জাতীয় নির্বাচনে প্রথম ভোট দেয়ার অপেক্ষায় বিলুপ্ত ছিটমহলবাসী

দীর্ঘ ৬৮ বছর বঞ্চনার পর স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেয়ে এই প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেয়ার জন্য অধীর অপেক্ষায় রয়েছে সাবেক ছিটমহল বাসিন্দারা।

দেশের বৃহত্তম ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার মানুষ ভোট দেয়ার অধিকার পেয়ে এবং তা প্রয়োগের জন্য উল্লাস প্রকাশ করছে।

তারা নির্বাচিত প্রার্থীদের কাছে ছিটমহলের উন্নয়ন এবং মাদকদ্রব্য নির্মূলে ভূমিকা রাখারও দাবি জানিয়েছেন।

ছিটমহল বাসী খবির হোসেন, দাইনুল ইসলাম এলাকায় কর্মসংস্থান ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে নির্বাচিত প্রতিনিধিদে দৃষ্টি কামনা করেন।

বাংলাদেশে বিলুপ্ত ১১১টি ছিটমহলের মধ্যে লালমনিরহাটে ৫৯টি, পঞ্চগড়ে ৩৬টি, নীলফামারীতে ৪টি এবং কুড়িগ্রামে ১২টি ছিটমহল রয়েছে। এরমধ্যে ফুলবাড়ি উপজেলার কাটাতারের মাত্র ৫কি.মি. অভ্যন্তরে বড় ছিটমহল দাসিয়ারছড়া। এর আয়তন ১হাজার ৯৪৩ একর এবং লোকসংখ্যা ৭ হাজার ৬৭২ জন। ভোটার রয়েছে ৩ হাজার ১৭২ জন।

দাসিয়ারছড়াবাসীকে উপজেলার ৩টি ইউনিয়নের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়। ইউনিয়নগুলো হচ্ছে ফুলবাড়ি সদর, ভাঙ্গামোড় এবং কাশিপুর। দাসিয়ারছড়া মানুষ সংসদীয় কুড়িগ্রাম-২ আসনের ভোটার হয়েছেন। এই আসনটি কুড়িগ্রাম সদর, রাজারহাট ও ফুলবাড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত। সদর উপলোয় মোট ভোটার ২ লাখ ২৪ হাজার ৫৪৪ জনের মধ্যে নারী-১ লাখ ১৩ হাজার ১২৭ জন, পুরুষ ১ লাখ ১১ হাজার ৪১৭ জন। রাজারহাটে ভোটার ১ লাখ ৪২ হাজার ৩২৩ জনের মধ্যে নারী ৭২ হাজার ৩৮৮জন, পুরুষ ৬৯ হাজার ৯৩৫ জন এবং ফুলবাড়িতে ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৬৮ জনের মধ্যে নারী ৬৪ হাজার ৯৯জন, পুরুষ ৬২হাজার ২৬৯জন।

পরিচয়হীন থাকায় দীর্ঘদিন নাগরিকত্ব ছিল না এই ছিটবাসীর। বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন হওয়ায় ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই মধ্যরাতে ছিটমহল বিনিময়ের সাথে সাথে অবসান ঘটে পরিচয়হীন জীবনের।

জীবনের শেষ সময়ে এসে প্রথম বারের মতো সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদানে অধীর আগ্রহে এসব ছিটবাসীর প্রবীণরা। বয়স্কদের পাশাপাশি নতুন ভোটারদের মাঝেও ভোট উৎসব বিরাজ করছে। তাদের সকলের চাওয়া সবাই যেন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে পারেন।

২০১১সালের হিসেব অনুযায়ী ১১১টি ছিটমহলে জনসংখ্যা রয়েছে ৩৭ হাজার ৩৬৯ জন। এর মধ্যে ভোটার পরিসংখ্যান রিপোর্ট অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার ৬০% মানুষ ভোটার রয়েছেন।

ছিটমহল আন্দোলনের সাবেক নেতা গোলাম মোস্তফা বলেন, বিলুপ্ত ছিটমহলবাসী এই প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের নাগরিক অধিকার ভোট দেয়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

তিনি বলেন, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অবাধে ভোটের প্রত্যাশা করছে বিলুপ্ত ছিটমহলবাসী।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীন জানান, ছিটবাসীসহ সকল ভোটারদের অবাধে ভোট প্রদানে কাজ করে যাচ্ছে আইন-শৃংখলাবাহিনী। অবাধ-শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ইতোমধ্যে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে প্রশাসন। তথ্য-ইউএনবি

আজকের বাজার/এমএইচ