দামে কম ও আকর্ষণীয় নকশা থাকায় বিশ্ববাজারে চামড়াবিহীন জুতার চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর তাই ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা মাথায় রেখে চামড়ার পাশাপাশি কাপড়, সিনথেটিক, প্লাস্টিক ও রাবারের জুতাও তৈরি করছেন দেশের উদ্যোক্তারা। তাই নতুন এই ব্যবসা নিয়ে কাজ শুরু করতে পারেন আগ্রহী উদ্যোক্তারা।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)র পরিসংখ্যানও বলছে বাংলাদেশে এই ব্যবসার সম্ভাবনার কথা। বাংলাদেশ থেকে চামড়াবিহীন এসব জুতা রপ্তানি হচ্ছে এইচঅ্যান্ডএম, প্রাইমার্ক, পুমা, কেরিফোর ও কাপ্পার মতো বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোতে। দেশ বিদেশের মানুষ পকেটের হাজার হাজার টাকা খরচ করে বাংলাদেশের বানানো জুতা কিনে নিচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে এই পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি দেশেও দিন দিন বাড়ছে এর চাহিদা। আর তাই নতুন এই খাতের বিপুল সম্ভাবনা দেখছেন দেশীয় উদ্যোক্তারা।
বাংলাদেশে জুতার ব্যবসার বিভিন্ন দিক নিয়ে আজকের বাজারের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা হয় রাজধানীর যাত্রবাড়ীর পাশের মার্কেটের ব্যবসায়ী আলমগীর হোসেন মোল্লার। আল-জায়ান ফুটওয়ারের সত্তাধিকারী আলমগীর হোসেন দোকানের এডভান্স ও ডেকোরেশন বাদ দিয়ে আনুমানিক ২ থেকে ৩ লাখ টাকা নিয়ে তার জুতার ব্যবসা শুরু করেছিলেন। এখান থেকে তার প্রতিমাসে দোকনভাড়া ও স্টাফ খরচ বাদ দিয়ে আয় হয় ৫০ হাজার ছাড়িয়ে। আজকের আয়োজনে আমরা একজন সল্প পুঁজির ব্যবসায়ী হিসেবে আলমগীর হোসেনের সাফল্য জানবো।
আলমগীর হোসেনের জুতার ব্যবসা শুরু: আলমগীর হোসেন পূর্বে ফাস্ট ফুডের ব্যবসা করতেন। পরবর্তীতে তিনি জুতার ব্যবসায় পা রাখেন। তিনি যখন জুতার ব্যবসা শুরু করেন তখনও এই ব্যবসা সম্পর্কে তার কোন ধারনা ছিলো না। প্রাথমিক পর্যায় নানা চড়াই উতরাই পেরিয়ে তার এই ব্যবসায় গোড়াপত্তন হয়। তার অক্লান্ত পরিশ্রম ও তীক্ষ্ণ বুদ্ধির পরিচালনায় তিনি এখন একজন সল্প পুঁজির সফল ব্যবসায়ীর শ্রেনীভুক্ত।
আলমগীর হোসেনের কথায় জুতার ব্যবসার সম্ভাবনা
কিভাবে ব্যবসা শুরু করা যায়: জুতার ব্যবসা করতে তেমন কোন অভিঙ্গতার প্রয়োজন হয় না। তবে দোকানের হিসাব রাখা ও বুঝে শুনে মালামাল সংগ্রহ করার দক্ষতা থাকতে হবে। আমার মনে হয় এটা যে কেউ করতে পারবে। তবে এই ব্যবসা করতে হলে অবশ্যই তাকে পরিশ্রমী হতে হবে। তারপর পছন্দের একটা ব্যপার রয়েছে। কাস্টমার চয়েজ করবে এমন প্রোডাক্ট যদি দোকানে তুলা যায়, তবে তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবে না।
কোথা থেকে পণ্য সংগ্রহ করা যায়: রাজধানীর গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়ায় জুতার সবচেয়ে বড় বড় পাইকারি মার্কেটগুলো রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সিটি সুপার মার্কেট, জাকের সুপার মার্কেট, ঢাকা ট্রেড সেন্টার ও সিদ্দিকবাজার সমবায় মার্কেট থেকেই সারাদেশের সিংহভাগ ব্যবসায়ীরা জুতা সংগ্রহ করে থাকেন। আমার দোকানের সব মালামালই গুলিস্থান মার্কেট থেকে নেওয়া। আমার মনে হয়, গুলিস্থানের এসব মার্কেট থেকে মালামাল সংগ্রহ করলেই ব্যবসায়ীরা বেশী লাভবান হবে। কেননা, এখানে থেকে তারা তুলনামূলক সল্প মূল্যে পণ্য ক্রয় করে চাহিদা অনুযায়ী মূল্যে বিক্রি করতে পারবেন।
কিভাবে পছন্দ করা যায়: দেখতে যা সুন্দর খেতেও তা ভালো হয়। অথাৎ দেখে শুনে ভালো প্রোডাক্ট বেচে নিতে পারলে বিক্রি করেও ক্রেতাদের মন পাওয়া যাবে। কোন প্রোডাক্টটা আমার দোকানে, চলবে সেটা আমাকেই বুঝে সংগ্রহ করতে হবে। সাধারণত পাইকারী দোকানে প্রতিটা পণ্যের ১টা/২টা করে সেমপল দেখানো হয়। সেখান থেকে ব্যবসায়ী ক্রেতারা যেই যেই আইটেমগুলো পছন্দ করবেন তা আলাদা করে পাইকারী মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।
ব্যবসায় রিস্ক: জুতার ব্যবসায় তেমন কোন রিস্ক নেই বললেই চলে। তবে এই ব্যবসা করার জন্য অবশ্যই রানিং পয়েন্ট হতে হবে। যদি দোকান রানিং পয়েন্টে না হয়, তাহলে পণ্যে জট বেধে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে জট পণ্যগুলো কম মূল্যে ফেরিওয়ালা ব্যবসায়ীদের কাছে সেল দিতে হয়। এক্ষেত্রে কিছুটা লসের সম্মুখিন হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
শিক্ষিত বেকারদের জন্য এই ব্যবসায় সম্ভাবনা: আমাদের দেশের বেকার সমস্যা চরমে। তাই বেকার যুবকেরা একটা সময় হতাশাগ্রস্থ হয়ে দেশের বাহিরে পাড়ি জমানোর কথা চিন্তা করেন। তাদের মধ্যে অনেকে উচ্চ মাধ্যমিক থেকে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেও বেকার সমস্যায় ভূগছেন। তারা যদি অল্প পুঁজি (আনুমানিক দুই থেকে তিন লাখ টাকা) নিয়ে এই ব্যবসা শুরু করে তাহলেও আস্তে আস্তে সাফল্যের পথে এগিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এখন দুই-তিন লাখ টাকা ব্যবস্থা করা কারো জন্য অসাধ্য হবেনা। যেখানে তারা ৫/৭ লাখ টাকা দিয়ে দেশের বাহিরে যাওয়ার চিন্তা করছেন, সেখানে তারা যদি এর থেকেও অনেক কম পুঁজি নিয়ে এই ব্যবসা শুরু করে, তবে সেটা তাদের জন্য সম্ভাবনার পথ তৈরি করতে পারে। আমি মনে করি, শুধুমাত্র জুতার ব্যবসাই নয়, বিদেশে যেতে যে পরিমাণ টাকা খরচ করতে হবে সেই পরিমাণ নিয়ে দেশে যেকোন ব্যবসা করলেই ভালো ফল পাওয়া যাবে।