যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে মিশর বা জর্ডানের মতো ‘নিরাপদ’ অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার তার ইচ্ছে পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘খুব শিগগির তিনি ওয়াশিংটনে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিননেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন।’
ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী হামাসের মধ্যে দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে গাজাকে ‘ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত’ হওয়ায় ডোনাল্ড ট্রাম্প শনিবার গাজাকে ‘পরিস্কার’ করার ধারনা দিয়েছিলেন।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি আজ এই খবর জানিয়েছে।
এই মন্তব্যগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে ট্রাম্প সোমবার সন্ধায় এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি ‘তাদের এমন একটি এলাকায় বাসবাস করাতে চান যেখানে থাকবে না কোনো বাধা-বিঘ্ন, সহিংসতা, বিদ্রোহ-বিপ্লব।’
তিনি বলেছেন, ‘আপনি কী জানেন, যখন আপনি গাজার দিকে তাকাবেন, তখন আপনার কাছে মনে হবে এটি অনেক বছর ধরে নরকে পরিণত হয়েছিল এবং এর সাথে সব সময় সহিংসতাও জড়িত ছিল।’
দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের অর্থ কী তা নিয়ে চাপ দেওয়া হলে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি বলেছেন, ‘খুব শিগগির’ নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠক করবেন।’
ট্রাম্প মিশরের প্রেসিডেন্ট আল-সিসি সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমি চাই তিনি কিছু গাজাবাসীকে নিবেন।’ কারণ, ‘আমরা তাদের অনেক সাহায্য করেছি এবং আমি নিশ্চিত তিনি আমাদের সাহায্য করবেন।’
আমার ধারনা জর্ডানের বাদশাহও কিছু গাজাবাসীকে আশ্রয় দিবেন।
এদিকে গাজাবাসীকে আশ্রয় দিতে ট্রাম্পের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে জর্ডান ও মিশরের সরকার প্রধানরা।
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার ফিলিস্তিনিদের জর্ডান ও মিশরের আশ্রয় দেয়া উচিত বলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে আহ্বান জানিয়েছেন তা প্রত্যাখ্যান করেছে দেশ দু’টি।
একই সঙ্গে ট্রাম্পের এই প্রস্তাব নাকচ করেছে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস।
শনিবার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বিধ্বস্ত গাজা থেকে জর্ডান ও মিশরের আরো ফিলিস্তিনিদের দায়িত্ব নেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন।
এটি কি অস্থায়ী নাকি দীর্ঘ মেয়াদী সমাধান, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন যে কোনোটি হাতে পারে।
জর্ডান এরই মধ্যে কয়েক লাখ ফিলিস্তিনিকে আশ্রয় দিয়েছে। মিশরেও বাস করছেন কয়েক হাজার ফিলিস্তিনি। নতুন করে গাজার ফিলিস্তিনিদের স্থানান্তরের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছে জর্ডান ও মিশরসহ অন্যান্য আরব দেশ।
গাজা ভূখণ্ডের ফিলিস্তিনিরা ভবিষ্যতে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের অংশ হিসেবেও নিজেদের দেখতে চায় বলে এএফপি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এদিকে হামাসের একজন কর্মকর্তা আশংকা প্রকাশ করেছেন যে, ট্রাম্পের এই প্রস্তাবের মাধ্যমে দীর্ঘদিন থেকে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের তাদের বাড়িঘর থেকে স্থায়ীভাবে তাড়িয়ে দেয়া হবে।
হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য বাসেম নাইম এএফপি’কে বলেছেন, ‘ফিলিস্তিনিরা এমন কোনও প্রস্তাব বা সমাধান গ্রহণ করবে না। এমনকি যদি এই ধরনের প্রস্তাবও হয় যে গাজাকে পুনর্গঠন করার আড়ালে ভালো উদ্দেশ্য রয়েছে যেমনটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রস্তাবে ঘোষণা করা হয়েছে।’
আরেক হামাস কর্মকর্তা সামি আবু জুহরি ট্রাম্পকে তার পূর্বসূরি জো বাইডেনের ব্যর্থ চেষ্টা বা ধারণাগুলোর পুনরাবৃত্তি না করার আহ্বান জানিয়েছেন।
সামি বলেন, ‘গাজার মানুষ অসংখ্য মৃত্যুর যন্ত্রণা সহ্য করেছে এবং তারা কোনো কিছুর বিনিময়ে তাদের মাতৃভূমি ত্যাগ করবেন না।’
জর্ডানও ট্রাম্পের পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সাফাদি সাংবাদিকদের বলেছেন, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের যেকোনো স্থানচ্যুতির বিরুদ্ধে রয়েছে তারা। এ বিষয়ে তাদের অবস্থান দৃঢ় এবং অটল।
মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকেও একই কথা বলা হয়েছে। দেশটি জানিয়েছে, ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূমি থেকে যেকোনো ধরনের উচ্ছেদকে তারা স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করে। তা সে স্বল্পমেয়াদী বা দীর্ঘমেয়াদী যাই হোক না কেন।