ডিজিটাল মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তি বিতরণে সাফল্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ও রূপালী ব্যাংকের মধ্যে চুক্তি

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের মায়েদের হাতে উপবৃত্তি পৌঁছে দ্ওেয়ার প্রকল্পে ধারাবাহিক সফলতা অর্জন করেছে রূপালী ব্যাংক লিমিটেড। তাই, চলতি বছর রাষ্ট্রায়ত্ত এই প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

চুক্তি সাক্ষর অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান, গত তিন বছর ধরে ’মায়ের হাসি’ নামে এই মোবাইল ব্যাংকিং প্রকল্পটি পরিচালনা করছে রূপালী ব্যাংক। এই প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৭৮ লক্ষ মায়ের মোবাইলে ব্যাংক একাউন্ট খোলা হয়েছে এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে উপবৃত্তির টাকা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে একাউন্টগুলোতে। নিজস্ব ব্যাংক একাউন্ট থাকায় এ উদ্যোগ নারীর ক্ষমতায়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। আর উপবৃত্তির টাকা পেতে আগের মতো সংসারের কাজ ফেলে দূরের বিতরণ কেন্দ্রে যেতে হচ্ছে না মায়েদের।

এই চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন, এমপি এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম -আল হোসেন। মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে মো. বদিয়ার রহমান, পরিচালক (যুগ্ম সচিব) এবং রূপালী ব্যাংকের পক্ষ থেকে মো. জাহাঙ্গীর আলম, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক চুক্তিটি স্বাক্ষর করেন।

এছাড়াও উক্ত অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক ড. আ ফ ম মঞ্জুর কাদির, এনডিসি; প্রকল্প পরিচালক মো. ইউসুফ আলী (যুগ্ম সচিব); রূপালী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ; শিওরক্যাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. শাহাদাত খান এবং প্রধান ব্যবসায় কর্মকর্তা মো. আবু তালেবসহ অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, “মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে সারাদেশে প্রাথমিক শিক্ষা উপবৃত্তি বিতরণ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ডিজিটালাইজেশন প্রকল্প। ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ‘মায়ের হাসি’ নামের এই উদ্যোগকে সর্বোচ্চ গুরূত্ব দিয়ে থাকেন। এর মাধ্যমে আমরা প্রতি বছর সারা দেশে ১ কোটি মায়েদের কাছে উপবৃত্তির টাকা পৌঁছে দিচ্ছি।”
মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেন,“এই প্রকল্পের মাধ্যমে সারাদেশে ৬৭ হাজার স্কুলকে ডিজিটালাইজেশনে অভ্যস্থ করতে পেরেছি। এখন আমরা প্রতি তিন মাসে সবগুলো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে তথ্য এবং উপাত্ত সংগ্রহ করছি, যা প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।”

তাছাড়া, রূপালী ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, “সরকারের সবচেয়ে বড় ডিজিটাল পেমেন্ট সেবায় অংশগ্রহণ করতে পেরে রূপালী ব্যাংক অত্যন্ত গর্বিত। সারাদেশে প্রায় ১ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ সরকারের আর্থিক সুবিধা পায় এবং সর্ববৃহৎ এই প্রকল্পে সুবিধাভোগীর সংখ্যা ১ কোটি। আমরা অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পগুলোর ডিজিটালাইজেশনে একইভাবে সরকারের সাথে কাজ করতে চাই।”

শিওরক্যাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. শাহাদাত খান বলেন, “এই প্রকল্পের জন্যে আমরা একটি কাস্টমাইজড সফটওয়্যার এবং ইন্টারনেট পোর্টাল তৈরি করেছি, যা সারাদেশে ব্যবহার হচ্ছে। প্রকল্পের প্রয়োজন অনুযায়ী এই সফটওয়্যার তৈরি করেছে এ দেশের কিছু মেধাবী তরুণ-তরুণী, যা আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের।”

উল্লেখ্য, রূপালী ব্যাংক শিওরক্যাশ গত তিন বছর ধরে সার্থকভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আসছে। এর সুষ্ঠু বাস্তবায়নের প্রশংসা করেছে CGAP (the Consultative Group to Assist the Poor), জাপানের অর্থনৈতিক ম্যাগাজিন নিক্কেই বিজনেস (Nikkei Business) এবং সিঙ্গাপুর ম্যানেজমেন্ট ইউনিভার্সিটি ম্যাগাজিনের মতো আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোও।

দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে একমাত্র রূপালী ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে। রূপালী ব্যাংক শিওরক্যাশ একটি পূর্ণাঙ্গ মোবাইল ব্যাংকিং এবং পেমেন্ট সেবা- যার মাধ্যমে প্রায় ২ কোটি গ্রাহক সারাদেশে টাকা পাঠাতে, বিল দিতে, মোবাইল রিচার্জ করতে এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বেতন দিতে পারছেন। এছাড়াও দেশব্যাপী ১ লক্ষ ৮০ হাজার্রেও বেশি এজেন্টের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করতে পারছেন গ্রাহকেরা।