গাড়ীর ব্যবসায় এসিআই

চালকের আরাম দুর্ঘটনা কমাবে

আমরা আমাদের মিশনে বলেছি, বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্য, দক্ষতা বাড়াতে দায়িত্বতার সাথে টেকনোলজির প্রয়োগ ঘটাতে চাই। যেটা ব্যবহার করে মানুষ লাভবান হবে। আমরা যদি গ্রামের সাথে শহরের সংযোগ ঘটাতে চাই তাহলে টান্সপোর্টের কোনো বিকল্প নেই। আমরা (এসিআই) শুরু করেছিলাম পাওয়ার টিলার দিয়ে। সেখান থেকে আমরা ট্রাক্টর করলাম। পাওয়ার টিলারের থেকে ট্রাক্টারের গতি এটুক বেশী। পরে এসে আমরা মটর সাইকেল করলাম। সেটা আরও গতি বাড়িয়ে দিল। পরে দেখলাম একজনের গতি বাড়িয়ে লাভ নাই, পণ্যের গতি বাড়াতে হবে।

বাণিজ্যিক গাড়িতে কেন এসিআই: আমাদের দেশে সব পণ্য গ্রামে উৎপাদিত হয়। এসব পণ্যের গতি বাড়াতে হলে আমাদের বাণিজ্যিক যানবাহন লাগবে । এজন্য আমরা বাংলাদেশে কমার্শিয়াল ভেইকেল নিয়ে এসেছি। আমাদের উদ্দেশ্য হলো, বাণিজ্যিক যানবাহন ব্যবহার করে গ্রামের মানুষ যেন দক্ষতার সাথে তাদের পণ্য শহরের মোকামে এনে বিক্রি করতে পারে। আর তারা যেন দক্ষতার সাথে এসব পণ্য বিক্রি করে লাভ করতে পারে। তখন কিন্তু সামগ্রিক অর্থনীতিতে একটা বাজনা বাজবে। এটার জন্যই আমরা আজকে এই ভেইকেলটা নিয়ে এসেছি। আমরা সবসময়, সবচেয়ে ভালো টেকনোলজিটা আনার চেষ্টা করি। সেটা ভারত, চায়না, আমেরিকা বা পৃথিবীর যেখানকারই হোক না কেন, কোথায় ইফিসিয়েন্ট টেকনোলজি আছে সেটাই মূল বিষয়।

গাড়ির বিবেচ্য দিক: একটা গাড়ি যদিও দেখতে সাধারণত একটা বক্সের মত। পিছনে কিছু লোহালক্কড় দিয়ে একটা বডি থাকে, সামনে একটা ইঞ্জিন থাকে, তার উপরে একটা কাভার থাকে। কিন্তু এটাই শেষ না, এটাকে ফুয়েল ইফিসিয়েন্ট হতে হবে যেন জ্বালানী সাশ্রয়ী হয়। তেল খরচ কম হলে গাড়ি চালানো খরচ কমে যায়। ফুয়েল থেকে যে ধোয়া বা উচ্ছিষ্ট নির্গত হবে সেটা যেন পরিবেশ বান্ধব থাকে। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তা নাহলে তো আপনি গাড়ি চালিয়ে মানুষের ক্ষতি করলেন। আবার গাড়িটি টিকতে হবে বেশিদিন। তাহলে লাভ হবে এই যে, অনেকদিন গাড়িটি ব্যবহার করতে পারবেন এবং আপনার গাড়ির ডেপ্রিসিয়েশন কস্ট অনেক কমে যাবে।

আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, ড্রাইভারের কমফোর্ট থাকতে হবে। যে লোকটা বারো থেকে চৌদ্দ ঘন্টা গাড়িটা চালাবে, তাকে তো আরামদায়ক অবস্থায় থাকতে হবে, কেননা এটাই তো তার ওয়ার্কিং প্লেস বা কর্মস্থল। গাড়িটিতে সেফটি ডিভাইস ও এলাইনমেন্টগুলো থাকতে হবে, যেন অন্য কেউ তার ক্ষতি করতে না পারে এবং নিজেও এক্সসিডেন্ট না করে। এইসব উপাদান কিন্তু একটা গাড়িতে থাকা উচিত। এই বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে।

কেন ফোটন: আমরা খুঁজে দেখলাম, সবচেয়ে ভালো কমার্শিয়াল ভেইকেল কারা উৎপাদন করছে এবং বিক্রি করছে। আমরা খুঁজে পেলাম, বিশ্বে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্যিক গাড়ি উৎপাদন করে চায়নার ফোটন ব্র্যান্ড। তারা বছরে প্রায় ৮০ লক্ষ বাণিজ্যিক গাড়ি উৎপাদন করে এবং তা বিক্রি করে। যদিও বেশির ভাগই চায়নাতে, তবুওতো এর পরিমাণ ৮০ লক্ষ, যা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি। তাহলে কিভাবে পারছে তারা? নিশ্চয়ই একটা চাহিদা তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে তারা। কেন এই চাহিদা, আমি যে কারণগুলো বলেছিলাম, পরিবেশ বান্ধব হতে হবে, ওদের গাড়িতে তা আছে। লংজিবিটি থাকতে হবে, সেটা আছে। সেফটি ডিভাইজ হিসেবে একটা গাড়ির পিছন সামনে সাইডে দেখার জন্য তিন চারটে মিরর গ্লাস লাগানো আছে। ড্রাইভারের কমফোর্ট থাকতে হবে। কোনো কোনো গাড়িতে চালকের কেবিন আছে, কারণ অনেক দীর্ঘ রাস্তা হয়তো গেলো. হোটেল পেলো না, আবার হোটেলের খরচ আছে। এই জন্য এয়ার কন্ডিশন কেবিন দেয়া হয়েছে, যাতে চালক সেখানেই ঘুমাতে পারেন। এরপর আমরা দেখেছি যে. প্রতিযোগিতার এই বাজারে গাড়িটা দেখতে সুন্দর হতে হবে এবং ভালো সার্ভিস দিতে হবে। আপনি যদি বাজারে গিয়ে একটা ট্রাক ভাড়া করতে চান, স্বভাবত কারণেই দেখতে সুন্দর ভালো ট্রাকটাই আপনি নিবেন। সে জন্য আমরা কি করেছি, বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বাণিজ্যিক গাড়ি এনেছি, যাদের গাড়িতে যেসমস্ত কাঙ্খিত সুযোগ সুবিধা থাকা উচিৎ, সেগুলো সবই আছে। এসব কারণেই আমরা ফোটনের গাড়িটা পছন্দ করেছি।

বিশেষ বৈশিষ্ট: এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, আমদের দেশের সিংহভাগ গাড়ির বাজার যেখানে ভারতের দখলে, সেখানে কেন চায়না গাড়ি? আমাদের দেশে ভারতের গাড়ি অনেক বিক্রি হয় একথা ঠিক। আমরা কি করেছি, সুপিরিয়র, সেফটি এলিমেন্ট, পরিবেশ বান্ধব, বেশি বহনক্ষমতা, দেখতে ভালো এইসব সুবিধা সম্বলিত এমন একটা গাড়ি পছন্দ করেছি এবং গাড়িটির পরিবেশক খুবই নির্ভরযোগ্য, যারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি গাড়ি বিক্রি করতে পারে। তাহলে নিশ্চয় আমরা ধরে নিতে পারি গাড়িটি ভালো। এসবের বাইরে যে বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, এই গাড়িতে যে ইঞ্জিনটা লাগানো হয়েছে সেটা কিন্তু ইতালিয় ব্রান্ডের ইঞ্জিন। আর আমরা সবাই জানি, ইতালির ইঞ্জিন টেকে বেশি দিন। ফলে গাড়িটার লংজিবিটি হবে অনেক বেশি।

গাড়ির ধরণ: এখন আমরা দেড় টন থেকে শুরু করে আট নয় টন পর্যন্ত বহন করার মত স্মল ট্রাক বা পিক-আপ নিয়ে শুরু করেছি। আলটিমেটলি আমরা সিটি বাস, মাইক্রোবাস, এ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি একের পর এক নামাবো। ফোটনের কমার্শিয়াল ভেইকেলের ফুলরেঞ্জ আছে, সেগুলো পুরাটাই আমরা আনবো। ভবিষ্যতে আমরা যখন ফোটনের ভালো সফলতা দেখতে পাব, তখন অন্যান্য ভালো ব্রান্ডের স্পোর্টস ইউটিলিটি ভেইকেল বা এসইউভি এবং অন্যান্য ছোট ছোট গাড়িগুলো আনবো।

দাম: যেহেতু আমাদের এই গাড়িগুলোতে সেফটি ডিভাইস, পরিবেশ বান্ধব, লংজিবিটি, ইতালিয় কুইমার ইঞ্জিন সবই দেওয়া হচ্ছে, তাই স্বভাবত কারণেই দামটা একটু বেশি হবে। আবার আমাদের এখন এ্যাসেম্বলি প্লান্ট নাই, সেহেতু আমাদের পুরাপুরিভাবে ইম্পোর্ট ডিউটিতে আনতে হবে গাড়িটা। তাই মার্জিনলি প্রাইজ একটু বেশি হবে। আমি মনে করি যে, একটা গাড়ি তো দশ বছরের জন্য। সেক্ষেত্রে এতে যে সুযোগ সুবিধাগুলো রয়েছে, তা যদি দশ বছরের দিন দিয়ে ভাগ করে প্রতিদিনের খরচ বের করা হয়, তখন কিন্তু অন্য গাড়ির তুলনায় অনেক কম খরচ হবে।

কুইক সার্ভিস: আপনারা জানেন যে, আমরা বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি ট্রাক্টার বিক্রি করি। আমরা প্রায় তিন হাজার থেকে সাড়ে তিন হাজার ট্রাক্টার বিক্রি করি। দশ হাজারের বেশি আমরা পাওয়ার টিলার বিক্রি করি। একইসঙ্গে আমরা এই সমস্ত গাড়ি ও পাওয়ার টিলারগুলোকে সার্ভিস দেই। আমাদের সার্ভিসটা খুবই এফিসিয়েন্ট। আমরা কমিন্টমেন্ট করেছি যে, দেশের যে কোন পয়েন্টে, যে কোন সময়ে, দিন বা রাতে ট্রাক্টার নষ্ট হলে ছয় ঘন্টার মধ্যে সার্ভিস দিব। আমরা ঠিক একইভাবে কমার্শিয়াল ভেইকেলের ক্ষেত্রেও এটা কমিন্টমেন্ট করতে যাচ্ছি। যে কমিটমেন্টা কাস্টমারদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কাস্টমারের একটা গাড়ি একদিনও যেন বসে না থাকে, সেজন্য আমরা তাদের ফোন পাওয়ার সাথে সাথেই রেসপন্স করবো। এলক্ষ্যে আমাদের প্রায় একশ নব্বই জন ইঞ্জিনিয়ার রয়েছে সারাদেশে এবং তাদের কাছে মটর সাইকেল আছে যেন তারা তাৎক্ষনিক সার্ভিস দিতে পারে। এটাই হবে কাস্টমারদের অতিরিক্ত বেনিফিট। এই কাজটা আমরা করব। আমরা আমাদের গাড়ির যে সমস্ত টেকনিক্যাল সুযোগ-সুবিধার কথা বলেছি এবং জ্বালানী খরচ মিলিয়ে, আমার মনে হয় অন্য যে কোন ট্রাকের তুলনায় আমাদের গাড়ির প্রতিদিনের খরচ কম হবে।

কিস্তি সুবিধা: আমারা কিস্তির সুবিধাটাও রেখেছি। আমাদের কাছে জমা দিয়ে কিস্তিতে গাড়ির দাম শোধ করতে পারবে। আমাদের দেশে অনেক শিক্ষিত বেকার রয়েছে। গ্রামে-গঞ্জে অনেকের অনেক প্রত্যাশা রয়েছে, যারা ভালো কিছু করতে চায়। আমরা এই সমস্ত শিক্ষিত বেকার, যাদের অল্প পুঁজি রয়েছে, যারা ভালো কিছু করতে চায়, তাদের কাজে লাগতে চাই। আর আমোদের দেশর অনেক কর্মী রয়েছে, যারা দেশের বাহিরে দুই তিন বছর কাজ করে, অল্প পুঁজি নিয়ে দেশে ফিরে একটা দোকান করে। হয়তো দোকানটা কিছু দিন চলে, তারপর বন্ধ হয়ে যায়। আমরা চাই না যে, তাদের কর্ম ক্ষমতা এভাবে ধংস হয়ে যাক। আমরা চাই, তাদেরকে একটা বিজনেস মডেল দিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে, তাদের হাতে একটা ট্রাক তুলে দিব। তাহলে সে সুন্দরভাবে ট্রাকটা চালাবে, কন্ট্রোল করবে, দেখাশুনো করবে এবং আল্টিমেটলি সেখান থেকে যে ইনকাম হবে, তা দিয়ে সে কিস্তিতে আমাদের টাকা শোধ করবে এবং তার সংসার চালাবে। সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখবে। এই কাজটা অন্যরা করে না, কিন্তু আমরা করবো। মনে করেন, একটা দেড় টনের ট্রাকের দাম যদি আট নয় লক্ষ টাকা হয়। এর উপর যদি ৩০ শতাংশ ডিপোজিট করতে হয়, তাহলে যে গাড়িটা কিনবে তাকে ২ থেকে ৩ লক্ষ টাকা দিতে হবে। সাধারনত যারা বিদেশ থেকে এসেছে বা গ্রামে ঘুরে বেড়াচ্ছে, এই টাকাটা তারা জোগাড় করতে পারে হয় বাবা মায়ের কাছ থেকে অথবা আত্বীয় স্বজনের কাছ থেকে। ব্যবস্থা করাটা খুব একটা কষ্টের হবে না।

উৎপাদন পরিকল্পণা: আমরা মনে করি যে, আমরা কমার্শিয়াল ভেইকেল নিয়ে যে জার্নি শুরু করেছি এটা সবচেয়ে বেশি বেনিফিট দিবে আমাদের সোসাইটি ও দেশের অর্থনীতিকে। আশা করছি যে, আগামী এক বছরের মধ্যে এইসব বাণিজ্যিক গাড়ি স্থানীয়ভাবে উৎপাদন শুরু করবো। প্রথমে শুরু করবো সিকেডি। আর তিন চার বছরের মধ্যে যখন বিক্রি বেড়ে যাবে, তখন আমরা পুরাপুরি এই গাড়িগুলো উৎপাদন করবো। ফোটনের মূল যে কোম্পানি, যারা গাড়িগুলো সরবরাহ করে, তারা সেখানে অনেক বড় পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি। তারা কমিটেড আমাদের সাথে থাকবে এবং সবরকমের টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেবে।

ড. এফ এইচ আনসারী
ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী
এসিআই মটরস লিমিটেড