ঠাকুরগাঁওয়ে তেঁতো করলা চাষে কৃষকদের মুখে মিষ্টি হাসি

জেলায় করলা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন কৃষকরা। চলতি মৌসুমে জেলায় গতবারের তুলনায় করলার ফলনও হয়েছে দ্বিগুণ। অল্প সময়ে কম পুঁজিতে বেশি লাভ হয় বলেই তারা করলা চাষে আগ্রহী হয়েছেন। পাশাপাশি এবার চাষিরা দামও পাচ্ছেন ভালো। ফলে করলা তেঁতো হলেও এর ফলনে হাসি ফুটেছে ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকদের মুখে।
এ জেলায় উৎপাদিত করলা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলায়। এ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও এ জেলার করলা রফতানি হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সদর উপজেলার রাজাগাঁও, আসাননগর, চাপাতি, রাজারামপুর খড়িবাড়ী, দক্ষিণ বঠিনা, উত্তর বঠিনা, ঝলঝলি, ফরিদপুর, বড়দেশ^রী, ধর্মপুর, বোয়ালিয়া চোপড়াপাড়াসহ রুহিয়ার বিভিন্ন স্থানে প্রায় ২০০ চাষি করলার আবাদ করছেন। সাধারণত বছরে এক জমিতেই দুবার করলা চাষ করা যায় বলে জানান চাষিরা।
রাণীশংকৈল উপজেলার করলা চাষি মোহন কুমার বলেন, গত কয়েক বছরের মতো এবারও করলা চাষে সফল হয়েছি। নেকমরদ, রাণীশংকৈল বাজার থেকে প্রতিদিন প্রায় ১০০-১৫০ টন করলা সারা দেশে সরবরাহ করা হয়।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা ডাঙ্গী এলাকার আরেক কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি ১৫ বছর যাবত সবজি চাষ করছি। করলা চষে ভালো ফলন ও অনেক লাভ হয়। এবার ৩৬ শতক জমিতে করলা চাষ করেছি। এতে প্রায় ৩০ হাজার টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। এবছর ৬০-৭০ হাজার টাকার করলা বিক্রি করতে পারবো। করলা পাইকারি ৩৫-৪০ টাকা এবং খুচরা ৫০-৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
সদর উপজেলার পাইকারি সবজি ব্যবসায়ী হামিদুর রহমান, মসলেম মিঞাসহ অনেকে জানান, জেলার বাসিন্দাদের চাহিদা মেটাতে কয়েক বছর আগেও অন্য জেলা থেকে করলা আনতে হতো। কয়েক বছর ধরে এ জেলার উৎপাদিত করলাই বিক্রি হচ্ছে বাজারে। শুরুতে প্রতি কেজি করলা ৭০ থেকে ৮০ কিংবা ১০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫০ টাকায়। পাইকারি বাজারে প্রতি মণ করলা বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকায়। শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড বাজার, রোড বাজার ও কালিবাড়ী বাজারসহ বিভিন্ন বাজারে বিক্রি হচ্ছে এ করলা।
করলা কিনতে আসা ঢাকার কাওরান বাজারের সবজি ব্যবসায়ী করিম হোসেন ও আকবর আলী বলেন, ঠাকুরগাঁও জেলাসহ উত্তরের এখানকার করলার গুনগত মান খুব ভালো। এখাকার করলা ঢাকায় সরবরাহ করে ভালোই লাভ হচ্ছে বলে অনেক বছর যাবত এখান থেকে করলা কিনে নিয়ে যাচ্ছি।
ঠাকুরগাঁও কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, আগস্ট থেকে অক্টোবর ও অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসে জমিতে দুবার করলা চাষ করা যায়। সাধারণত রোপণের ৪০-৫০ দিনের মধ্যে ফলন পাওয়া যায়। মাত্র দেড় মাসে ফলন পাওয়া যায় বলে এ ফসলের জনপ্রিয়তা বাড়ছে চাষিদের মধ্যে। তাই এ জেলায় করলা চাষ দিন-দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। করলা চাষে ঝুঁকেছেন চাষিরা। অল্প সময়ে কম পুঁজিতে বেশি লাভ হয় বলেই তারা আগ্রহী হয়েছেন করলা চাষে। চলতি মৌসুমে জেলায় এবার গতবারের তুলনায় করলার ফলনও দ্বিগুণ হয়েছে। পাশাপাশি এবার দামও ভালো পেয়েছেন চাষিরা। চাষিদের কাছ থেকে সংগৃহিত করলা এ অঞ্চলের সবজির স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম বরিশালসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে।
ঠাকুরগাঁওয়ের বড়দেশ^রী গ্রামের বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদকপ্রাপ্ত ও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী নিরাপদ কৃষি খামারের করলা বাজারজাত শুরু হয়েছে। পদকপ্রাপ্ত মেহেদী হাসান উল্লাহ বলেন, চার-পাঁচ বছর ধরে করলা চাষ করে লাভবান হচ্ছি। আমার দেখাদেখি গ্রামের অন্য চাষিরাও করলা চাষে ঝুঁকছেন। তিনি জানান, করলা এমন একটি স্বল্প সময়ের সবজি যাতে পরিশ্রম ও খরচ দুটোই কম। অথচ অন্যান্য সবজির তুলানায় অনেক বেশি দাম পাওয়া যায়। বেশি ভালো ফলন হলে ও বাজার ভালো পাওয়া গেলে অনেক লাভবান হয় কৃষকরা। সে কারণে এই ফাড়াবাড়ি  বদেশ^রী এলাকাসহ ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা করলা চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষ্ণ রায় বলেন, সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ২৯০ হেক্টর জমিতে করলার চাষ হয়েছে। পানি জমে না এমন উঁচু-মাঝারি জমিতে করলার ভালো চাষ হয়। কৃষি বিভাগ সব ধরনের সহযোগীতা ও পরামর্শ দিয়ে চাষিদের পাশে আছে।
ঠাকুরগাঁও জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ডা. আবদুল জলিল বলেন, চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ৬৮৭ হেক্টর জমিতে করলা চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ফলন হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার কেজি। এবার ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় আগামী দিনে এর চাষ আরও বাড়বে বলে আশা করছি। এর ফলন আরও ভালো করার লক্ষ্যে উপজেলা  কৃষি কর্মকর্তারা চাষিদের প্রয়োজনীয় সহায়তাসহ পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।

সূত্র – বাসস