প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছেলিন জাতির পিতা। তার নির্দেশেই এদেশের মানুষ অসহযোগ আন্দোলন করেছিলেন।
রোববার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত গণহত্যা দিবসের আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ এর পর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ বাজাতে যেয়ে অনেককে জীবন দিতে হয়েছে। ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু সব নির্দেশনাই দিয়ে গেছেন। সেই ভাষণের মধ্যেই স্বাধীনতার সব নির্দেশনা রয়েছে। যুদ্ধ পরিচালনার জন্য যা প্রয়োজন সবই ৭ মার্চের ভাষণে ছিলো।
তিনি বলেন, যুদ্ধপরাধী আর গণহত্যায় জড়িতদের পুরস্কৃত করেছিলো বিএনপি। তাদেরকে মন্ত্রী-উপদেষ্টা বানিয়েছে বেগম খালেদা জিয়া। যারা যুদ্ধাপরাধের মদদ দিয়েছে তারাও অপরাধী। তাদেরও বিচার হওয়া উচিত। তারা স্বাধীনতা চায়নি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, জাতির পিতা স্বাধীনতার পর আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন। পাকিস্তানের পাসপোর্টসহ বাংলাদেশ থেকে চলে গিয়েছিল গোলাম আযম, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সেই গোলাম আযমকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনে। পাকিস্তানি পাসপোর্ট হাতেই কিন্তু গোলাম আযম বাংলাদেশে ফিরে আসে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধন করে ওই যুদ্ধাপরাধী, গণহত্যাকারীদের রাজনীতি করার সুযোগ তৈরি করে দেয় জিয়াউর রহমান।
শেখ হাসিনা বলেন, ইয়াহিয়া খান গণহত্যার হুকুম দেন, মেজর জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ববাংলার গণহত্যার দায়িত্ব দেন। আলবদর, আলশামস, রাজাকার এই বিভিন্ন বাহিনী গড়ে তুলে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পথ দেখিয়ে দেয়া হয় আর গণহত্যা চালানো হয়।
পিলখানার ওয়ার্লেসের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বাধীনতার ঘোষণা সারা বাংলাদেশের মানুষের কাছে পৌঁছে যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ দেশের মানুষ কিন্তু প্রতিরোধ শুরু করে। ২৫ মার্চের গণহত্যার আগে থেকেই কিন্তু তারা গণহত্যা করেছে। আন্দোলনের সময়ও তারা হত্যা করেছে।
২৫ মার্চের নির্মম চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বাড়ির আশপাশে সব বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়। জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ৩২ নম্বরের বাড়িতে আক্রমণ করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। জাকির খান সাহেব এসে আমাকে, রেহানাকে নিয়ে যান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন বের হই তখন রাস্তায় রাস্তায় লাশ পড়ে থাকতে আমি নিজে দেখেছি। ধানমন্ডি, মিরপুর রোড থেকে শুরু করে ঢাকা শহরে শুধু লাশ আর লাশ। বস্তিতে আগুন দিয়েছিল, মানুষের চিৎকার আর দাউ দাউ করা আগুন। সমস্ত জায়গায় বাড়িতে বাড়িতে ছিল বাংলাদেশের পতাকা, যে বাড়িতে পতাকা দেখেছে সে বাড়িতেই হামলা করেছে।
তিনি বলেন, ২৫ মার্চ থেকে শুরু করে পুরো ৯টা মাস গণহত্যা চালিয়েছে। আত্মসমর্পণ করার আগে আমাদের আটক করা হয়। মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করার পর অনেকেই ভেবেছিল আমরা বুঝি মুক্ত হয়ে গেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা তৎকালীন বিশ্বের সমস্ত মিডিয়াতে এসেছে। অল্প সময়ে এত মানুষ হত্যা এ রকম গণহত্যা কিন্তু আর কোনো দেশে ঘটে নাই। সেই গণহত্যা গ্রিনিজ বুক অব রেকর্ডেও উঠে এসেছে। এটা ছিল সব থেকে ভয়াবহ, মারাত্মক এবং অধিক সংখ্যার গণহত্যা। ইউটিউবে গিয়ে যদি সার্চ করা যায় অনেক তথ্য এখন পাওয়া যায়। পৃথিবীর এমন কোনো পত্রিকা নাই যেখানে এই গণহত্যার কথা ওঠে নাই।
আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
আরএম/