জানুয়ারি থেকে সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে হচ্ছে

আগামী ১ জানুয়ারি থেকে শিল্প খাতে ব্যাংক ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিট কার্যকর হবে। গত রোববার অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হবে শিগগিরই। কীভাবে সিঙ্গেল ডিজিট সুদহার বাস্তবায়ন হবে সেখানে তার বিস্তারিত বিবরণ থাকবে।

জানা গেছে, ব্যাংকের ঋণে সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে ডেপুটি গভর্নর এস এম মনিরুজ্জামানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের চেয়ারমান্যান কাজী আকরাম হোসেন, রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহাবুবুর রহমান, আইএফআইসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সরওয়ার ও এনআরবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মেহমুদ হোসেন। ব্যাংকের মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনাসহ নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার পরও অনেক বেসরকারি ব্যাংক ঋণের সুদহার এখনও সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে না আনায় এবার নতুন এ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ১ জানুয়ারি থেকেই শিল্প খাতে ব্যাংক ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজিট কার্যকর হবে।

দেশে বেকারত্ব দ্রুত দূরীকরণে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়া জরুরি। কিন্তু শিল্পায়নের গতি মন্থর থাকায় তা হচ্ছে না। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটসহ অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে নতুন বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হচ্ছেন না।

এছাড়া এসব সমস্যার কারণে অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হওয়ার পথে। অথচ সবাই দেশের টেকসই উন্নয়নপ্রত্যাশী। এ অবস্থায় কোনো ধরনের সমস্যার কারণে যাতে আর কোনো শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। এসব সমস্যা বিদ্যমান থাকায় আমাদের দেশের উদ্যোক্তারা প্রতিযোগিতায় অনেক পিছিয়ে পড়ছেন।

সুদহার সিঙ্গেল ডিজিট করা হলে খেলাপি ঋণের পরিমাণও কমে আসবে এবং শিল্প খাতে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হবে। অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বারবার বলে আসছেন, ঋণে উচ্চসুদ থাকলে দেশে শিল্পায়নে গতি আসবে না।

দেশের শিল্প খাতকে অন্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সক্ষম করে গড়ে তুলতে চাইলেও ঋণের সুদহার দ্রুত সিঙ্গেল ডিজিট কার্যকর করতে হবে।

ব্যাংকের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণেও উদ্যোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দুশ্চিন্তার বিষয় হল, ব্যাংকগুলো অধিক হারে সুদ আরোপ করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না; পদে পদে সার্ভিস চার্জ আরোপের মাধ্যমে আগ্রাসী আচরণও অব্যাহত রেখেছে। সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচিত এ জায়গাটিতেও দৃষ্টি দেয়া।

ব্যাংকগুলোর গড়িমসি অব্যাহত থাকলে তাদের সিঙ্গেল ডিজিট সুদহারে ঋণ দিতে বাধ্য করতে হবে। কেউ সিঙ্গেল ডিজিট সুদে ঋণ না দিলে তার বিরুদ্ধে নিতে হবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। ইতিমধ্যে নানা উদ্যোগ ও প্রতিশ্রুতির পরও ঋণের সুদহার সিঙ্গেল ডিজেট কার্যকর হয়নি। এবার যেন অবশ্যই কার্যকর হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।

আজকের বাজার/এমএইচ