ডুয়েটে ৮ শিক্ষার্থীর শাস্তি, শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি

পর্ব সমাপনী পরীক্ষা পেছানোর দাবিতে গত ৩১ অক্টোবর কয়েকজন শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে আন্দোলনে নামেন। এ নিয়ে শিক্ষকদের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ক্যাম্পাসে ব্যাপক ভাঙচুর চালালে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেন। ঘটনা তদন্তে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি  বুধবার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। ওইদিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শৃঙ্খলা কমিটির সভায় ৮ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার ও আর্থিক জরিমানা করা হয়, যা পরদিন আদেশ জারি করে কর্তৃপক্ষ।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে একাধিক সূত্র জানায়, তদন্ত কমিটি শিক্ষার্থীদের দায়ী করার পাশাপাশি ৪ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নিতে পারার ব্যার্থতার কথাও উল্লেখ করেছেন তদন্ত প্রতিবেদনে। এদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের একজন, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও কৌশল বিভাগের দু’জন এবং বস্ত্রকৌশল বিভাগের একজন অধ্যাপক রয়েছেন। তদন্ত কমিটির কয়েকজন সদস্য মনে করেন, এই ৪ জন শিক্ষক আন্তরিক ও দায়িত্ব পালনে দক্ষ হলে ওইদিনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি অনেকটাই এড়ানো সম্ভব হতো। কমিটি তাদের মতামত প্রতিবেদনে উল্লেখও করেছেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোনরকম ব্যবস্থা নেয়নি কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, যাদের নাম প্রতিবেদনে এসেছে তারা ওই ঘটনার সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িত এমন না। তবে তারা চাইলে পরিস্থিতি অনেকখানি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারতেন। এখানে সমন্বয়হীনতার অভাব ছিল। তাছাড়া তিনজন শিক্ষক ছাত্রদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি দেওয়ার কারণে পরিস্থিতির অবনতি হয়।
তবে কেউ কেউ মনে করেন, ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে ওই ৪ শিক্ষককে দায়ী করা হয়েছে। আবার অনেক শিক্ষকই মনে করেন, ব্যক্তিগত আক্রোশ যেমন আছে আবার ঘটনাও সত্যি। ঝোপ বুঝে কোপ মারার মত অবস্থা হয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে ওই তদন্ত কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. নঈম শেখ বলেন, আমরা আমাদের তদন্ত প্রতিবেদন কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়েছি। এটা অত্যন্ত গোপনীয় বিষয়, সুতরাং এ বিষয়ে কিছু বলা যাবে না।
প্রতিবেদনে কোন কোন শিক্ষকের নাম এসেছে তা জানতে চাইলে তিনি খানিকটা উত্তেজিত হয়ে ফোন কেটে দেন।
ওই ঘটনায় যন্ত্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আব্দুর রহমানকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩ বছরের জন্য বহিস্কার এবং ৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই শাস্তি দেওয়া হয়েছে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের সাদ্দাম হোসেন, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও কৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের রুহুল আমিন, যন্ত্রকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের মো. রবিউল ইসলাম এবং পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. সোলাইমানকে।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যাদের দুই বছরের জন্য বহিষ্কার এবং ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে তারা হলেন, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. সুমন মিয়া, পুরকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের তুষার চন্দ্র বর্মন এবং তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. হুমায়ন কবীর।
শাস্তিপ্রাপ্ত সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমগ্র শিক্ষাজীবনের জন্য আবাসিক হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের এই শাস্তির কথা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর চারিত্রিক সনদে উল্লেখ থাকবে। তবে শাস্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলে আপিল করতে পারবেন। তবে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকা ক্যাম্পাস কবে খুলবে তা এখনও অনিশ্চিত।
এদিকে শিক্ষার্থীদের শাস্তির মাত্রা নিয়ে ক্যাম্পাসে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। একাধিক শিক্ষার্থী মনে করেন, শাস্তির দরকার ছিল। কিন্তু শুধু ভাঙচুরের ঘটনায় এত বেশি শাস্তি না দিলেও পারত প্রশাসন। আবার কেউ মনে করেন এটা একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না করতে পারে।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলাউদ্দীন বলেন, শিক্ষার্থীরা অনেক বেশি ভাংচুর করেছে তাই এই শাস্তি দেওয়া হয়েছে। তবে তাদের আপিল করার সুযোগ রয়েছে। কেউ আপিল করলে সেটা বিবেচনা করা হবে।
তদন্ত প্রতিবেদনে কয়েকজন শিক্ষকের দায়িত্ব পালনে অপরিপক্কতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যাদের নাম এসেছে তাদের সঙ্গে কথা বলা হবে। সবকিছু বিচার বিশ্লেষণ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আজকের বাজার: এনএল/ সালি, ০৯ ডিসেম্বর ২০১৭