মিরপুরের মাজার রোডের জঙ্গি আস্তানায় একটি রুমে পুড়ে বিবর্ণ হয়ে যাওয়া তিনটি লাশের সন্ধান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অভিযান এখনো অব্যাহত রয়েছে।
বেলা একটার কিছুক্ষণ আগে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, পাঁচ তলার একটি কক্ষে তিনটি লাশ পাওয়া গেছে। তবে লাশগুলো এমনভাবে পুড়েছে যে, তাদের পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। এমনকি ছেলে নাকি মেয়ে সেটাও বোঝা যাচ্ছে না।
বুধবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে শুরু হওয়া অভিযান অব্যাহত আছে। র্যাব-পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস যৌথভাবে অভিযান চালাচ্ছে। রয়েছে র্যাবের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াডও।
এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান, সকাল পৌনে ৯টার দিকে আবার অভিযান শুরু হয়। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, র্যাবের ডগ স্কোয়াড ও বোম ডিসপোজাল ইউনিট অভিযানে আছে।
র্যাব কর্মকর্তা জানান, সেখানে আরও বোমা বা বিস্ফোরক আছে কি না এবং হতাহত কী হয়েছে সেটা অভিযান শেষে জানানো যাবে।
ধারণা করা হচ্ছে, ভেতরে থাকা জঙ্গিরা রাতেই আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায়। জঙ্গিদের কাউকে জীবিত পাওয়ার সম্ভাবনাও ক্ষীণ।
রাতে দফায় দফায় বিস্ফোরণের পর ভবনটিতে আগুন ধরে যায়। ফায়ার সার্ভিস রাতেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। সেখানে আরও কোনো বিস্ফোরক দ্রব্য আছে কি না তা তল্লাশি চালিয়ে দেখছে ফায়ার সার্ভিস।
রাতে র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক জানান, রাতের আঁধারে আমরা অভিযান ‘হাউস ক্লিয়ারিং রেল’ আপাতত স্থগিত করলাম। সকালে অভিযান আবার শুরু হবে।
বুধবার সকাল ৯টার কিছু আগে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের ঢাকা বিভাগের উপ-পরিচালক দেবাশীষ বর্ধন বলেন, রাতে জঙ্গি আস্তানায় বিস্ফোরণের কারণে যে অগ্নিকাণ্ড হয়েছিল, তা আড়াই থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু তখন আস্তানায় আরও বিস্ফোরক ছিল কি না, নিশ্চিত না হওয়ায় ভেতরে প্রবেশ করা সম্ভব হয়নি। ওই সময় অভিযান স্থগিত করা হয়। এখন তিনটি ইউনিট ভেতরে গিয়ে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
এর আগে রাত ১০টার কিছু আগে বিকট শব্দে পর পর পাঁচটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। এতে সেখানে আগুন ধরে যায়। তবে কিছুক্ষণ পর আগুন নিভে গেলেও প্রচুর কালো ধোঁয়া বেরোতে দেখা যায়। বাড়িটিতে রাখা রাসায়নিক বিস্ফোরণের কারণে আগুন লাগতে পারে বলে ধারণা করছে র্যাব। পরে মধ্যরাতে আরও কয়েকটি বিস্ফোরণ ঘটে।
বিস্ফোরণের পরপর র্যাব বাড়িটি লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে থাকে। বোমার স্প্লিন্টারে চার র্যাব সদস্য আহত হয়েছেন।
মুফতি মাহমুদ জানান, জঙ্গিদের সাথে বিভিন্নভাবে সমঝোতা করার চেষ্টা করা হয়েছিল। তারা সময় চেয়েছিল। কিন্তু রাত ৯টা ৪৯ মিনিটে পাঁচটি বিস্ফোরণ হয়। এতে র্যাবের চারজন সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
ওই বাড়িতে অবস্থান করা জঙ্গি আবদুল্লাহর রাত আটটার মধ্যে আত্মসমর্পণ করার কথা থাকলেও এশার নামাজের জন্য সময় নেন তিনি। নামাজের পর তিনি আত্মসমর্পণ করবেন বলে র্যাবকে জানিয়েছিলেন।
আবদুল্লাহর আত্মসমর্পণের জন্য যখন অপেক্ষা করছিল র্যাব, তখন ওই বিস্ফোরণ ঘটে।
সোমবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে দারুস সালামের ২/৩/বি নম্বর বাড়িটি ঘিরে রেখেছে র্যাব। সকালের দিকে ওই বাড়ির অন্য সব বাসিন্দাকে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়।
আজকের বাজার:এলকে/এলকে/ ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭