জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্মঘটের সমর্থনে পরিবহন গ্যারেজে তালা মারা নিয়ে হাতাহাতিতে জড়িয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থক দুই গ্রুপের শিক্ষকরা।
মঙ্গলবার ভোর চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশমাইল এলাকায় পরিবহন গ্যারেজের সামনে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবীর ও বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অনুসারী শিক্ষকদের মাঝে এ ঘটনা ঘটে। উভয় পক্ষের শিক্ষকরাই বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
হাতাহাতির ঘটনার পরে উপাচার্যকে লিখিত অভিযোগ দিয়ে ও সংবাদ সম্মেলন করে প্রক্টরের অপসারণ ও ‘মারধরকারী’ শিক্ষকদের বিচার চেয়ে উপাচার্যকে চারটা পর্যন্ত সময় বেধে দিয়েছে শরীফ এনামুল সমর্থক শিক্ষকরা। দাবি আদায় না হলে তারা উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা দাবিতে আন্দোলনে যাবেন বলে জানান। পাশাপাশি পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ি প্রশাসনিক ভবনও অবরোধ করে রেখেছে তারা।
অন্যদিকে পাল্টা ‘লাঞ্ছনার’ অভিযোগ এনে উপাচার্যকে মৌখিক অভিযোগ জানিয়েছে তার সমর্থক শিক্ষকরা। এরাও প্রশাসনিক ভবনের সামনের রাস্তায় অবস্থান নিয়েছে।
উভয় পক্ষের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ১১ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়টি হলে পুরোনোদের অব্যাহতি দিয়ে প্রাধ্যক্ষ পদে পরিবর্তন আনেন পুনঃনিয়োগ পাওয়া উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম।
সোমবার এ ঘটনার বিরোধীতা করে মঙ্গলবার সকাল থেকে সর্বাত্মক অবরোধের ঘোষণা দেন বর্তমান উপাচার্য বিরোধী শিক্ষকরা। অবরোধের সমর্থনে ভোর চারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশমাইল এলাকায় অবস্থিত পরিবহন গ্যারেজে তালা মেরে অবস্থান নেয় তারা। খবর পেয়ে প্রক্টরিয়াল টিমের সাত-আটজন সদস্য ও পাঁচটি হলের উপাচার্য সমর্থক প্রাধ্যক্ষ সেখানে গিয়ে তাদের সরে যেতে বলেন। এ নিয়ে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে তাদের মাঝে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
সাবেক উপাচার্য শরীফ এনামুল কবীরের সমর্থক ও রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আওলাদ হোসেন বলেন, “আমরা ধর্মঘটের সমর্থনে গ্যারেজে তালা দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছিলাম। কিন্তু উপাচার্যের নির্দেশে প্রক্টরিয়াল টিম ও তার অনুসারী অন্য কয়েকজন শিক্ষক এসে আমাদের গালমন্দ করে এবং ধাক্কা দিয়ে লাঞ্ছিত করে।”
জাবি শিক্ষক সমিতির বর্তমান এ যুগ্ম-সম্পাদক বলেন, “আমরা উপাচার্যকে বিকেল চারটার মধ্যে ‘সন্ত্রাসী’ প্রক্টর ও ‘অপরাধী’ অন্য শিক্ষকদের শাস্তি নিশ্চিত করতে দাবি জানিয়েছি। দাবি পূরণ না হলে আমরা উপাচার্যের পদত্যাগের একদফা আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব।”
তবে মারধর ও লাঞ্ছনার অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা লাঞ্ছনার অভিযোগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সিকদার মো. জুলকারনাইন।
তিনি বলেন, “গাড়ির গ্যারেজে তালা দিয়েছে শুনে সেখানে গিয়ে আমি তাদের তালা খুলে দিতে অনুরোধ করি। কারণ, গাড়ি ঢাকা যেতে না পারলে সকালে ঢাকা থেকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আসতে পারবে না। কিন্তু তারা অনুরোধ শুনেনি। পরে খবর পেয়ে সেখানে কয়েকজন প্রাধ্যক্ষও এসে তাদের সরে যেতে অনুরোধ করেন। কিন্তু তারা অনুরোধ না শুনে উল্টো দুজন হল প্রাধ্যক্ষ আবদুল্লা হেল কাফী ও সোহেল আহমেদকে শার্টের কলার ধরে ও ধাক্কা দিয়ে লাঞ্ছিত করেন।”
“তাদের অবরোধ করার অধিকার আছে, কিন্তু অন্যদের তো তারা জিম্মি করতে পারেন না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অংশ হিসেবে তাদের বুঝাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু তারা উল্টো আমাদের সাথে খারাপ আচরণ করেছে। আমরা উপাচার্যকে ঘটনা জানিয়ে এর বিচার চেয়েছি।”
এদিকে সকাল ১১টায় উপাচার্য তার সমর্থক শিক্ষকদের সাথে নিয়ে এসে তার কার্যালয়ে প্রবেশ করতে এলে উভয় পক্ষের শিক্ষকদের মধ্যে গালমন্দ ও উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়।
উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম এ সময় তাদের বলেন, “অনেক প্রশাশনিক কাজ বাকি রয়েছে। কিন্তু আপনারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক, প্রশাসনিক ও একাডেমিক ক্ষতি করে অবরোধ করে আছেন, আমাকে কার্যালয়ে ঢুকতে দিলেন না। কি আর করা, আমি চলে যাচ্ছি।”
অন্যদিকে উপাচার্যকে কার্যালয়ে প্রবেশ করতে না দেয়া, উপাচার্যের সাথে অশোভন আচরণ ও মারধর বিষয়ে মিথ্যাচারের প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক মানববন্ধন করেন উপাচার্য সমর্থক শিক্ষকরা।
বেলা সাড়ে ১২টায় শরীফ এনামুল কবীর সমর্থক শিক্ষকরা সংবাদ সম্মেলন করে তাদের আল্টিমেটামের বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান।
সার্বিক বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “কোন মারধরের খবর আমি পাইনি। তারা আন্দোলন করবেন ভালো কথা। এত রাতে তারা কেন সেখানে গিয়েছিলো সেটাই তো প্রশ্নবিদ্ধ। ঐ শিক্ষকরা বিভিন্ন সময়ে ‘তালা মারার’ সংস্কৃতির বিরুদ্ধে কথা বলে নিজেরাই তালা মেরে সবাইকে জিম্মি করে প্রশাসনিক ও একাডেমিক কাজে বাধা দিচ্ছে। আসলে তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। সরকার আমাকে নিয়োগ দিয়েছে, কিন্তু এই স্বল্পসংখ্যক শিক্ষক আমাকে উপাচার্য হিসেবে দেখতে চান না। এ ক্ষেত্রে আমার কিছু আর বলার নেই।”
যে প্রাধ্যক্ষ অপসারণের বিরোধীতা করে এ আন্দোলন সে বিষয়ে উপাচার্য বলেন, “আমাকে তো প্রশাসন চালাতে হবে। যাদের অপসারণ করা হয়েছে তাদের প্রায় সকলেই মেয়াদোত্তীর্ণ। পাশাপাশি প্রশাসনিক কাজ চালাতে তারা আমাকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাধা দিচ্ছিলো। তো তাদের সরিয়ে না দিয়ে তো আমার করার কিছু ছিলো না।”
নাঈম/আরএম