জাবির দুই হলের ছাত্রলীগের সংঘর্ষে আহত ৩০, ভর্তি পরীক্ষায় বিলম্ব

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রীকে উত্যক্ত করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে মীর মশাররফ হোসেন হল ও আল বেরুনি হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

এতে অন্তত ৩০জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে ছয়জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সিকদার মো. জুলকারনাইন বলেন, “এক ছাত্রীকে উত্যক্ত করলে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ৩০জনের মত আহত হয়। ”

সাভারে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গত রাতে গুরুতর আহত অবস্থায় ৬জনকে ভর্তি করা হয়। তাদের অধিকাংশই মুখ, হাত ও পায়ে আঘাত পায়।

আহতের সংখ্যা কমপক্ষে অর্ধশত এবং তদের অধিকাংশই আল বেরুনি হলের শিক্ষার্থী বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের টেকনিকাল মেডিকেল অফিসার জাকারিয়া।

গুরুতর আহতরা হলেন- একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম (৪৬ব্যাচ) বিভাগের সোহেল রানা, পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স (৪৭ব্যাচ) বিভাগের মিজানুর রহমান। তারা দুইজন আল বেরুনী হলের আবাসিক ছাত্র। মীর মশাররফ হোসেন হলের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা (৪৫ব্যাচ) বিভাগের শিক্ষার্থী আবু হানিফ। এছাড়া কাব্য (৪২ব্যাচ), ফারাবী (৪৫ব্যাচ), সাকিব (৪৩ব্যাচ) আহত হয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংলগ্ন চৌরঙ্গী এলাকায় মীর মশাররফ হোসেন হলের কয়েকজন শিক্ষার্থী এক ছাত্রীকে উত্যক্ত করেন। পরে ওই ছাত্রী আল বেরুনী হলের তার কিছু সহপাঠীকে ডেকে আনলে এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাক-বিত-ার এক পর্যায়ে আল বেরুনী হলের শিক্ষার্থীরা উত্যক্তকারীদের মারধর করেন।

এর জের ধরে মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা রাত ১২টার দিকে আল বেরুনী হলের সামনে আসলে দুই হলের ছাত্রলীগের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। উভয় হলের নেতাকর্মীদের এ সময় হকিস্টিক, রড, রামদা, ক্ষুর ও দেশিয় অস্ত্র ব্যবহার করে।
এ সময় মীর মশাররফ হোসেন হলের ছাত্রলীগ কর্মীদের মধ্য থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। দুই গ্রুপের মধ্যে চলে ইট পাটকেল ছোড়াছুড়ি। মীর মশাররফ হোসেন হলের ৪৪তম আবর্তনের এক শিক্ষার্থীর বাইকে আগুন ধরিয়ে দেয় আল বেরুনী হলের ছাত্রলীগ কর্মীরা।

উল্লেখ্য, উভয় গ্রুপের কর্মীরাই শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আবু সুফিয়ান চঞ্চলের অনুসারী।

ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয় ৩০মিনিট পর

আজ সকাল ৯টায় জীববিজ্ঞান অনুষদভূক্ত ‘ডি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার কথা থাকলেও প্রায় ৩০মিনিট পর শুরু হয় পরীক্ষা।
মঙ্গলবার রাতে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংর্ঘষের ঘটনার পর সকাল ৮টায় ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবিতে জীববিজ্ঞান অনুষদ ভবনে তালা লাগিয়ে অবরোধ করেন আল বেরুনী হলের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।

পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, প্রক্টরিয়াল বডি ও শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘটনা স্থলে গিয়ে আন্দোলনরত নেতাকর্মীদের সরিয়ে নিলে ৩০মিনিট দেরিতে পরীক্ষা শুরু হয় বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সিকদার মো. জুলকারনাইন।
এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম সেখানে উপস্থিত হন। সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিত করার আশ্বাসও দেন তিনি।

প্রক্টর সিকদার মো জুলকারনাইন বলেন, “যে ঘটনাগুলো ঘটেছে এগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলাবিধির লঙ্ঘন। ফৌজদারি অপরাধ। এখন পর্যন্ত যা ঘটেছে তার একটা সুষ্ঠু সামাধান যেন হয় সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিশ্চয়ই যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করবে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আবু সুফিয়ান চঞ্চল বলেন, “যারা এই ঘটনার সাথে জড়িত তারা সংগঠনের আদর্শের সাথে সাংঘর্ষিক কাজ করেছে। তাদের জন্য উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হবে।”

আজকের বাজার/এমএইচ