পদ্মাসেতুর প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্যদিয়ে অবশেষে ডানা মেলতে শুরু করেছে স্বপ্নের পদ্মাসেতু। ৩০ সেপ্টেম্বর শনিবার সকাল আটটার দিকে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর ভাসমান ক্রেনের সাহায্যে স্প্যানটি বসানো হয়। ফলে এখন থেকে নিজের রূপ পেতে থাকবে পদ্মা সেতু। এমন আরও ৪১ টি স্প্যান বসানো হলে, শেষ হবে পুরো সেতুর কাজ।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের জনসংযোগ কর্মকর্তা শেখ ওয়ালিদ জানান, সকাল আটটার দিকে পিলারের ওপর তিন হাজার ২০০ টন ওজনের একটি স্প্যান বসানো হয়েছে। সম্পূর্ণভাবে স্প্যানটি বসাতে আরো সময় লাগবে। এখন পর্যন্ত পদ্মা সেতু প্রকল্পের সার্বিক কাজের অগ্রগতি ৪৭ শতাংশ হয়েছে বলেও জানান তিনি। প্রথম দিকে স্প্যানের রং সোনালি হওয়ার কথা থাকলেও, এখন তা ধূসর করা হয়েছে। ফলে পদ্মা সেতুটি দেখতে সোনালি রঙের না হয়ে ধূসর রঙের হবে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের প্রকৌশলী সূত্র জানা যায়, মাওয়া প্রান্ত থেকে ১৫০ মিটার দীর্ঘ স্প্যানটি ভাসমান ক্রেনে করে জাজিরা প্রান্তে আনা হয়। সুপার স্ট্রাকচারটি বসানোর জন্য শুক্রবার বেয়ারিংয়ের কাজ করা হয়। বেয়ারিং সেতুর ভূকম্পন রোধ করে এবং ভারসাম্য রক্ষায় কাজ করে থাকে। পিলারের সাটারিং খোলা ও অন্যান্য ফিনিশিংযের কাজও শেষ। কংক্রিটের শক্তি ৫০ মেগা প্যাসকেল অর্জন হয়ে থাকলে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারে শীর্ষে বসানো সুপার স্ট্রাকচার স্প্যান, তিন হাজার ২০০ টন ওজনের।
প্রকল্পের জ্যেষ্ঠ জনসংযোগ কর্মকর্তা নাসির টিপু জানান, অক্টোবরেই আরও চারটি স্প্যান বসানো হবে। প্রধানমন্ত্রী দেশে ফিরলে তিনি সুপার স্ট্রাকচার স্থাপন কাজ পরিদর্শন করবেন।
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, আগস্ট, ২০১৭ পর্যন্ত পদ্মাসেতুর মোট ৪৬.৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুতে ৪২টি পিলার থাকবে।
পদ্মাসেতুর স্প্যান বুধবার মাওয়া থেকে জাজিরা এসে পৌঁছায়। স্প্যানটি এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে, যার নিচের অংশ দিয়ে ট্রেন এবং উপরের অংশ দিয়ে সড়ক পথের যানবাহন চলাচল করবে। আর এর মধ্যদিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ দিনের জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটতে যাচ্ছে।
৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ যাবৎ দেশের সবচেয়ে বড় এ প্রকল্পের নির্মাণকাজ ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে ২য় আরডিপিপি অনুযায়ী নির্মাণ ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা।
সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু। এতে মোট ৪২টি পিলার থাকবে, যার ৪০টি নির্মিত হচ্ছে নদীতে এবং দুটি নদীর তীরে।
পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, গত আগস্ট মাস পর্যন্ত এই সেতুর ৪৬.৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্যদিয়ে সরকার প্রতিশ্রুত সময়ের মধ্যে পদ্মা সেতু জনগণের জন্য খুলে দেয়া সম্ভব হবে বলে আমরা আশাবাদী।
পদ্মা সেতু প্রকল্প সারা বিশ্বের কাছে একটি মাইলফলক উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কমর্রত প্রকৌশলীদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও মেধায় পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হওয়ার পথে। কমর্রত সবাই এর অংশ হিসাবে থাকতে পেরে গর্বিত মনে করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সময় ও সুযোগ হলে, পিলারের ওপর সুপার স্ট্রাকচার স্থাপনে দৃশ্যমান পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে জাজিরা প্রান্তে আসবেন বলে আশাবাদী।
সেতু প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কয়েকজন প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত রোববার মাওয়া থেকে ৭বি স্প্যানটি ক্রেনে করে, জাজিরায় আনা হয়। প্রায় ১৫০মিটার স্প্যানটি শুক্রবার ৩৫ নম্বর পিয়ারের সামনে ছিল।
পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। ভায়াডাক্টসহ দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে ৯ কিলোমিটার। দ্বিতল এই সেতুটি হবে স্টিলের। পদ্মা সেতুতে কংক্রিটের ৪২টি খুঁটি বা পিলার হবে। আর এসব খুঁটির নিচে ২৭১টি পাইল বসবে।
পদ্মা সেতুর নিচের তলার ভেতর দিয়ে চলবে রেল। আর যানবাহন ওপরে পিচঢালা পথ দিয়ে চলবে। সরকার ২০১৮ সালের নভেম্বরে কাজ শেষে সেতুতে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
মূল সেতুর কাজ করছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। আর নদীশাসনের কাজে নিয়োজিত আছে চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন। পদ্মা সেতুর কাজ ৫ ভাগে, ভাগ করা হয়েছে। মূল সেতু ও নদীশাসন হচ্ছে বড় দুটি কাজ। এর বাইরে দুই পারে সংযোগ সড়ক ও টোলপ্লাজা নির্মাণ এবং অফিস, বাসাসহ নির্মাণ অবকাঠামোর কাজ তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। একটি সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতু প্রকল্পের এ পর্যন্ত ৪৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।
সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার পদ্মা সেতু।
আজকের বাজার:এলকে/এলকে/ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭