চলমান রোহিঙ্গা গণহত্যার বিষয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে পারেন এমন আশঙ্কায় এবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনে যোগ দেননি মায়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সু চি। তার প্রতিনিধি হিসেবে অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্কে গেছেন সু চির উপদেষ্টা থাং তুন। সেখানে মন্ত্রী পর্যায়ের এক বৈঠকে রোহিঙ্গা গণহত্যার বিষয়ে তোপের মুখে পড়েন সু চির প্রতিনিধি। তিনি বিষয়টিকে ‘অতিরঞ্জন’ ও ‘মনগড়া’ হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা করলেও, তা হালে পানি পায়নি। যোগদানকারী দেশগুলোর মন্ত্রীরা তার বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ সম্মেলনের ফাঁকে স্থানীয় সময় ১৮ সেপ্টেম্বর সোমবার রাতে ব্রিটেন মন্ত্রী পর্যায়ের এ বৈঠকের আয়োজন করে। এতে অধিকাংশ পশ্চিমা শক্তিধর দেশ রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে মায়ানমারের ওপর চাপ বাড়ানোর আহবান জানায়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ. এইচ. মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে অংশগ্রহণের পর, পররাষ্ট্র সচিব এম. শহিদুল হক সাংবাদিকদের এ সম্পর্কে বলেন,অধিকাংশ দেশ মুসলিম রোহিঙ্গা নির্যাতন বন্ধে মায়ানমার নেত্রী অং সান সু চির ওপর চাপ বৃদ্ধির আহবান জানিয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মায়ানমার নেত্রীর প্রতিনিধিত্বকারী উপদেষ্টা থাং তুন রোহিঙ্গা নির্যাতনের ওপর বিভিন্ন প্রতিবেদন, ছবি ও তথ্যকে ‘মনগড়া’ অবহিত করে, অত্যাচারের অভিযোগ অস্বীকার করার চেষ্টা করেন। তবে অংশগ্রহণকারী দেশের প্রতিনিধিরা মায়ানমার নেত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে জানান, তারা ওই অঞ্চলের বাস্তবিক অবস্থা সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত আছেন।
ব্রিটেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন মায়ানমারের মুসলিম রোহিঙ্গাদের নির্যাতন বিষয়ক বৈঠকের আয়োজন করেন। এতে এই সহিংসতাকে জাতিগত নির্মূল হিসেবে আখ্যায়িত করে, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে আন্তর্জাতিক মহলের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ. এইচ. মাহমুদ আলী। এতে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, রাশিয়া, সুইডেন, সুইজাল্যান্ড, চীন, ডেনমার্ক, তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও জেষ্ঠ্য কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে মায়ানমারের পক্ষে সু চির উপদেষ্টা অংশগ্রহণ করেন।
মায়ানমারে মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের কারণে বিশ্বব্যাপী সমালোচনা এড়াতে অং সান সু চি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগ দেয়া থেকে বিরত থাকেন।
গত মাসে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে নৃশংস সেনা অভিযানে প্রায় চার লাখ ১০ হাজার রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে। জাতিসংঘ এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে ‘জাতিগত নির্মূল’ হিসেবে অবহিত করেছে।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, বৈঠকে অংশগ্রহণকারী মন্ত্রীরা রোহিঙ্গাদের মানবিক বিবেচনায় আশ্রয় ও অন্যান্য সাহায্য করায় বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং দ্রুত তাদের মায়ানমারে ফিরিয়ে নেয়ার আহবান জানান।
বরিস জনসন মায়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর চলমান সহিংশতাকে মায়ানমারের জন্য একটি কলঙ্ক হিসেবে অবহিত করে এসব কার্যক্রম বন্ধে অং সান সু চি ও তার সরকারের প্রতি আহবান জানান।
বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে জনসন বলেন, যখন মায়ানমার গত কয়েক বছরে গণতন্ত্রের উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন দেশটির জন্য কলঙ্কজনক অধ্যায় রচনা করল। এ সহিংসতা বন্ধ করা মায়ানমান নেত্রী অং সান সু চি ও সরকারের জন্য অত্যাবশ্যকীয় বলে তিনি জানান।
আজকের বাজার : এলকে/এলকে ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭