বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে রোববার এ সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়েছে, আদালত দলটির নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) বিধান অনুসারে দলটির নিবন্ধন স্থগিত করা হয়ছে।
সোমবার (২৯ অক্টোবর) ইসির সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রজ্ঞাপনে সই করেছেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ।
২০১৩ সালে হাইকোর্টের রায়ে নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণার পাঁচ বছর পর এ দলটির বিষয়ে এমনই পদক্ষেপ নিল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান ইসি। এর ফলে দলটি দলীয় প্রতীক দাঁড়িপাল্লা নিয়ে আর কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।
কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, আপিল বিভাগে দলটির পক্ষ থেকে আপিল আবেদন থাকায় এতদিন নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করেনি কমিশন। সম্প্রতি কমিশন মনে করেছে, আপিল আবেদন হলেও তা স্থগিত না থাকায় হাইকোর্টের রায় প্রতিপালনে কোনো বাধা নেই, তাই দলটির নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি পাওয়া গেছে। ওই রায় প্রতিপালন করতেই প্রজ্ঞাপন জারি করা হচ্ছে।
ইসির কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের ফাঁসি হয়েছে। দলটির বিরুদ্ধেও রয়েছে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ। আইন করে দলটি নিষিদ্ধের প্রক্রিয়ার মধ্যে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করল।
জানা গেছে, গত সপ্তাহে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি সংগ্রহ করে ইসির আইন শাখা। ওই রায়ের ভিত্তিতেই জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করার অনুমোদন চেয়ে কমিশনে ফাইল তোলা হয়। এরপরই তা অনুমোদন করে গেজেট প্রকাশের জন্য সরকারি মুদ্রণালয়ে পাঠানো হয়।
ইসির প্রজ্ঞাপনে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে বলা হয়েছে, হাইকোর্ট বিভাগে দায়েরকৃত রিট পিটিশন নম্বর ৬৩০/২০০৯ এর প্রদত্ত রায়ে আদালত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করায় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ এর ৯০(এইচ) এর উপধারা ৪ অনুযায়ী নিবন্ধন বাতিল করা হলো।
সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতকে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট আবেদন করেন তরিকত ফেডারেশনের তৎকালীন মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ জন ব্যক্তি। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছরের ২৫ জানুয়ারি হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ রুল জারি করেন। এরপর ২০১৩ সালের বিচারপতি এম মোয়াজ্জাম হোসেন, বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি কাজী রেজা-উল হকের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।
জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরই আপিল করেছিল জামায়াত। ওই আবেদন এখন পর্যন্ত বিষয়টি সুরাহা হয়নি।
আজকের বাজার/এমএইচ