দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে বাংলাদেশ দলের ব্যর্থতা আবারও স্পষ্ট করে তুলেছে দলে কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের প্রভাব খাটানোর নেতিবাচক ফলাফল। দলের ব্যর্থতার পেছনে অনেকেই দোষারোপ করছেন সাবেক এই শ্রীলঙ্কান ক্রিকেটারকে। এই দলে যোগ দিয়েছেন বিশিষ্ট ক্রিকেট সংগঠক খন্দকার জামিল উদ্দিনও।
সম্প্রতি অনলাইন পোর্টাল ঢাকাটাইমস-এ লেখা কলামে হাথুরুসিংহের বিরুদ্ধে কথা বলেন তিনি।
বিশিষ্ট এই ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব তার কলামে বলেন, ‘কোচ তো সুদূরপ্রসারী চিন্তা করবেন না। তার চিন্তা এটা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। যে সময় পর্যন্ত তার চাকরি আছে। আর সেটাই করছেন আমাদের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। কেন তাকে সর্বময় ক্ষমতা দিয়ে দেওয়া হয়েছে? তিনি যা চাইবেন, সেটা কেন হবে? কোচ ২০১৯ সালে চলে যাবেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট তো এদেশের সম্পদ।’
তিনি বলেন, ‘কোচ যা করছেন তা মেনে নেওয়ার মতো নয়। কেন অধিনায়কের ক্ষমতা থাকবে না? একাদশ নির্বাচনে কেন এতো পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হচ্ছে? তার কারণে মুমিনুলের মতো প্রতিভা আজ কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে। ৪৬ এর উপর যার ব্যাটিং গড় তাকে কেন বাদ দেওয়া হয়? কোন যোগ্যতায় লিটন দাসকে বারবার একাদশে নেওয়া হচ্ছে? নিউজিল্যান্ড সফরে আবিষ্কার করা হলো লেগ স্পিনার তানভীর হায়দারকে। কোথায় এখন কোচের সেই পছন্দের তানভীর? যুবায়ের হোসেন লিখনওবা কোথায়?’
কোচ ক্রিকেটারদের মনোবল ধ্বংস করছেন জানিয়ে খন্দকার জামিল উদ্দিন বলেন, ‘একজন ক্রিকেটারের আসল জিনিস হলো মনোবল। মুমিনুলের মনোবল ধ্বংস করার জন্য যা যা করার তার সবাই করেছেন হাথুরুসিংহে। আমি মনে করি, সাব্বির, ইমরুল ও সৌম্যর ক্যারিয়ারও শেষ করে দিচ্ছেন কোচ। তামিমের সঙ্গে উদ্বোধনী জুটিতে অনেক সাফল্য আছে ইমরুলের। তা সত্বেও তাকে ওয়ান ডাউনে নামিয়ে সৌম্যকে দিয়ে ওপেন করানো হচ্ছে। কোচ সবচেয়ে বড় ভুল করেছেন সৌম্য ও সাব্বিরকে দিয়ে এত তাড়াতাড়ি টেস্ট খেলিয়ে। তারা আসলে সীমিত ওভার ফরম্যাটের খেলোয়াড়। টেস্ট খেলার মতো পরিপক্কতা এখনও তাদের মধ্যে গড়ে ওঠেনি। অথচ তাদের বারবার ৫ দিনের ম্যাচে খেলিয়ে আত্মবিশ্বাস জিনিসটা ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে। তারা টেস্টে ব্যর্থ হচ্ছেন। আর এই ব্যর্থতার চাপ পড়ছে ওয়ানডে ফরম্যাটেও। এখানেও তারা রান পাচ্ছেন না। কেন তিনি টেস্ট ও ওয়ানডের জন্য আলাদা খেলোয়াড় বাছাই করতে পারছেন না, তা আমার বুঝে আসে না।'
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হওয়াকে ‘ভয়াবহ লজ্জার’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যা হলো বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য তা ভয়াবহ লজ্জার। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ফলোয়ার হিসেবে আমি খুবই লজ্জিত এবং অপমানিতও বটে। দেশের বাইরে হারতেই পারে দল, তাই বলে এভাবে? দক্ষিণ আফ্রিকা যখন ব্যাট করে তখন মনে হয়েছে উইকেট কতই না ব্যাটিং সহায়ক! অথচ বাংলাদেশ ব্যাট করলে মনে হয় এর চেয়ে বোলিং উইকেট আর হয়ই না! বোলাররা ওভার প্রতি ৮/৯ করে রান দিচ্ছেন। ব্যাটসম্যানরা তো দাঁড়াতেই পারছেন না। এই পর্যায়ে এসে দলের এমন অবস্থা মেনে নেওয়া যায় না।‘
এমন পারফরমেন্সের পর খন্দকার জামিল উদ্দিন প্রশ্ন তুলেছেন দলের উন্নতি নিয়েও। তাঁর ভাষায়, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেটের আসলে কতটুকু উন্নতি হয়েছে? দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে বাজে ফল বড়সড় এ প্রশ্নটা জুড়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের বড়ই বিব্রতকর এই সফর। এই ফল মেনে নেওয়ার মতো নয়। এই দায় কার? কেন সাসটেইন্যাবল ডেভেলপমেন্টের জন্য সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করা হয়নি। উন্নতি হতে হবে সাসটেইন্যাবল। দেশের মাটিতে স্পিন, টার্নিং উইকেট বানিয়ে জিতলাম, আর দেশের বাইরে মুখ থুবড়ে পড়লাম-এটা আসলে উন্নতি নয়। বরং এটা বিব্রতকর। দেশের বাইরে কীভাবে ভালো করবে দল- তার জন্য কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ হয়েছে বলে মনে হয় না।’
আজকের বাজার ডেস্ক: ২৩ অক্টোবর ২০১৭