শরিকদের ছাড়া নির্বাচন করলে এক হাজার বছরেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসতে পারবে না-ইনুর এমন বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। আওয়ামী লীগের সমর্থনেই ইনুর প্রথম সংসদ সদস্য হওয়ার বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করে কাদের বলেন, ‘তিনি (ইনু) নিজেও জানেন আওয়ামী লীগ ছাড়া নির্বাচন করলে ফলাফলটা কী হবে।’
বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক মিলনায়তনে ছাত্রলীগের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে কাদের এ কথা বলেন। বঙ্গবন্ধুর ৭ ই মার্চকে ইউনেস্কো বিশ্ব প্রামাণ্য ঐহিত্যের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ছাত্রলীগ। এ সময় ‘বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং ‘কারাগারের রোজনমচা’ এই দুইটি বই বিতরণ করা হয়।
আলোচনায় নানা বিষয়ের সঙ্গে বুধবার কুষ্টিয়ার জনসভায় ইনুর বক্তব্য নিয়েও কথা বলেন ওবায়দুল কাদের। ওই ভাষণে ইনু আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, ‘আপনারা ৮০ পয়সা থাকতে পারেন। আপনি এক টাকার মালিক না। যতক্ষণ এক টাকা হবেন না ততক্ষণ ক্ষমতা পাবেন না। আপনি ৮০ পয়সা আর এরশাদ, দিলীপ বড়ুয়া, মেনন আর ইনু মিললে তবেই এক টাকা হবে। আমরা যদি না থাকি তাহলে ৮০ পয়সা নিয়ে আপনারা (আ. লীগ) রাস্তায় ফ্যা ফ্যা করে ঘুরবেন। এক হাজার বছরেও ক্ষমতার মুখ দেখবেন না। সুতরাং ঐক্য করেছি জাতীর জন্য, দেশের জন্য, মানুষের জন্য। সেই ঐক্যের ফসল হিসাবে আজ শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী।’
শরিক একটি দলের প্রধানের এমন বক্তব্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছে ক্ষমতাসীন দলে। জোটের শরিক অন্য দলের নেতারাও বিস্মিত হয়েছেন।
এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে গণমাধ্যম কর্মীদেরকে ইনু বলেছেন, ‘কতিপয় নেতা ঐক্যকে খাটো করে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে থাকেন। ঐক্যের শরিকদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেন এবং তাদের প্রতি তীর্যক মন্তব্য করেন। এটা ঐক্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।’
ওবায়দুল কাদের ইনুর এই বক্তব্যকে অভিমান হিসেবে দেখছেন। জানান, ইনুর সঙ্গে কথা বলতে ১৪ দলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ নাসিমকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
কাদের বলেন, ‘অভিমন করে হঠাত করে ইনু সাহেব একটা বোমা ফাঠালেন,আমাদের ১৪ দলের আহ্বায়ক নাসিম ভাইকে বলেছি বিষয়টি দেখার জন্য আসলে তার আমাদের ওপর এত ক্ষোভ কেন, অভিমান কেন। আমরা জানতে চাই।’
‘হয়ত কোন কারণে এত অভিমান,এই কথার মাধ্যমে হয়তো কিছু আত্নতৃপ্তির ঢেকুর হয়েছে।’\
২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপিবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে এক পর্যায়ে গঠন হয় ১৪ দলীয় জোট। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে ইনু কুষ্টিয়ার একটি আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এর আগে ইনু কখনও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারেননি।
এরপর বিএনপি-জামায়াত জোটের বর্জনের মুখে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনেও ইনু একই আসন থেকে নির্বাচিত হন। তিনি বর্তমান মন্ত্রিসভায় তথ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন্
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ নিয়েও কথা বলেন কাদের। বলেন, এই ১৭ মিনিটের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাস, আমাদের পরাধীনতা আমাদের রক্ত, আমাদের বিদ্রোহ, হাহাকার, নির্যাতনের কথা তুলে ধরেছেন। স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত করেছেন দেশবাসীকে।’
‘ভাষণটি আমাদের পরম সম্পদ, গৌরব এবং আনন্দের’ উল্লেখ করে কাদের বলেন, ‘যেখানে সেখানে যত্রতত্র এই ভাষণটি ব্যবহার করা উচিত নয়।’
ছাত্রলীগের সমালোচনা করে কাদের বলেন, ‘তাদের কিছু কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত খারাপ কাজেন জন্য আমাদের লজ্জিত হতে হয়, বিব্রত হতে হয়।’
সংঘর্ষ হলে কেন বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হবে, কেন বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের ছাত্রলীগের কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে, সে প্রশ্নও রাখেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক। বলেন, ‘যারা দোষী তাদের খুঁজে বের করতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নিতে হবে।’
আজকের বাজার:বি/এলকে ৯ নভেম্বর ২০১৭