হাওরে আগাম বন্যায় ফসলহানির পর দুই দফা বন্যায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ফসল নষ্ট হওয়া, আমদানি পর্যায়ের শুল্কের হার বেশি হওয়া এবং কৃত্রিম সংকট তৈরির মাধ্যমে দেশের চালের বাজারে শুরু হয় একপ্রকার অনিয়ন্ত্রিত অস্থিরতা।
সরকারি হিসাব পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, ২০০৭-০৮ সালের পর থেকে ক্রমান্বয়ে দেশে খাদ্য শস্য উদ্বৃত্তের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এ থেকে দেখা যায় ২০১৫-১৬ সালে নীট খাদ্য শস্য প্রয়োজনীয়তার থেকে উৎপাদনের পরিমাণ প্রায় ২০ লাখ মেট্রিকটন উদ্বৃত্ত ছিল। বর্তমান সময়েও চাল উদ্বৃত্ত থাকায় চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। তাহলে চালের কৃত্রিম এই সংকট কেন? এ থেকে উত্তরণের উপায় কি?
এসব বিষয়ে ৪ অক্টোবর বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক আলোচনা সভায় এসব সমস্যা থেকে উত্তরণের উপায়ে কি করণীয় সে বিষয়ে কিছু দিকনির্দেশনা উঠে এসেছ। ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড পোভার্টি স্টাডিজ বিভাগের সহযোগীতায় এটি আয়োজন করে এগ্রেরিয়ান রিসার্চ ফাউন্ডেশন।
বিশ্ববিদ্যালয়টির কৃষি ব্যবসা অনুষদের সেমিনার কক্ষে ‘চালের কৃত্রিম সংকট ও উত্তরণের উপায়’ বিষয়ক আলোচনার মূল প্রবন্ধে এসব বিশ্লেষণধর্মী দিক নির্দেশনা তুলে ধরেন ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড পোভার্টি স্ট্যাডিজ বিভাগের প্রফেসর ও বাংলাদেশ কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির যুগ্ম মহাসচিব ড. মোহাম্মদ মিজানুল হক কাজল।
মিজানুল হক বলেন, জনগণের খাদ্য চাহিদার ক্ষেত্রে চালের পরিমাণ অনুমেয় হলেও চালের যোগানের হেরফেরের মাধ্যমে বাজারে চালের মূল্য উঠানামা করে থাকে। ফলে যোগানের পরিমাণই দাম উঠানামার মূল বিষয়।
তিনি বলেন, অন্যান্য বছরে চালের দাম উঠানামা করলেও জনগণের ক্রয় ক্ষমতা এবং মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। ফলে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়নি। কিন্তু এ বছরে তার উল্টো হয়েছে। তাই বাজারে চালের যোগানের নিয়ন্ত্রকের কারণসমূহ চিহ্নিত করতে পারলে চালের দাম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।
এসবের মূল কারণ হিসাবে মিজানুল হক বলেন, অসাধু ব্যবসায়ীদের দ্বারা চালের যোগান নিয়ন্ত্রণ, দুর্বল বাজার তদারকি ব্যবস্থা, সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সঠিক তথ্যের অভাব, চাল আমদানীতে বেসরকারি পর্যায়ে ব্যবসায়ীদের উপর অধিক নির্ভরশীলতা, অটোরাইছ মিল মালিকদের উৎপাদনকালে ধান কেনার জন্য অধিক মাত্রায় ঋণ প্রদান, ক্রমাগতভাবে সরকারি পর্যায়ে খাদ্য মজুদর পরিমাণ কমে যাওয়া, খোলা বাজারে চাল বিক্রয়ের অপর্যাপ্ততা, ব্যবসায়ীদের প্রকৃত মজুদ তথ্যের গরমিল, আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতার কারণে সিদ্ধান্ত গ্রহণে দূরদর্শীতার অভাব, আন্তঃরাষ্ট্র চুক্তি বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতা এবং চাহিদা মোতাবেক চালের অপ্রাপ্যতা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের ফলে ধান উৎপাদন ব্যহত হওয়া।
চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে করণীয় ও উত্তরণের উপায় সম্পর্কে তিনি বলেন, খাদ্য মজুদ আইন প্রয়োগ ও শাস্তিবিধান নিশ্চিত করা, কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ও চাল কেনার ব্যবস্থা গ্রহণ, মিল মালিকদের মজুদের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ এবং নিয়মিতভাবে মজুদের হিসাব প্রদানের নিশ্চয়তা বিধান, চাল ব্যবসায়ীদের ঋণ প্রদানে সঠিক নিয়ম অনুসরণ করতে হবে।
এছাড়া চালের মূল্য নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘমেয়াদী এবং স্বল্পমেয়াদী ব্যবস্থা ও বিশেষ নীতিমালা গ্রহণ করতে হবে। বাজার তদারকির জন্য উপজেলা পর্যায়ে বাজার মনিটরিং সেল স্থাপন করে কৃষি বিপণন কর্মকর্তা হিসাবে কৃষির সাব-ক্যাডার বা কৃষি বিপণন ক্যাডার তৈরির মাধ্যমে কৃষি অর্থনীতির গ্রাজুয়েটদের নিয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলে পরামর্শ দেন ড. মোহাম্মদ মিজানুল হক কাজল।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ, এগ্রেরিয়ান রিসার্চ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আব্দুল হামিদ, প্রফেসর ড. হাসান জামান, প্রফেসর ড. রোকেয়া বেগমসহ আরো অনেকে।
আজকের বাজার:এলকে/এলকে ৪ অক্টোবর ২০১৭