চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যে

নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়বে/কমবে এটা স্বাভাবিক। তবে বাংলাদেশে প্রায় গুঞ্জন বা গুজবের উপরই যেন দাম বৃদ্ধি বা কমা নির্ভর করে। বর্ধিত এ দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকে না। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব পণ্যের দাম আবারও বাড়তে শুরু করেছে। ধানের বাম্পার ফলন হলেও মাত্র দুই সপ্তাহে চালের দাম প্রতি কেজিতে ১ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর সপ্তাহের ব্যবধানে সবজির দাম প্রকারভেদে বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা।

এছাড়া অনেকটা চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে আলু, পটল, বেগুন, বরবটি, ঢেঁড়স, ধুন্দল, ঝিঙা, করলা, পেঁপেসহ প্রায় সব ধরনের সবজি। মাছের দাম কেজিতে বেড়েছ ১০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। এর সঙ্গে ডিমের দাম প্রতি ডজনে বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। মুরগি আকার ও প্রকারভেদে কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ঘুরে নিত্যপণ্যের দামে এ চিত্রের দেখা মিলেছে।

চালের মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে এবার ব্যবসায়ীরা বলছেন, ধানের দাম বেড়েছে, তাই চালের দামও বাড়ছে। আবার অনেকে বলছেন, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় রেড জোন ঘোষণা করে সেখানে লকডাউন দেওয়া হচ্ছে- এই ঘোষণায়ও বেড়েছে চালের দাম। এ ক্ষেত্রে আড়তদাররা পাইকারি ব্যবসায়ীদের এবং পাইকারি ব্যবসায়ীরা খুচরা ব্যবসায়ীদের ওপর দায় চাপাচ্ছেন।

মহামারী করোনার মাঝেও সফলতার সঙ্গে ধান কেটে ঘরে তুলেছেন কৃষক। ফলে চাল সংকটের সুযোগ নেই। তারপরও দাম না কমে উল্টো প্রকারভেদে প্রতি কেজি চালের দাম ১ থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কেউ চাল মজুদ করছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা শুরু করেছে খাদ্য অধিদফতর। সংস্থাটি দেশের সব জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে খাদ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক সারোয়ার মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এই সময় চালের দাম এতটা বাড়ার কথা নয়। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কেউ মজুদ করছে কিনা, তা অনুসন্ধান শুরু করেছি। খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’

রাজধানীর বাজারগুলোয় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতিকেজি মোটা চালের দাম ৪০ থেকে ৪২ টাকা, আর চিকন চাল নাজিরশাইল ও মিনিকেটের কেজি ৬০ টাকা। কিছু দিন আগেও মোটা চালের দাম ছিল ৩৮ টাকা। ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া মাঝারি মানের চালের দাম বেড়ে হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা। চিকন চালের দাম বেড়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬২ টাকা, যা আগে ছিল ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা। বর্তমানে মোটা ধান প্রতি মণ ৮৫০ থেকে ৯৫০, মাঝারি মানের ধান ১ হাজার ১০০ থেকে ১ হাজার ২০০ ও সরু চাল ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত সোমবার পর্যন্ত সরকারি গুদামগুলোয় ৮ লাখ ৮১ হাজার টন চাল, ২ লাখ ৯৮ হাজার টন গম মজুদ আছে। বর্তমানে মোটা চাল ৪০ থেকে ৪৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর সরু চাল ৫৫ থেকে ৬০, মাঝারি চাল ৪৫ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সরু চালের দাম গত এক সপ্তাহে আড়াই শতাংশ বেড়েছে।

রাজধানীতে ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৯০ থেকে ৯৫ টাকার মধ্যে। মান ও বাজার ভেদে চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে সবজি। বেগুনের কেজি ৭০ থেকে ১০০, গাজর ৮০ থেকে ১২০, পাকা টমেটো ও বরবটি ৬০ থেকে ৮০, চিচিঙ্গা, পেঁপে, পটোল, ঝিঙা ৫০ থেকে ৬০, করলা ৫০ থেকে ৭০, কচুর লতি ৪০ থেকে ৬০, কচুর মুখি, কাঁকরোল ৬০ থেকে ৭০, ঢেঁড়স ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। আলুর কেজি ২৮ থেকে ৩২ টাকা। আকার ভেদে প্রতিপিস লাউ ৪০-৫০, কুমড়া ৩০-৪০, বাঁধাকপি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিহালি ছোট লেবু ১০-১৫, বড় সাইজের লেবু ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিআটি কচুশাক ৭-১০, লালশাক ১০, মুলাশাক ১০, পালংশাক ১৫, লাউ ও কুমড়াশাক ৩০, পুঁইশাক ২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। অপরিবর্তিত আছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। কয়েকদিন ধরেই সবজির দাম বাড়তি। মৌসুম শেষ। সহসা দাম কমবে না বলে জানান শান্তিনগর বাজারের বিক্রেতা আহমেদ মিলন।

দেশি পিয়াজের কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৫৫ টাকা। দেশি পিয়াজের পাশাপাশি দাম কমেছে আমদানি করা পিয়াজের। আমদানি করা পিয়াজের কেজি ৩০-৩৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ৩০ থেকে ৪৫ টাকা ছিল। সবজি সঙ্গে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে মুরগি, গরু ও খাসির মাংস। বয়লার মুরগির কেজি ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। লাল লেয়ার মুরগি ২২০ থেকে ২৩০ টাকা। পাকিস্তানি কক মুরগি ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা। দেশি মুরগি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। গরুর মাংস ৫৮০ থেকে ৬০০ টাকা আর খাসির মাংস ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা।

মাছের বাজারে দাম বেড়ে বর্তমানে প্রতি কেজি কাঁচকি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪০০, মলা ৩৮০ থেকে ৪০০, ছোট পুঁটি (তাজা) ৫০০ থেকে ৫৫০, ছোট পুঁটি ২৮০ থেকে ৩৫০, টেংরা মাছ (তাজা) ৬৫০ থেকে ৭৫০, দেশি টেংরা ৪৫০ থেকে ৫৫০। কেজিতে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে শিং (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৫৫০, পাবদা ৩২০ থেকে ৫০০, চিংড়ি (গলদা) ৪০০ থেকে ৬৫০, বাগদা ৫৫০ থেকে ৯৫০, হরিণা ৩৮০ থেকে ৫০০, দেশি চিংড়ি ৩২০ থেকে ৫০০, রুই (আকারভেদে) ২৫০ থেকে ৩৫০, মৃগেল ২০০ থেকে ৩০০, পাঙ্গাশ ১৪০ থেকে ২০০, তেলাপিয়া ১৪০ থেকে ১৮০, কই ১৮০ থেকে ২০০, কাতল ২২০ থেকে ৩২০ টাকা। বর্তমানে এসব বাজারে ১ কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০, ৭৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ৭৫০ থেকে ৮০০, ছোট ইলিশ আকারভেদে ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি।