দুই জেলার মাঝে পড়ে তিস্তার ভাঙনে ভিটেহারা ৩ শতাধিক পরিবার

তিস্তা নদীর তীব্র ভাঙনে কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার চর বজরা এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার কাশিমবাজার ও লখিয়ার পাড়ার তিন শতাধিক পরিবার ভিটেহারা হয়েছে। ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মসজিদসহ যোগাযোগের একমাত্র পাকা সড়কটি।

এলাকাগুলো কুড়িগ্রাম ও গাইবন্ধা জেলার সীমানার মাঝে অবস্থিত হওয়ায় জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তাদের নজরদারির অভাবে ভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়ে গেছেন সেখানকার মানুষজন। সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ কৃষি জমি, ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেলেও তা প্রতিরোধে নেই কার্যকর ব্যবস্থা। আর বরাদ্দ না পাওয়ায় অসহায় পানি উন্নয়ন বোর্ডও।

তিস্তা নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন কাশিমবাজার এলাকাটি কুড়িগ্রাম সীমান্তবর্তী হওয়ায় জনপ্রতিনিধিদের অবহেলা এবং সরকারি কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণে চরম হুমকির মুখে রয়েছে পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বাজারসহ প্রায় দুই হাজার পরিবার। গেল এক বছরে এখানকার তিন ভাগের দুই ভাগ এলাকা তিস্তা নদীর পেটে চলে গেছে। এলাকার মানুষ ভাঙন রোধে দীর্ঘ-মেয়াদি কাজের জন্য দুই জেলার অফিসে বারবার ধরণা দিলেও মিলছে না প্রতিকার।

ভারী বৃষ্টিপাত আর উজানের পানি বৃদ্ধির কারণে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে তিস্তা নদী। এতে করে গত দুই সপ্তাহে ভাঙনের কবলে পড়েছে কাশিমবাজার ও চর বজরা গ্রাম। পানি উন্নয়ন বোর্ড অস্থায়ীভাবে জিও ব্যাগ ফেললেও অপ্রতুলতার কারণে এ কয়েক দিনেই আবাদি জমি, গাছপালা, পাকা সড়ক ও মসজিদসহ তিন শতাধিক বাড়িঘর বিলিন হয়ে গেছে। বর্তমানে হুমকির মুখে রয়েছে দুটি ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের প্রায় দুই হাজার পরিবারসহ ঐতিহ্যবাহী কাশিমবাজার হাট, কাশিমবাজার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নাজিমাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়, কাশিমবাজার সিনিয়র মাদ্রাসা এবং দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়া, উলিপুর-বজরা মহাসড়কের প্রায় ২০০ মিটার সড়কপথ ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন এলাকার মানুষজন।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমার, তিস্তা ও ধরলা নদীর কবলে পড়ে ৬৭ পয়েন্টে প্রায় ৮ কিলোমিটার ভেঙে গেছে। এর মধ্যে ৫৩ পয়েন্টে ৬ কিলোমিটার জায়গায় জরুরি ভিত্তিতে কাজ চলছে। তবে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না পাওয়ায় কাজ বিঘ্নিত হচ্ছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘ঠিকাদারদের কাছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রায় ১৪ কোটি এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রায় ১৫ কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে। ইতোমধ্যে বরাদ্দের জন্য চাহিদা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে ভাঙন রোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে।’