জুলাই বিপ্লবের চেতনায় শুরু হতে যাচ্ছে ৫ম সিনেমাকিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব ২০২৪। “রক্তের ঋণে স্বাধীনতা, জাগ্রত হোক মানবতা” এই শ্লোগানে আগামী ১৮ ডিসেম্বর শুরু হচ্ছে এই উৎসব। দুই পর্বে এই চলচ্চিত্র উৎসব অনলাইন ও অফলাইনে অনুষ্ঠিত হবে।
অনলাইন অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১৮ ডিসেম্বর থেকে ২১ ডিসেম্বর ২০২৪। এই অধিবেশনে অনলাইনে চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। এতে বিভিন্ন সেমিনারে বিদেশী চলচ্চিত্র নির্মাতা ও কলাকুশলীরা অনলাইনে অংশ নেবেন। তবে এর উদ্বোধনী ও সমাপনী অধিবেশনে সরাসরি দুটি চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে বলে জানিয়েছেন সিনেমাকিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (সিআইএফএফ) এর প্রতিষ্ঠাতা ও উৎসব পরিচালক মনজুরুল ইসলাম মেঘ।
উৎসবের দ্বিতীয় অধিবেশন সরাসরি অনুষ্ঠিত হবে ২২ ফেব্রুয়ারি হতে ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫। এই অধিবেশনে বিদেশী অতিথিরা সরাসরি বাংলাদেশে উপস্থিত থাকবেন এবং চলচ্চিত্রের বিভিন্ন বিষয় ভিত্তিক কর্মশালা, সেমিনার ও মাষ্টারক্লাসে অংশ নেবেন। ইউরোপের দেশগুলির সাথে বাংলাদেশী চলচ্চিত্র বিনিময় বিষয়ক বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলেও উৎসব পরিচালক জানিয়েছেন।
এবারের চলচ্চিত্র উৎসবে ৬৮ টি দেশের প্রায় দুই শতাধিক চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হবে। এবারের অন্যতম আকর্ষন হিসেবে রয়েছে ২৬ টি দেশের ৫২ টি বিশ্ববিদ্যালয় ও চলচ্চিত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নির্মিত চলচ্চিত্র ও অংশগ্রহণে “ইন্সটিটিউট ফোকাস” সেশন।
গতকাল বিশ্ব মানবধিকার দিবসে ৫ম সিনেমাকিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের একটি পোস্টার উন্মোচন করা হয়েছে। পোস্টারে তুলে ধরা হয়েছে জুলাই ৩৬ বিপ্লবের রক্তাক্ত জমিন। পোস্টারে স্থান দেওয়া হয়েছে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাইদের স্কেচ। আন্দোলন চলাকালীন ভারতীয় চিত্রকর কৌশিক সরকার এই স্কেচ করেছিলেন।
উৎসব পরিচালক মনজুরুল ইসলাম মেঘ বলেন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশ তৈরী করেছেন তরুণ শিক্ষার্থীরা ও গণতন্ত্রকামী বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। অর্ন্তবর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করলেও দেশি-বিদেশী নানা ষড়যন্ত্র অব্যাহত আছে। চলচ্চিত্রের মাধ্যমে বহুদেশীয় সম্পর্ক স্থাপন এবং সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে তুলে ধরতে কাজ করে যাচ্ছে সিনেমাকিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব।
তিনি জানান, ৫ম সিনেমাকিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ৬৮টি দেশের চলচ্চিত্র বাছাই করা হয়েছে। আমেরিকার নিউ ইর্য়ক ফিল্ম একাডেমি, চায়নার বেইজিং ফিল্ম একাডেমি, রাশিয়ার মস্কো স্টেট ইন্সটিটিউট অফ কালচার, ভারতের সত্যজিৎ রায় ফিল্ম এন্ড টেলিভিশন ইন্সটিটিউট, কাতারের নর্দানইস্ট ইউনিভার্সিটি ইন কাতার, ইন্দোনেশিয়ার ইন্দোনেশিয়ান এডুকেশন ইউনির্ভাসিটিসহ ২৬ টি দেশের ৫২ টি বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণরা এই উৎসবে অংশ নেবে।
এই উৎসবের মাধ্যমে বাংলাদেশের তরুণ মেধাবীদের সাথে সারা পৃথিবীর তরুণদের একটি সেতু নির্মাণ হবে বলে আশা প্রকাশ করে মেঘ বলেন, বাংলাদেশের তরুণরা জুলাই ৩৬ বিপ্লবে একটি উজ্জল দৃষ্টান্ত রেখেছে। আমরা তরুণদের এই সাহসিকতা পৃথিবীর তরুণদের কাছে তুলে ধরতে চাই। আমরা বাংলাদেশের জুলাই ৩৬ বিপ্লবের গণহত্যা তুলে ধরে সারা পৃথিবীতে হানাহানি, যুদ্ধ ও নিসংসতা বন্ধ করে শান্তির আহ্বান জানাবো।
বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস উদ্ভাবিত তথ্যের উপর বেলজিয়ামের চলচ্চিত্র পরিচালক আনি ক্লার্ক ও মিশেল ভ্যান ডের ভেকেন পরিচালিত “এ ওয়ার্ল্ড অফ থ্রি জিরোস, জিরো নেট কার্বন ইমিশন, জিরো প্রভারটি, জিরো আনএমপ্লাইমেন্ট” উদ্বোধনী চলচ্চিত্র হিসেবে প্রদর্শিত হবে। এ চলচ্চিত্রের পরিচালকদ্বয় উৎসবে অংশগ্রহণ করে একটি মাষ্টার ক্লাস পরিচালনা করবেন।
এ উৎসবে চলচ্চিত্র প্রদর্শন ছাড়াও থাকবে “ফ্যাসিবাদের কবলে চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতি”, “মানবিক পৃথিবী প্রতিষ্ঠায় চলচ্চিত্রের ভূমিকা”, “জুলাই ৩৬ প্রেক্ষিত কালচারাল পলিটিক্স” শীর্ষক আন্তর্জাতিক সেমিনার। উৎসবের সমাপনী চলচ্চিত্র হিসেবে প্রদর্শিত হবে জুলাই ৩৬ গণহত্যার তথ্যচিত্র নির্ভর পূর্নদৈর্ঘ্য ডকুমেন্টারি চলচ্চিত্র “নেক্সট জেনারেশন লিডার”। (বাসস)