রসিক নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে জয়ী করতে নির্বাচনী নানান রণকৌশল নিয়ে কাজ করছেন চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। দলের সিংহভাগ শীর্ষনেতার সঙ্গে প্রতিদিন করছেন বৈঠক। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোট হোক আর মহাজোট, রসিক নির্বাচনের ফলাফলের উপর নির্ভর করছে জাপার কদর।
লাঙ্গলের জয় নিশ্চিত করতে নির্বাচনী রণকৌশল ঠিক করতে সোমবার ১৮ ডিসেম্বর সাড়ে ১২টা থেকে ২টা ৩০ মিনিট দীর্ঘ দুই ঘণ্টা দলের কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের, মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন বাবলু এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, সফিকুল ইসলাম সেন্টু, উপদেস্টা ব্যারিস্টার শামীম হায়দার চৌধুরী, অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়া, শওকত চৌধুরী এমপি, ইয়াহিয়া চৌধুরী এমপি, নুরুল ইসলাম নুরু, জহিরুল ইসলাম জহির, গোলাম মোহাম্মদ রাজু, মুনিম চৌধুরী বাবু এমপি, আমির হোসেন ভুইয়া এমপি,ইসহাক ভূইয়াসহ দলের শীর্ষনেতাদের সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন এরশাদ।
বৈঠকে উপস্থিত জাপার এক শীর্ষ নেতা আজকের বাজারকে জানান, রংপুর শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দুরে মিঠাপুকুরে জাপা নেতা জাহাঙ্গীরের বাসভবনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগে রংপুর ত্যাগ না করা জন্য সারাদেশ থেকে আগত নেতাদের নির্দেশ দেয়া হয়। বৈঠকে দলীয় কোনো সংসদ সদস্য যাতে দলের প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি নির্বাচনে অংশ না নেন সে বিষয়েও গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
বৈঠকে স্থানীয় জাপা নেতাদের সাথে বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতাকর্মীদেরকে প্রতিটি ভোটকেন্দ্র পাহারা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়।
জাপা চেয়ারম্যান এ নির্বাচনের ভোটার হওয়ায় ভোটের দিনও তার রংপুরের বাসভবন পল্লীনিবাসে অবস্থান করবেন তিনি। তবে, জাপার মহাসচিবসহ অন্য শীর্ষ নেতারা বিশেষ করে দলীয় এমপিরা অবস্থান করছেন মিঠাপুকুরে। সেখানে থেকেই সার্বক্ষণিক দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন।
রংপুর জেলা জাপার এক নেতা জানান, প্রায় ডজন খানেক দলীয় এমপি এখন রংপুরে অবস্থান করছেন। নির্বাচনী প্রচারণার মঙ্গলবার শেষ দিনেও ব্যাপক প্রচারে নেমেছেন জাপা নেতাকর্মীরা।
জাহাজ কোম্পানির মোড়ে জিএম কাদেরের নেতৃত্বে ভোটারদের মাঝে লিফলেট বিতরণ করা হয়। এসময় দলের ভাইস চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম জহির, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক ভূইয়া, জাতীয় কৃষক পার্টির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন মামুন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এরশাদের উপদেস্টা ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারি এবং রাজশাহী মহানগর জাপার সাধারণ সম্পাদক শাহাবুদ্দিন বাচ্চু আজ নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন কোর্ট চত্বর এলাকায়।
রংপুর শহর বাসষ্ট্যান্ডে লাঙ্গলের পক্ষে প্রচারে অংশ নেন জাতীয় যুব সংহতি। সেখানে ভোটারদের কাছে দলীয় প্রার্থী মোস্তফাকে ভোট দেয়ার আহবান জানিয়ে লিফলেট বিতরণে অংশ নেন যুব সংহতির সভাপতি আলমগীর সিকদার লোটন, সাধারণ সম্পাদক ফকরুল আহসান শাহাজাদা, যুব নেতা মিয়া আলমগীর, জিয়াউর রহমান বিপুল প্রমুখ।
রংপুর রেলস্টেশন এলাকায় দলের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেয় জাতীয় ছাত্র সমাজ। এখানে সংগঠনের সভাপতি সৈয়দ ইফতেখার আহসান, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মিরুসহ কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতারা অংশ নেয়।
রংপুর ৭ ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন এরশাদের উপদেস্টা অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়া। এসময় তার সাথে জাপা নেতা জিল্লুর রহমানসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জাতীয় শ্রমিক পার্টির সভাপতি একেএম আসরাফুজ্জামান খাঁন এবং শেখ মো. শান্তর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল শহরে বিভিন্ন ব্যাংকে লাঙ্গলের পক্ষে প্রচার চালান।
ঢাকা থেকে আগত জাপা কেন্দ্রীয় নেতা সুজন দের নেতৃত্বে ঢাকা মহানগর শ্যামপুর-কদমতলীর নেতারা গণসংযোগ করেন শহরের মডার্ন মোড়ে। সে সময় সেখানে মহানগর দক্ষিণের নেতা মাইনুদ্দি বাবু, আলমগীর হোসেন, মো. মামুনসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
রংপুরে অবস্থান প্রসঙ্গে জাপা এমপি ইয়াহিয়া চৌধুরী বলেন, আমি সবসময় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। কেউ বলতে পারবে না আমি রংপুরে এই নির্বাচনী এলাকায় দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিয়েছি। তিনি বলেন, শুধু আমি নই জাতীয় পার্টির প্রতিটি এমপি এবং সিনিয়র নেতারা বরাবরই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
রংপুর অবস্থানরত ঠাকুরগাও জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক স্বপন চৌধুরী বলেন, দল এবং এরশাদের প্রতি দলের নেতাকর্মীদের যে কমিটমেন্ট রংপুর নির্বাচন তার প্রমান। সারাদেশ থেকে কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিজ খরচে দলের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারে অং নিতে রংপুরে অবস্থান করছেন। কোনো অবস্থায় এ বিজয় ছিনিয়ে নিতে দেবো না।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাপার সাংগঠনিক সম্পাদক সুজন দে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ৭০ শতাংশ ভোট পেয়ে আমাদের প্রার্থী নির্বাচিত হবে। সরকার যদি এ নির্বাচন নিয়ে কোনো ধরনের ছলচাতুরির আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করে তাহলে রংপুরবাসী দাতভাঙা জবাব দেয়ার জন্য প্রস্তুত। সাথে আমরাও আছি।
আজকের বাজার: এলকে/ ১৯ ডিসেম্বর ২০১৭