জাপানি দুই শিশু থাকবে বাবার হেফাজতে: হাইকোর্ট

জাপানি নাগরিক নাকানো এরিকো ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক শরীফ ইমরান দম্পতির দুই কন্যা তাদের বাবার হেফাজতে থাকবে বলে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। দুই শিশুর জিম্মায় নেয়ার দাবিতে জাপানি মায়ের করা রিট চলমান রেখে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এই রায় দেন।

আদালত তার রায়ে মাকে তার সুবিধাজনক সময়ে প্রতি বছর তিনবার ১০ দিন করে শিশুদের সাথে থাকার সুযোগ দিয়েছেন। এই তিনবারের ওই জাপানি মায়ের বাংলাদেশে আসা-যাওয়ার খরচ শিশুদের বাবাকে বহন করতে বলা হয়েছে। তবে এর চেয়ে বেশি বার আসলে সে খরচ মাকে বহন করতে হবে।

এছাড়াও ছুটির দিনে মাসে অন্তত দুই বার ভিডিও কনফারেন্সে মায়ের সাথে শিশুদের কথা বলিয়ে দিতে বাবার প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর এই রিটকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে থাকা বাবদ মাকে ১০ লাখ টাকা সাত দিনের মধ্যে দিতে শিশুদের বাবার প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রিটটির চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আদেশ প্রতিপালিত না হলে বা অন্য কোনো আদেশের জন্য আদালতে পক্ষগুলো আসতে পারবে। সংশ্লিষ্ট সমাজসেবা কর্মকর্তাকে শিশুদের দেখভাল অব্যাহত রাখতে এবং তাকে প্রতি তিন মাস পর পর শিশুদের বিষয়ে হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছে একটি প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে জাপানে থাকা ছোট মেয়ে হেনাকে হাইকোর্টে হাজির করানোর নির্দেশনা চেয়ে বাবা ইমরান শরীফের করা রিট খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।

চিকিৎসক এরিকো ও প্রকৌশলী ইমরান শরীফ (৫৮) ২০০৮ সালের ১১ জুলাই টোকিওতে বিয়ে করেন। এক যুগের দাম্পত্য জীবনে তারা তিন কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। এ দম্পতির ১১, ১০ ও ৭ বছর বয়সী তিন মেয়ে টোকিওর একটি স্কুলে পড়ত। তবে বিভিন্ন কারণে দাম্পত্য বিবাদের জেরে চলতি বছরের গত ১৮ জানুয়ারি বিবাহ বিচ্ছেদের আবেদন করেন শিশুদের মা এরিকো। সন্তানদের জিম্মায় চেয়ে টোকিওর পারিবারিক আদালতে গত ২৮ জানুয়ারি মামলা করেন এরিকো। এর মধ্যেই গত ২১ ফেব্রুয়ারি দুই মেয়েকে নিয়ে দুবাই হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন ইমরান শরীফ। এরপর জাপানের আদালত এরিকোর জিম্মায় সন্তানদের ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেন। এরপর গত ১৮ জুলাই শ্রীলঙ্কা হয়ে বাংলাদেশে আসেন নাকানো এরিকো।

পরে দুই মেয়েকে নিজের জিম্মায় পেতে ঢাকায় এসে গত ১৯ আগস্ট জাপানি নারী রিট করেন। সেদিন রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন। আদালত তার আদেশে দুই মেয়েসহ তাদের বাবা ও ফুপুকে ৩১ আগস্ট হাইকোর্টে হাজির হতে নির্দেশ দেন। ৩১ আগস্ট হাজির হওয়ার পর সবার বক্তব্য শুনে দুই পক্ষের প্রস্তাবের ভিত্তিতে হাইকোর্ট আদেশ দেন। এরই মধ্যে বাবা ইমরান শরীফ তার ছোট মেয়েকে হাজির করার নির্দেশনা চেয়ে একটি রিট করেন। গত ৩১ অক্টোবর উভয়পক্ষের শুনানি শেষে রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন। আদালতে ইমরান শরীফের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফিদা এম কামাল ও ফাওজিয়া করিম ফিরোজ। এরিকো নাকানোর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শিশির মনির।