ঝিনাইদহে শিশুদের নিউমোনিয়া প্রকোপ, সেবা পেতে ভোগান্তি

ঝিনাইদহে শীতের আগেই বেড়েছে শিশুদের নিউমোনিয়া, জ্বরসহ শ্বাসতন্ত্রের রোগের প্রকোপ। প্রতিদিন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে গড়ে ৩০ থেকে ৩৫ জন শিশু ভর্তি হচ্ছে। হাসপাতালে শয্যা আর জনবল সংকটে বাড়তি রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসক ও নার্সরা।

মঙ্গলবার ঝিনাইদহ সদর হাসাপাতালের শিশু ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ৮ শয্যার বিপরীতে ভর্তি আছে ১১৫ জন শিশু। যাদের অধিকাংশই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। অন্য সময় হাসপাতালে গড়ে ৪০ থেকে ৫০ জন রোগী থাকলেও বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৩৫টি শিশু নতুন করে ভর্তি হচ্ছে। নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে জেলার অন্য হাসপাতালগুলোতেও। ৬ থেকে ১৮ মাস বয়সী শিশুরা বেশি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। শয্যার বিপরীতে কয়েকগুণ বেশি রোগীর সেবা দিচ্ছে, হিমশিম খাচ্ছে নার্সরাও।

সদর উপজেলার কমলাপুর গ্রামের লতিফ মিয়া বলেন, ‘আমি আজ ৮ দিন হাসপাতালে আমার ছাওয়ালকে (ছেলে) নিয়ে আইছি। প্রথমে ঠাণ্ডা আর কাশি হইছিল। হাসপাতালে আসার পর ডাক্তার বলছে ডাবল নিউমোনিয়া হয়ছে। কফ উঠাচ্ছি আর ঔষুধ খাওয়াচ্ছি। আল্লার রহমতে এখন একটু ভালো।’

শৈলকুপা উপজেলার কাঁচেরকোল গ্রাম থেকে আসা ২ মাস বয়সী রাবেয়াকে ভর্তি করা হয়েছে রবিবার বিকালে। কাল সকাল থেকে এখন তার শারীরিক অবস্থা কিছুটা ভালো। রাবেয়ার বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘কাল বিকালে আইচি। ডাক্তার এখনও আসিনি। রাতে মাত্র একজন নার্স আর আয়া ছিল। ওষুধ দিয়া হয়ছে। এখন বাচ্চা ভালো আছে।’

সদর উপজেলার কালুহাটি গ্রামের হাবিল বলেন, ‘এই হাসপাতালে প্রতিদিন একশ থেকে দেড়’শ রোগী থাকছে। কিন্তু একজন মাত্র ডাক্তার। এত রোগী একজন ডাক্তার কি করে চিকিৎসা দেবে। সেও তো মানুষ। হাসপাতালে ভর্তি রোগী ছাড়াও নিচে আবার আউটডোরে রোগী দেখতে হয়। এভাবে তো চিকিৎসা দেয়া যায় না। এই জন্য হাসপাতালে জরুরি আরও ডাক্তার আরা নার্স দরকার।’

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের শিশু ও নবজাতক রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, ‘ঋতু পরিবর্তনের কারণে শিশুরা বেশি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। হঠাৎ গরম আবার হঠাৎ ঠাণ্ডার কারণে এই সমস্যা হচ্ছে।’ অভিভাবকদের প্রতি তিনি বলেন, ‘ছোট বাচ্চাদের প্রতি বেশি খেয়াল রাখতে হবে। তাদের যেন শরীর না ঘামে বা অতিরিক্ত ঠাণ্ডা না লাগে। বুকের দুধ খাওয়ানোর পাশাপাশি শিশুদের সুষম খাবার দিতে হবে।’

হাসপাতালে চিকিৎসক সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘শিশু ওয়ার্ডের জন্য দুজন চিকিৎসক ছিল। কিছুদিন আগে একজন চিকিৎসক প্রশিক্ষণের জন্য চলে গেছে। আর একজন চিকিৎসক সেবা দিচ্ছেন। সেই সাথে রোগীর চাপ সামালাতে তাদেরও কষ্ট হচ্ছে।’ জনবল ও চিকিৎসকের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে দ্রুতই এ সমস্যা সমাধান করা হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। খবর-ইউএনবি

আজকের বাজার/আখনূর রহমান