জেলায় শীত ও কুয়াশা উপেক্ষা করে ইরি-বোরো চারা রোপণে ব্যস্ত কৃষক।
জেলার ১৩ টি উপজেলায় কৃষি অধিদপ্তর ১ লক্ষ ৭৪ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত জেলায় ২০ ভাগ জমিতে ধানের চারা রোপন অর্জিত হয়েছে।
দিনাজপুর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম জানান, চলতি ইরি- বোরো মৌসুমে খাদ্যে উৎপাদনের জেলা দিনাজপুরে গত ১৪ জানুয়ারী থেকে জেলার ১৩টি উপজেলায় ঘন কুয়াশা আর শীত উপেক্ষা করে ইরি-বোরো চাষে ঝুঁকে পড়েছেন কৃষকেরা। আগামী ১০ মাচ পর্যন্ত ধানের চারা রোপণ কার্যক্রম চলবে।
তিনি বলেন, কৃষকেরা ভোর থেকে শীতল ঠান্ডা পানিতে নেমে ইরি-বোরো ধানের বীজ তুলে সেই বীজ জমিতে রোপণ করছেন। ইরি-বোরো চাষের জন্যে প্রস্তুত করা হচ্ছে জমি। ভোর রাত থেকে শুরু করে দুপুর পর্যন্ত বোরো জমি প্রস্তুত করতে কৃষকেরা পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষ করছেন।
আগাম আলু উত্তোলনের পর ওই জমিতে রোপণ করছেন ইরি-বোরো ধানের চারা। ইরি-বোরো ধানের চারা রোপণ নিয়ে চলছে গ্রামে গ্রামে উৎসবের আমেজ। ইরি-বোরো ধানের চারা রোপণে ব্যস্ত সময় কাটছে কৃষকদের।
কৃষি বিভাগের সূত্রটি জানায়, চলতি মৌসুমের ইরি- বোরো চাষে অধিক ও ভালো মানের ফলন পাওয়ার জন্য জেলা কৃষি অধিদপ্তর এর মাঠ কর্মীরা কৃষকদের নিকট গিয়ে ইরি-বোরো ধানের সফল চাষে সঠিক পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন।
যে সব জমিতে চাষ করা হচ্ছে ইরি-বোরো ধান, তার সার্বিক পরিচর্যার জন্য কৃষি বিভাগ থেকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। যে সব কৃষক আমন ধান কাটার পর আলু বা সরিষা চাষ করেননি, তারা আগাম সে সব জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করছেন। ইরি বোরো ধানের মধ্যে কৃষি বিভাগের নতুন উদ্ভাবন করা ভ্যারাইটি হাইব্রীড ও উপশী জাতের ধান এবার বেশী আবাদ করেছেন । এছাড়া নতুন ভ্যারাইটি হিরা-১, হিরা-২, সোনার বাংলা, বি-ধান ২৮, ব্রী-২৯, ব্রী-৮১, ব্রী-৭৪, ব্রী-৮৯ সহ স্থানীয় জাতের কিছু ধান চাষে চারা বেশি রোপণ করা হচ্ছে।
অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ নুরুজ্জামান মিয়া জানান, জেলার ১৩টি উপজেলায় এবার ইরি-বোরে চাষের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে ১লাখ ৭৪ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে হাইব্রীড ২৯ হাজার ৩৫ হেক্টর এবং উপশী ১ লক্ষ ৪৫ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ফসল উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় হাইব্রীড জাতের ধান প্রতি হেক্টরে ৫ মেট্রিক টন এবং উপশী প্রতি হেক্টর ৪ দশমিক ৫১ মেট্রিক টন। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অর্জিত ধানের ফসল থেকে হাইব্রীড ১ লক্ষ ৪৫ হাজার ২২৮ মেট্রিক টন এবং উপশী ৬ লক্ষ ৫৬ হাজার ৮৬০ মেট্রিক টন সহ মোট ৮ লক্ষ ২ হাজার ৮৮ মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি বলেন, অনুকূল আবহাওয়া এবং প্রয়োজনীয় কৃষি উপকরণ সরবরাহ থাকায় কৃষকরা নিরবিচ্ছিন্ন ও শান্তিপূর্ণ ভাবে এবারের ইরি বোরো চারা রোপণে উত্তম সময় অতিবাহিত করতে পারছেন।ফলে এবারে জেলায় লক্ষ্যমাত্র অতিরিক্ত জমিতে ইরি বোরো ধানের চাষ অর্জিত হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষকেরা চলতি মৌসুমে ইরি-বোরো চাষে রঙিন স্বপ্ন দেখছেন। ধানের চারা বড় হয়ে নতুন ধানের ফসলে ভরে উঠবে তাদের গোলা।
জেলার জেলা পর্যায়ে একাধিক কৃষকের সাথে কথা বলে জানা গেছে , আগাম চারা রোপণ করায় ক্ষেতে ফসল ভালো উৎপাদন হয়। আর সারি সারি করে ধানের চারা রোপণ করার ফলে পরিচর্যায় স্বস্তি মিলে। এছাড়া ক্ষেতে রোগ-বালাই কম হওয়ায় অন্যান্য ফসল থেকে শতকরা ২০ভাগ উৎপাদন বেশি হবে। কৃষকরা বলেন, বীজ, সার সব কিছুর দাম বেশি। শ্রমিকের মজুরি অনেক বেশি। সার ও বীজের দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকলে ধান চাষ করে আরও লাভ পাওয়া যেতো।
তারা জানায়, ঘন কুয়াশা ও কনকনে ঠান্ডার মধ্যে সময় মতো চারা রোপণ করতে না পারলে আশানুরুপ ফলন পাওয়া যাবে না। তাই আগাম চারা রোপণ শুরু করা হয়েছে।
মো. নুরুজ্জামান বলেন, চলতি মৌসুমে শীতে বীজ তলার কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতায় ওই ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে বীজ তলায় পরিচর্যা করে চারা সংরক্ষণে সক্ষম হয়েছে। ফলে বীজতলার ক্ষতি সংরক্ষণ হওয়ায় কৃষকেরা বেশ স্বস্তিতে রয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি ইরি বোরো মৌসুমে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে বাম্পার ইরি -বোরো ধানের ফলন আশা করছেন। (বাসস)