টাকার অভাবে জাবিতে ভর্তি অনিশ্চিত চা-দোকানি শাকিলের

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে(জাবি)ভর্তির সুযোগ পেয়েও শুধু টাকার অভাবে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে চায়ের দোকানে কাজ করা মেধাবী ছাত্র শাকিল রানার। শাকিল লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার ভেলাবাড়ি গ্রামের ভূমিহীন হোটেল শ্রমিক মমিনুল ইসলামের ছেলে এবং আদিতমারী স্টোরপাড়া গ্রামের আব্দুস সাত্তারের নাতি।

স্থানীয়রা জানান, ভূমিহীন মমিনুল তার এক ছেলে ও এক মেয়ের সংসারের খরচ যোগাতে হোটেল শ্রমিকের কাজ করেন। আর্থিক অনটনের কারণে ছেলে শাকিলকে আদিতমারী স্টোরপাড়া গ্রামে তার নানার বাড়িতে রেখেছেন। ছোটবেলা থেকেই চা বিক্রেতা নানা আব্দুস সাত্তারের বাড়িতে থেকে নানার চায়ের দোকানে সহায়তার পাশাপাশি পড়াশোনা করছেন শাকিল। আর্থিক অনটনের কারণে বিভিন্ন সময়ে লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম হলেও অদম্য মেধাবী শাকিল শতবাধা অতিক্রম করে চালিয়ে আসছেন লেখাপড়া। প্রাথমিকের গণ্ডি পেরুতেই লেখাপড়া বন্ধের উপক্রম হলে প্রতিবেশীদের সহায়তায় চালিয়ে নেয় লেখাপড়ার খরচ।

আদিতমারী হাসপাতাল গেটে নানার চায়ের দোকানে কাজ করেই ২০১৭ সালে সরকারি আদিতমারী জিএস উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ ৪.০৯ নিয়ে পাস করেন শাকিল। পরে ভর্তি হন রংপুর সরকারি কলেজে। সেখানে টিউশনি করে ২০১৯ সালে মানবিক বিভাগে জিপিএ ৪.২৫ নিয়ে এইচএসসি পাস করেন তিনি। উচ্চশিক্ষা নিয়ে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দিতে আগ্রহী শাকিল দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৭২তম এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে(জাবি)২৮৩৩তম মেধাক্রমে উত্তীর্ণ হন। পরে জাবি’র ইতিহাস বিভাগে ভর্তির সুযোগ পান তিনি।

কিন্তু জাবিতে ভর্তি হওয়ার মতো টাকা শাকিলের নেই। জাবিতে ভর্তি ফি ৮ হাজারসহ আনুষঙ্গিক মিলে ২০ হাজার টাকা প্রয়োজন। ভর্তির টাকা যোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন নানা আব্দুস সাত্তারের চায়ের দোকানে শ্রমিক হিসেবে কাজ করা শাকিল। আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ভর্তির দিনক্ষণ নির্ধারণ হলেও এখনো যোগার হয়নি প্রয়োজনীয় টাকা। ফলে অর্থের অভাবে ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তার। এদিকে, নাতির ইচ্ছা পুরণে জাবি’র ভর্তির টাকা যোগাতে বিভিন্ন এনজিওতে ঋণ নিতে ছুটছেন নানা আব্দুস সাত্তার। সঞ্চয় ছাড়া কোনো এনজিও ঋণ না দেয়ায় হতাশ তিনি।

নানা আব্দুস সাত্তার বলেন,‘ভর্তির টাকা যোগাতে বিভিন্ন এনজিওতে গিয়েছি। কিন্তু সঞ্চয় না থাকায় কেউ ঋণ দেয়নি। এখন তার ভর্তির ২০ হাজার টাকা কোথায় পাই। এদিকে সময়ও বেশি নাই। ১২ ফেব্রুয়ারি ভর্তি হতে হবে।’ অদম্য মেধাবী শাকিল রানার প্রশ্ন, চা বিক্রেতা নরেন্দ্র মোদী যদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হতে পারে। আমি চা বিক্রির শ্রমিক হয়ে কেন প্রশাসনের ক্যাডার হতে পারব না?

‘ভর্তির টাকা কেউ ঋণ হিসেবে দিলেও আমি গ্রহণ করব এবং পরবর্তিতে তা পরিশোধ করব। আমি আমার লক্ষ্যে পৌঁছতে চাই। এজন্য বিত্তবানদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছি,’বলছিলেন শাকিল। শাকিলের প্রতিবেশী ভাদাই ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সম্পাদক ইকবাল হোসেন বলেন,‘খুব কষ্ট করে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে শাকিল। আর্থিক সহযোগিতা পেলে মেধাবী শাকিল তার লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’সূত্র-ইউএনবি

আজকের বাজার/আখনূর রহমান