চ্যাম্পিয়ন্স লিগ: এসি মিলানকে জিততে দিলোনা লিভারপুল

পিছিয়ে পড়েও শেষ পর্যন্ত জর্ডান হেন্ডারসনের দুর্দান্ত স্ট্রাইকে এসি মিলানকে ৩-২ ব্যবধানে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের অভিযান শুরু করেছে লিভারপুল।

ইস্তাম্বুলে ২০০৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ইতালিয়ান জায়ান্টদের বিপক্ষে ৩-০ গোলে পিছিয়ে থেকেও রেডসরা পেনাল্টিতে জয়ী হয়ে শিরোপা জয় করেছিল। সেবারের ফাইনালটি এখনো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে অন্যতম স্মরণীয় ম্যাচ হিসেবে বিবেচিত হয়। ইউরোপীয়ান ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে দীর্ঘ সাত বছর পর ফিরে আসার ম্যাচটা স্টিফনো পিউলির দলকে স্মরণীয় করে রাখতে দিলনা লিভারপুল। সাত বারের চ্যাম্পিয়ন দলটিকে এই সাত বছর ইউরোপা লিগ খেলেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। এ্যানফিল্ডে বিরতির আগে দুই মিনিটের ব্যবধানে পরপর দুই গোল করে স্বাগতিক শিবিরে দু:শ্চিন্তা ছাপ ফেলে দিয়েছিল মিলান।

এর আগে অবশ্য ফিকায়ো টোমিরোর ৯ মিনিটের আত্মঘাতি গোলে লিভারপুল এগিয়ে যায়। ১৪ মিনিটে মোহাম্মদ সালাহ’র পেনাল্টি রুখে দিয়ে মিলান গোলরক্ষক মাইক মেইগনান ব্যবধান বাড়াতে দেননি। ৪২ ও ৪৪ মিনিটে আন্তে রেবিচ ও ব্রাহিম দিয়াজের গোলে পুরো ম্যাচের চিত্রই পাল্টে দেয়া সফরকারীরা।

ম্যাচ শেষের ২১ মিনিট আগে হেন্ডারসনের জোড়ালো শটে লিভারপুলের জয় নিশ্চিত হবার আগে ৪৮ মিনিটে মিশরীয় তারকা সালাহ সমতা ফিরিয়েছিলেন। ম্যাচ শেষে লিভারপুল বস জার্গেন ক্লপ বলেছেন, ‘এটা সত্যিকার অর্থেই দারুন একটি ম্যাচ ছিল। উত্তেজনাপূর্ণ ও একই সাথে দারুন উপভোগ্য।’

গ্রুপ-বি‘র আরেক ম্যাচে এ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ ও পোর্তো গোলশুন্য ড্র করায় এক ম্যাচ পর শীর্ষস্থানে অবস্থান করছে লিভারপুল। আর ক্লপ জানিয়েছেন এই ধরনের কঠিন ম্যাচে জয়ী হয়ে তিন পয়েন্ট নিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। রেডস বস বলেন, ‘চার নম্বর পট থেকে মিলান এই গ্রুপে এসেছে। এটাই এই গ্রুপকে অন্য গ্রুপগুলোর তুলনায় কঠিন করে তুলেছে। আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হলে গ্রুপের প্রতিটি ম্যাচ থেকেই পয়েন্ট নিশ্চিত করতে হবে।’

ম্যাচের শুরুতে রাইট-ব্যাক ট্রেন্ট আলেক্সান্দার-আর্নল্ডের একটি শট আটকাতে গিয়ে মিলান ডিফেন্ডার টোমোরি তা নিজ জালে প্রবেশ করালে আত্মঘাতি গোলের লজ্জায় পড়ে সফরকারীরা। ১৪ মিনিটে পেনাল্টি থেকে দীর্ঘদিনের গোল খরা কাটানোর সুযোগ পেয়েছিলেন সালাহ। এন্ডি রবার্টসনের শট গোল এরিয়ার মধ্যে আলজেরিয়ান মিডফিল্ডার ইসমায়েল বেনাকারের হাতে লাগলে পেনাল্টি উপহার পায় লিভারপুল। ২০১৭ সাল থেকে লিভারপুলের হয়ে টানা ১৭টি পেনাল্টিতে গোল করা সালাহ অবশ্য এবার আর পেরে উঠেননি। তার শক্তিশালী প্রচেষ্টাটি দারুন দক্ষতায় রুখে দেন মেইগনান।

আক্রমনভাগে মিলান কাল ইনজুরি আক্রান্ত জ্বাটান ইব্রাহিমোভিচের অনুপুস্থিতি দারুনভাবে অনুভব করেছে। তারপরেও বিরতির ঠিক আগে হঠাৎ করেই ম্যাচের চেহারা পাল্টে দেয়া মিলান। রাফায়েল লিয়ারো থ্রু বল থেকে সমতা ফেরান রেবিচ। ক্রোয়েশিয়ান এই তারকা দুই মিনিট পর এ্যালেক্সিস সিলিমেকার্সকে বল বাড়িয়ে দিন। কিন্তু সিলিমেকার্সের শটটি লাইনের উপর থেকে ক্লিয়ার করেন রর্বাটসন। যদিও সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে বল জালে জড়ান দিয়াজ।

১৬ বছর আগে ইস্তাম্বুলে লিভারপুলের তিন গোল এসেছিল মাত্র ৬ মিনিটে। সেই ম্যাচের মধুর প্রতিশোধ কাল প্রায় নিয়েই ফেলেছিল মিলান। সাইমন কায়ারের গোলটি অফসাইডের কারনে বাতিল না হলে ম্যাচের ভাগ্য হয়তোবা মিলানের দিকে যেতেও পারতো। ৪৮ মিনিটে অবশ্য ডিভোক অরিহির লফটেড পাস থেকে সালাহ পোস্টের খুব কাছে থেকে গোল করে স্বাগতিক শিবিরে স্বস্তি ফিরিয়ে আনেন। ২০১৯ সালের মার্চের পর থেকে ইউরোপীয়ান কোন ম্যাচ উপভোগ করতে এ্যানফিল্ডে আসা সমর্থকদের শেষ পর্যন্ত আর হতাশ হতে হয়নি। জয় নিয়েই তারা বাড়ি ফিরেছে। তথ‌্য-বাসস

আজকের বাজার/আখনূর রহমান