রাজধানীর সরকারী ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি আখতারুজ্জামান সৈকত। তার বিরুদ্ধে শিবির সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে কমিটির সাধারণ সম্পাদকসহ ১২ নেতাকর্মী একযোগে পদত্যাগ করেছেন। তারা পদত্যাগপত্র কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ ও ঢাকা চিকিৎসা বিজ্ঞাণ জেলা শাখা ছাত্রলীগ দপ্তরে জমা দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন নেতাকর্মীরা। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনও ১২ নেতাকর্মীর পদত্যাগের বিষিয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গত ২৩ অক্টোবর আখতারুজ্জামান সৈকতকে সভাপতি ও দুলালুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে সরকারী ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক কলেজ ছাত্রলীগের ১৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করে ঢাকা চিকিৎসা বিজ্ঞাণ জেলা শাখা ছাত্রলীগ। পদত্যাগ করা ছাত্রলীগের নেতারা অভিযোগ করে বলেন, বর্তমানে সৈকত কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসক। তিনি ২০১৪ সালে ছাত্র থাকাকালীন সময়ে শিবিরের লিফলেট বিতরনকালে হাতে নাতে ধরা পড়েন। এরপর তাকে ছাত্রলীগ কর্মী থেকে তৎকালীন কলেজের ছাত্রলীগ সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক তালুকদার বহিস্কার করেন। এরপর থেকে মূলত তিনি ছাত্র শিবিরের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন।
পরবর্তীতে তিনি ভোল পাল্টে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতাদের সংস্পর্শে আসেন। গত ২৩ অক্টোবর কাউকে কিছু না জানিয়ে ঢাকা চিকিৎসা বিজ্ঞাণ জেলা ছাত্রলীগ শাখার সভাপতি শরীফ ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক পার্থ সারথী দাশ স্বাক্ষরিত এ কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই কমিটিতে আখতারুজ্জামান সৈকতকে সভাপতি ও দুলালুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করার পাশাপাশি অন্যান্য পদে আরও ১৪ জনকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
এদিকে কমিটি ঘোষণা করার পরপরই ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে শিবির সম্পৃক্ততার অভিযোগে যাকে বরখাস্ত করা হয়েছিল তাকে সভাপতি করার ফলে কমিটির সাধারণ সম্পাদকসহ ১২জন একযোগে পদত্যাগ করেন। কলেজে ২৪ অক্টোবর থেকে কমিটি বাতিলের দাবিতে নিয়মিত মিছিল মিটিং করে আসছেন তারা। সৈকতকে বহিস্কার করা তৎকালীন ছাত্রলীগ কমিটির সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক তালুকদার বলেন, তৎকালীন সময়ে সৈকত ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী ছিলেন। শিবিরের লিফলেট বিতরণের সময় ছাত্রলীগের অন্যান্য নেতাকর্মীরা তাকে হাতেনাতে ধরলে তাকে বহিস্কার করা হয়। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যার বিরুদ্ধে শিবির সম্পৃক্তার অভিযোগ উঠে তাকে কি করে একটি ইউনিটের সভাপতি করা হয়। তিনি অবিলম্বের তাকে বহিস্কারেরও দাবি জানান।
পদত্যাগ করা ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি এজাজ আহমেদ বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ কিভাবে শিবির কর্মীকে সভাপতি করে, এটাই আমরা প্রশ্ন। আর কমিটি যে হয়েছে বা করা হচ্ছে এ বিষয়ে কারো সঙ্গে কোন আলাপ আলাচনা না করে কমিটি করা হয়েছে। আমি মনে করি এ কমিটিতে আমার থাকা উচিৎ নয় এ কারণে আমি পদত্যাগ করেছি। তিনি অভিযোগ করেন, মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে এ কমিটি দেয়া হয়েছে।
পদত্যাগ করা ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামিম হোসেন বলেন, সৈকত ক্যাম্পাসে চিহ্নিত শিবির কর্মী। সে ক্যাম্পাসেও আসতে পারেনা। সে যখন কমিটির সভাপতি হয় তখন সেই কমিটিতে আমি কোনভাবেই থাকতে পারিনা। তিনি বলেন, কমিটির গঠনের খবর জানতে পারার পর তিনি পদত্যাগ করেছেন। অবিলম্বে কমিটি স্থগিত করে নতুন কমিটি গঠনেরও দাবি জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, এই কমিটির সাধারণ সম্পাদকসহ ১২ জন আমরা পদত্যাগ করেছি। কেন্দ্রীয় কমিটির নিকট আমরা দাবি করেছি যেন দ্রুত কমিটি ভেঙ্গে দেয়া হয়।
এদিকে এ প্রসঙ্গে আখতারুজ্জামান সৈকত বলেন, একটি চক্র তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপপ্রচার করছে। শিবিরের লিফলেটসহ হাতেনাতে ধরা পড়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে কখনও যুক্ত ছিলাম না। এগুলো আমার বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডা।
ঢাকা চিকিৎসা বিজ্ঞান জেলা শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শরীফ ইসলাম বলেন, আমরা যাছাই বাছাই করে দেখেছি ওই ছেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য নয়। এ কারণে তাকে এ পোষ্ট দেয়া হয়েছে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ বলেন, আমি যতদূর জানি সৈকত ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। শিবির সম্পৃক্ততা বিষয়ে আমার কাছে কেউ অভিযোগ দেয়নি। অন্যান্য নেতাকর্মীর পদত্যাগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি এখনো কোনও পদত্যাগপত্র পাইনি।
আজকের বাজার : আরআর / এমএম / ২৯ অক্টোবর ২০১৭