ঢাকা ‍উত্তরে খালেদার প্রচারে বাধা নেই: সিইসি

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে উপ নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রচারে কোনো আইনি বাধা নেই বলে জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা।

সিইসি বলেন, ‘প্রতিবন্ধকতার প্রশ্নই উঠে না; উনি (খালেদা জিয়া) বা উনার মতো কেউ প্রচারে গেলে কোনো বাধা দেওয়া হবে না। আমাদের পক্ষ থেকে কোনো বাধা নেই।’

মঙ্গলবার ৯ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদে এবং ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণে ৩৬টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন সিইসি।

২০১৫ সালে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ঢাকা উত্তরে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ঢাকা দক্ষিণে মির্জা আব্বাসের পক্ষে প্রচারে নেমে হামলার শিকার হয়েছিলেন খালেদা জিয়া।

সে সময় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিএনপি নেত্রীর এই প্রচারকে নির্বাচনী আইনের লংঘন হিসেবে অভিযোগ করা হয়েছিল।

সিটি করপোরেশন বা অন্য কোনো স্থানীয় নির্বাচনে সংসদ সদস্য বা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী বা মন্ত্রী মর্যাদার কারও প্রচারে আইনি বাঁধা আছে। কিন্তু ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর খালেদা জিয়ার সরকারি কোনো প্রটোকল নেই। ফলে তার আইনি কোনো বাধা নেই।

এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রার্থী ঘোষণা না করলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলামের নাম এসেছে গণমাধ্যমে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কাছ থেকে নির্দেশ পেয়ে তিনি এরই মধ্যে জনসংযোগে নেমে গেছেন। আর বিএনপি ২০১৫ সালের মতোই তাবিথ আউয়ালকে প্রার্থী করবে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের নেতারা।

সিইসি বলেন, ভোটের প্রচারে নিরাপত্তার বিষয়ে কঠোর অবস্থানে থাকবে নির্বাচন কমিশন। এ জন্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী, নির্বাহী ও বিচারিক হাকিমসহ সবার তৎপরতাও বেশি থাকবে।

ভোট উৎসবমুখর হবে বলে আশার কথা জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ভোটকেন্দ্রে কোনো গণমাধ্যমকে বাধাও দেওয়া হবে না। তবে সাংবাদিক, পর্যবেক্ষকদেরকে নীতিমালা মেনেই কাজ করতে হবে।

২০১৫ সালের মতো ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটের দিন মাঝপথে কোনো প্রার্থীর নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার ঘটনা এবার ঘটবে না বলে আশাবাদী প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা। তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত সবাই এই ভোটে থাকবে বলে আশা করছেন তিনি।

২০১৫ সালের ১৮ এপ্রিলের ভোটে বেলা ১২টার দিকেই কারচুপির অভিযোগে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী তাবিথ আউয়াল নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। সিইসি আশা করছেন, তাদের তত্ত্বাবধানে এবারের নির্বাচনে সে পরিস্থিতি তৈরি হবে না।

সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে ইসি আপসহীন মন্তব্য করে সিইসি বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে কোনো কিছুর সঙ্গে সমঝোতা হবে না। অবশ্যই আমরা আশা করব সব দলই নির্বাচনে অংশ নেবে এবং শেষ পর্যন্ত থাকবে।’

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কিছু শর্ত আছে জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘একটা ভালো নির্বাচনের জন্য ভোটারদের থাকতে হবে, রাজনৈতির দল যারা অংশ নেবে তাদের থাকতে হবে, প্রার্থীদের থাকতে হবে, সকলের থাকতে হবে। সকলে মিলেই একটা ভালো নির্বাচন করা সম্ভব। আমি মনে করি তাদের সকলেই সহযোগিতা থাকবে।’

রাজধানীতে নির্বাচনকে কমিশন আমরা আলাদাভাবে দেখছে জানিয়ে সিইসি বলেন, ‘এ নির্বাচন অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণভাবে। রাজধানীতে এ নির্বাচন করা ইসির জন্য চ্যালেঞ্জ।’

ভোটকেন্দ্রের ভেতর থেকে গণমাধ্যমকে সরাসরি সম্প্রচারে বাধা দেওয়া ও ভেতরে ঢুকতে বাধা দেওয়ার ব্যাপারে সিইসি বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। নির্বাচন কেন্দ্রের নিয়ম অনুযায়ী সেটা চলবে। এটা প্রিজাইডিং অফিসার দেখেবে। তার এখতিয়ারে যা আছে সে অনুযায়ী তিনি কাজ করবেন, তার বেশি নয়।’

তফসিল ঘোষণার আগেই ঢাকা উত্তরে জনসংযোগ করছেন বিভিন্ন প্রার্থী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, ‘আজ তো তফসিল ঘোষণা করা হলো। আমরা এই ব্যাপারে দেখব। সিরিয়াসলি এটা দেখব। তারা (সম্ভাব্য প্রার্থী) যদি সেটা (প্রচার উপকরণ) না সরায় আমরা প্রার্থিতার সময় আমরা সেটা তুলব। কারও ব্যাপারে শিথিল থাকব না।’

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি জানান, উত্তর সিটিতে একটি এবং দক্ষিণ সিটিতে ওয়ার্ডে ভোট নিতে।

আনিসুল হকের মৃত্যুর পর থেকেই ঢাকা উত্তরে ভোট নিয়ে আইনি জটিলতার কথা উঠেছে। নির্বাচন কমিশন অবশ্য কোনো জটিলতার কথা উড়িয়ে দিচ্ছে শুরু থেকেই। এই জটিলতার কারণে কেউ মামলা করে তাহলে নির্বাচন কমিশনের কিছু করার আছে কি না- এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, ‘কে মামলা করবে না করবে সেটা কি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে?’

‘আমাদের দায়িত্ব হলো নির্বাচন পরিচালনা করা। এ সিটি নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আইনি কোনো বাধা নেই।’

এ সময় চার নির্বাচন কমিশনার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আজকের বাজার:এলকে/ ৯ জানুয়ারি ২০১৮