারফকে। পড়ে অন্যদের চাকরির জন্যও টাকা দিয়েছেন। এখন তিনি নিজেই ঘড় ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।

ভুক্তভোগী সেলিম বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা অধিফতরে চাকরি দেয়ার কথা বলে টাকা নিয়ে পড়ে চাকরি দিতে পারেনি সে। পড়ে আমি টাকা ফেরত চাইতে গেলে হুমকি-ধুমকি দেয়। এখনো আমি টাকা ফেরত পাইনি।

ভুক্তভোগী মোহাম্মদ আলী বলেন, চাকরি দেয়ার নাম করে ৫ লাখ ৭০ হাজার টাকা নেন মোশারফ। কিন্তু চাকরি আর হয়নি তার। টাকা চাইতে গেলেই নানা কথা। তাকে এই অফিসের সবাই চিটার হিসেবেই জানেন বলেও জানান এই ভুক্তভোগী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতারণার মাধ্যমে মোশারফ হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। কুমিল্লায় নিজ গ্রামে তৈরি করেছেন বিলাসবহুল বাগানবাড়ি, মিরপুরের জনতা হাউজিং এর হেনা গার্ডেনে রয়েছে একটি নিজস্ব ফ্ল্যাট।

এছাড়াও রয়েছে একটি প্রাইভেট কার, একটি দামি মোটরসাইকেল ও মিরপুরের লাভ রোডে লাভ বার্ড নামের একটি রেস্টুরেন্ট। লাভ বার্ড রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার বলেন, এটির মালিক মোশারফ হোসেন। তিনি বেতন ভিক্তিক চাকরি করেন এর বেশি কিছু জানেন না তিনি।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের সদ্য বিদায়ী মহাপরিচালক মো. ফসিউল্লাহ বলেন, অধিদফতর ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে এই ধরনের প্রতারণা বন্ধ হবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তথ্য-ডেইলি বাংলাদেশ

আজকের বাজার/আখনূর রহমান