জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে তোপের মুখে যুক্তরাষ্ট্র

ইসরায়েলের রাজধানী হিসাবে জেরুজালেমকে স্বীকৃতি দেওয়ার পর জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরী বৈঠকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি আর ইউরোপীয় ইউনিয়নও এক বিবৃতিতে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই স্বীকৃতি অসহযোগিতামুলক।

বিবিসি, মিডল ইস্ট মনিটর সংবাদ সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি পাল্টা অভিযোগ তুলে বলেছেন, জাতিসংঘ মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি রক্ষা করার বদলে শান্তি নষ্টের চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, বহুবছর ধরেই জাতিসংঘ ইসরায়েলের প্রতি অসংযতভাবে বৈষম্যমূলক আচরণ করে আসছে। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে যা কিনা ক্ষতি এনেছে। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্র এর পক্ষে থাকতে পারেনা।

বিবিসি এক খবরে জানিয়েছে, নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্র এমন অবস্থান নিলো যখন বৈঠকে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার তীব্র বিরোধিতা ও নিন্দা জানানো হয়। পুরো বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়ে।

জাতিসংঘে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের স্থায়ী প্রতিনিধি ম্যাথিউ রায়ক্রফ্ট বলেন, ব্রিটিশ দূতাবাস তেল আবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তরের কোনও পরিকল্পনা লন্ডনের নেই। যুক্তরাজ্য মার্কিন প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে। তিনি আবারো বিষয়টির মীমাংসায় দুই দেশের আলোচনার প্রতি জোর দেন।

আর ফ্রান্সের প্রতিনিধি ফ্রাঁসোয়া ডেলাত্রে বলেন, ট্রাম্পের ঘোষণায় প্যারিস উদ্বিগ্ন। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের এমন অবস্থান পুরো মধ্যপ্রাচ্যের জন্যেই আরও ভয়ানক পরিণতি নিয়ে আসছে।

জাতিসংঘে নিযুক্ত রুশ প্রতিনিধি ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, ট্রাম্পের ঘোষণায় মস্কো মারাত্মকভাবে উদ্বিগ্ন। রাশিয়া মনে করে এই ঘোষণার ফলে মধ্যপ্রাচ্য সংকট আরও জটিল আকার ধারণ করবে।

জাতিসংঘে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রদূত রিয়াদ মনসুর ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনে মদদ দেওয়ার জন্যে যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করেন।

তিনি বলেন, এখানে খারাপ কাজের সহযোগিতাকে স্বীকার করতে হবে। অঞ্চলটিতে ইসরায়েলের দমন পীড়ন আর বিচারহীনতার সংস্কৃতিকে যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত আরো উস্কে দিয়েছে। এই স্বীকৃতির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র তার শান্তির মধ্যস্থতাকারীর অবস্থান হারিয়েছে।

সুইডেনের দূত ওলোফ স্কুগ বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিক সনদ লঙ্ঘন করেছেন।

জাতিসংঘে নিযুক্ত চীন, ইতালি, উরুগুয়ে, সেনেগাল, বলিভিয়া, ইথিওপিয়া, কাজাকিস্তান, ইউক্রেন, জাপান ও ডর্ডানের প্রতিনিধিরাও ট্রাম্পের ঘোষণায় উদ্বেগ জানান।

মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়া বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ সমন্বয়কারী নিকোলাই ম্লাদেনোভ বলেন, ট্রাম্পের এই ঘোষণার ফলে মধ্যপ্রাচ্যে সহিংসতা ব্যাপক আকারে বেড়ে যেতে পারে।

তবে জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত ড্যানি ড্যানোন বুধবারে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া স্বীকৃতিকে স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য দেন।

এদিকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসাবে জেরুজালেমের মার্কিন স্বীকৃতির প্রতিবাদে ফিলিস্তিনে বিক্ষোভ চলছে।

দক্ষিণ ইসরায়েলের শহর সেডেরোটে গাজা থেকে রকেট নিক্ষেপ করা হয়েছে, অন্যদিকে ইসরায়েলি বিমান গাজার কিছু লক্ষ্যে হামলা চালিয়েছে।

ইসরায়েলি সেনাদের সঙ্গে সহিংসতায় এ পর্যন্ত অন্তত দুজনের মৃত্যু হয়েছে।

গত বুধবার জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে চলমান দ্বন্দ্বকে আরো সংকটময় করবে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। এ ছাড়া এই পদক্ষেপ ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের চলমান প্রচেষ্টা বাধাগ্রস্ত করবে। ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্তে বেশ শঙ্কিত সৌদি আরবসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা। এ বিষয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়ার কথা জানিয়েছেন তাঁরা। জেরুজালেমে ইসরায়েলের রাজধানী স্থানান্তর ‘ভয়াবহ পরিণতি’ ডেকে আনবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে জর্ডান। একই ধরনের প্রতিক্রিয়া তুরস্কেরও।

জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে ঘোষণার সিদ্ধান্তটি বেশ পুরোনো। ১৯৯৫ সালেই মার্কিন কংগ্রেস অনুমোদিত এক আইনে ইসরায়েলের মার্কিন দূতাবাস তেলআবিব থেকে জেরুজালেমে স্থানান্তর করার নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে সাবেক সব প্রেসিডেন্টই ক্ষমতায় থাকাকালীন ওই প্রক্রিয়া বিলম্বিত করার সিদ্ধান্ত নেন।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর একই পথে হেঁটেছিলেন ট্রাম্পও। তবে এবার বেঁকে বসেন তিনি। গত বুধবার জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেন।

১৯৬৭ সালে পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয় ইসরায়েল। পরে ১৯৮০ সালে তারা পূর্ব জেরুজালেমকে অধিগ্রহণ করে নেয় এবং ইসরায়েলের অংশ হিসেবে ঘোষণা করে। তবে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী ওই অঞ্চলকে দখলকৃত হিসেবেই বিবেচনা করা হয়।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে ৯ ডিসেম্বর ২০১৭