তামাকপণ্যের প্যাকেট ও কৌটার উপরিভাগেই সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল।
ফলে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) এবং ধূমপান ও তামাকজাত ব্যবহার বিধিমালা, ২০১৫ এর পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর থেকে সব তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট, কার্টন বা কৌটার উপরিভাগের অন্যূন শতকরা ৫০ শতাংশ জায়গা জুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ করতে হবে। ওই তারিখের পর থেকে তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট, কার্টন বা কৌটার উপরিভাগের ৫০ শতাংশ জায়গা জুড়ে স্বাস্থ্য সর্তকবাণী ব্যতীত কোনো তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় ও বাজারজাত করা যাবে না।
কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই আইনের বিধান লঙ্ঘন করলে অনুর্ধ্ব ৬ মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনধিক ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। একই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান দ্বিতীয়বার বা বার বার একই অপরাধ করলে পর্যায়ক্রমে দণ্ড দ্বিগুণ হবে।
এর আগে ২০১৬ সালের ১৬ মার্চ তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট, কার্টন বা কৌটার নিম্নভাগের অন্যূন শতকরা ৫০ শতাংশ জায়গা জুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সর্তকবাণী মুদ্রণ সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল।
আজকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের ১৬ মার্চে এই সংক্রান্ত প্রকাশিত গণবিজ্ঞপ্তিটি বাতিল করা হয়েছে।
তামাকবিরোধী আন্দোলন কর্মীদের অব্যাহত প্রচেষ্টা এবং গণমাধ্যম বিশেষ করে অ্যান্টিটোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স- আত্মার জোরালো অবস্থান এই গুরুত্বপূর্ণ অর্জনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল এনটিসিসির ইতিবাচক ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তামাকবিরোধী কর্মীদের পক্ষ থেকে তাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ এর ১০ ধারা অনুযায়ী সব তামাকজাত পণ্যের প্যাকেটের উপরের অংশে ৫০ শতাংশ জায়গায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণের বিধান রয়েছে। তবে বাংলাদেশ সিগারেট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (বিসিএমএ) হস্তক্ষেপের কারণে তামাকপণ্যের প্যাকেটের নিম্নভাগে ৫০ শতাংশ স্থানে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণের সাময়িক অনুমতি দিয়েছিল আইন মন্ত্রণালয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ১৬ মার্চ এই সংক্রান্ত গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল সরকারের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল।
আইন মন্ত্রণালয়ের আইনবিরোধী মতামতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো। বেসরকারি সংস্থা উবিনিগ (প্রা.) লিমিটেড, প্রজ্ঞা এবং প্রত্যাশা মাদকবিরোধী সংগঠনের রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ সেপ্টেম্বর তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ভঙ্গ করে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ সংক্রান্ত ‘গণবিজ্ঞপ্তি’ প্রকাশ কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট।
পরবর্তী আদেশ প্রদানের জন্য গত ২ নভেম্বর কার্যতালিকায় মামলাটি অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল এই গণবিজ্ঞপ্তি প্রত্যাহারের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু তামাকবিরোধী প্রতিষ্ঠান ‘অ্যাশ বাংলাদেশ’ (অ্যাকশন অন স্মোকিং এন্ড হেলথ বাংলাদেশ) চলতি বছরের জানুয়ারিতে আরও একটি রিট আবেদন করলে আগের সব কার্যক্রম মুলতবি ঘোষণা করে হাইকোর্ট। পরবর্তী আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত ‘গণবিজ্ঞপ্তি’ অনুযায়ী সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ বহাল রাখার আদেশ প্রদান করে।
তবে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম এবং রিট আবেদনের দাবির স্বপক্ষে যথেষ্ট যুক্তি ও তথ্য-প্রমাণ উপস্থিত করতে না পারায় হাইকোর্ট গত ১৯ মার্চ ‘অ্যাশ বাংলাদেশ’ এর রিট আবেদনটি খারিজ করে দেয়। ফলে তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেটের উপরিভাগে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ সংক্রান্ত আইন বাস্তবায়নে সব বাধা অপসারিত হয়।
আজকের বাজার: সালি/৬ জুলাই ২০১৭