দুধে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সমন্বিত পদক্ষেপ প্রয়োজন

দেশে দুধের উৎপাদন বাড়ানো ও এই খাতকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

সম্প্রতি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে প্রাণ ডেইরি কমপ্লেক্সে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা এসব কথা বলেন। ‘প্রাণ ডেইরি হাব ও সম্ভাবনাময় দুগ্ধ শিল্প’ বিষয়ক এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে প্রাণ ডেইরি লিমিটেড।

দেশের বিভিন্ন স্থানের ভোক্তাদের প্রাণের দুধ সংগ্রহ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ কার্যক্রম দেখাতে আয়োজন করা হয় দুইদিন ব্যাপী ‘প্রাণ মিল্ক জার্নি’ কর্মসূচী। এ কর্মসূচীতে অংশ নেয়া ৬০ জন ভোক্তার পাশাপাশি প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ও প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিউটের কর্মকতা,খামারি, এবং এনজিও কর্মীরা বৈঠকে অংশ নেন।

বৈঠকে বক্তারা বলেন, এ খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে সম্পৃক্ত করে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই খাতকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা সম্ভব।

অনুষ্ঠানে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক বলেন, শত প্রতিকূলতার মধ্যেও দেশের দুগ্ধ শিল্পের প্রসার হচ্ছে। যেখানে ২০০৫ সালে দুধের উৎপাদন ছিল ১২ লাখ টন, সেখানে ২০১৮ সালে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৯৪ লাখ টনে দাঁড়িয়েছে।

দুধের দাম না বাড়িয়ে উৎপাদন খরচ কমানোর উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে যাতে কৃষকরা কোনভাবেই ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।

বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিউটের মহাপরিচালক ড. নাথুরাম সরকার বলেন, দুধে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে খামারি পর্যায়ে নজর দিতে হবে এবং তারা যাতে লাভ করতে পারে সেজন্য দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি ও উৎপাদন খরচ কমানোর উপর জোর দেন তিনি।

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ডীন ড. মাহবুব-ই-এলাহী বলেন, দুধ মিনারেল, প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার। এ বিষয়টি মানুষের মাঝে বেশি করে তুলে ধরতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের ফ্লেভার্ড মিল্ক জনপ্রিয় করে তোলার উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নাদিরা সুলতানা বলেন, দুধের মান উন্নয়ন করতে হলে কৃষক পর্যায় থেকে কাজ শুরু করতে হবে। সে ক্ষেত্রে তাদেরকে আরো বেশি সচেতন করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে অনেক গবেষণা হয়। কিন্তু সেসব গবেষণা কৃষক পর্যন্ত পৌঁছায় না। গবেষণার ফলাফল কৃষকের কাছে পৌঁছানোর উপর গুরুত্ব দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে প্রাণ ডেইরি’র নির্বাহী পরিচালক মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘প্রাণ ডেইরি সবসময় খামারিদেরকে দুগ্ধ উৎপাদনে উৎসাহ দিয়ে আসছে। শুধু ব্যবসায়িক চিন্তা করে নয়; খামারিদের জীবনমান উন্নয়নেও প্রাণ ডেইরি কাজ করছে।

তিনি বলেন, প্রাণ দুধ সংগ্রহের সময় এর গুণাগুণ, গন্ধ, রঙ ও ঘনত্ব জানতে বিভিন্ন টেস্ট করে। দুধে ফরেন পার্টিকেল, ময়লা রয়েছে কিনা বা দুধের স্বাদ ও গন্ধ অক্ষুণ্ন রয়েছে কি না তা পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া দুধের ফ্যাট, সিএলআর, সিওবি, সোডা, অ্যালকোহলিক ও ফরমালিন টেস্ট করা হয়। সবকিছু ঠিক থাকলে খামারিদের কাছে থেকে দুধ গ্রহণ করা হয়।

জনপ্রিয় অভিনেত্রী বাঁধন, স্বাগতা এবং অভিনেতা ইমন ‘প্রাণ মিল্ক জার্নি’ কর্মসূচীতে অংশগ্রহন করে প্রাণ ডেইরির দুগ্ধ সংগ্রহ প্রক্রিয়া দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রাণ ডেইরি’র জেনারেল ম্যানেজার (অপারেশন) রাজীব ইবনে ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞরা। তথ্যসূত্র-বাসস

আজকের বাজার/এমএইচ