প্রস্তুত ৩৫ কোটি পাঠ্য বই

দুই মন্ত্রণালয়ের আলাদা উৎসব-অনুষ্ঠান

বছর শেষে কোমলমতি শিশুরা অপেক্ষা করে নতুন বইয়ের। নতুন বইয়ের গন্ধে মাতোয়ারা হবে, উল্লাসে মেতে উঠবে তারা। তাই অপেক্ষা চলে বছর জুড়ে। শিশুদের সেই অপেক্ষার দিন শেষ হচ্ছে। আরতো কয়েকটা দিন। এরপরই আসবে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। আগামী ১ জানুয়ারি শুরু হবে নতুন শিক্ষা বর্ষ। এদিনই শিক্ষার্থীদের হাতে উৎসবের মাধ্যমে তুলে দেওয়া হবে নতুন বই। এ জন্য জন্য প্রস্তুত ৩৫ কোটি পাঠ্য বই।

প্রতি বছরের মতো এবারও দেশব্যাপী উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেবে শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ জন্য আলাদা প্রস্তুতিও সম্পন্ন করেছে তারা। তবে ৩০ ডিসেম্বর বই উৎসবের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জানা গেছে, রাজধানীর দুটি জায়গায় আলাদাভাবে বই উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে কেন্দ্রীয়ভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। রাজধানীর আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রাঙ্গণে মাধ্যমিক পর্যায়ের বই উৎসবের আয়োজন করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে বই উৎসবের আয়োজন করবে। এরই মধ্যে ভেন্যুর ডিজাইন শুরু হয়ে গেছে।

এদিকে বই উৎসবকে কেন্দ্র করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড-এনসিটিবির কর্মকর্তারাও স্কুলে স্কুলে বই পৌঁছে দিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।

জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আগামী ৩০ ডিসেম্বর শনিবার জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) এবং প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার (পিইসি) ফল প্রকাশ করবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিনই বই উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন তিনি। পরে ১ জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেবেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার।

প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্য বই দেশের প্রায় সব উপজেলায় পৌঁছে গেছে

এনসিটিবি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বিনামূল্যের পাঠ্য বই দেশের প্রায় সব উপজেলায় পৌঁছে গেছে । গত রোববার পর্যন্ত ৩৫ কোটির মধ্যে ৩৩ কোটির বেশি বই স্কুল পর্যায়ে বিতরণের জন্য সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে। অন্যান্য বইয়ের মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহ কার্যক্রম ঝড়ো গতিতে এগিয়ে চলেছে। অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে এবার সাফল্যের সঙ্গে সময়মতো সব বই মুদ্রণ সম্ভব হচ্ছে।

সূূত্র জানায়, ২০১৮ শিক্ষাবর্ষে মোট ৩৫ কোটি ৪২ লাখ ৮৫ হাজার ৯৪৯ কপি পাঠ্যবই বিতরণ করা হবে। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরে ২৪ কোটি ৩৬ লাখ ৮৪ হাজার ৪২৮ কপি এবং প্রাথমিক স্তরে ১১ কোটি ৬ লাখ ১ হাজার ৫২১ কপি। গত রোববার পর্যন্ত প্রাাথমিক স্তরের প্রায় ৯৯ দশমিক ০২ শতাংশ এবং মাধ্যমিক স্তরের প্রায় ৯৮ শতাংশ পাঠ্যবই ছাত্র-ছাত্রীদের বিতরণের জন্য বিদ্যালয়গুলোতে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। বেশিরভাগ উপজেলায় প্রাথমিক স্তরের চাহিদা অনুযায়ী সব বই পৌঁছে গেছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে ১ জানুয়ারি বই উৎসব অনুষ্ঠিত হবে। উৎসবের তাৎপর্য বাড়াতে উপস্থিত থাকবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। এছাড়াও কয়েকজন জনপ্রিয় তারকাকে অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের উপস্থিত থাকতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও পরিবেশিত হবে।
একই দিন রাজধানীর আজিমপুর গার্লস স্কুলের মাঠে বই উৎসবের আয়োজন করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদসহ একাধিক মন্ত্রী-এমপি ও শিক্ষাবিদরা সেখানে উপস্থিত থাকবেন। উৎসবকে আনন্দমুখর করতে রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা লাল-নীল প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুনসহ মাথায় ফিতা ও টুপি পরে অনুষ্ঠানে যোগ দিবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মুফাদ আহমেদ চৌধুরী।

এনসিটিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, শিক্ষার্থীদের হাতে সময়মতো বই তুলে দেয়াটা ছিল চ্যালেঞ্জ। এ জন্য শুরু থেকেই এনসিটিবি বইয়ের মনিটরিং-এ থাকা দুটি পরিদর্শন দল ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তৎপর ছিল। শুরুতে নানা জটিলতা দেখা দিলেও শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত সময়ের আগেই বই ছাপানোর কাজ শেষ হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সারাদেশে ৯৯ শতাংশ বই ইতোমধ্যে পৌঁছে গেছে। নির্ধারিত দিনের আগেই শতভাগ বই পৌঁছে যাবে বলেও জানান তিনি।

আজকের বাজার : আরএম/ ডিএইচ/ আরআর/ ২৬ ডিসেম্বর ২০১৭