দুর্বল হয়ে বাংলাদেশ অতিক্রম করেছে ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’

উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ ধীরে ধীরে দুর্বল হতে শুরু করেছে। ঘূর্ণিঝড়টি মঙ্গলবার সকালেকক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত আনে। বেলা ১১টার দিকে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ অতিক্রম করতে শুরু করে। তবে উপকূলীয় এলাকায় আরো ৬ ঘণ্টা মহাবিপদ সংকেত থাকবে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামসুদ্দিন আহমেদ।

৩০ মে মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে আবহাওয়া অধিদফতরে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। সামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, আরো ১২ ঘণ্টা দেশে বৈরি আবহাওয়া বিরাজ করবে। এর ফলে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। মোরা বাংলাদেশ অতিক্রম নাও করতে পারে। এটি দেশের ভেতরে নিস্ক্রীয় হয়ে যেতে পারে।

তিনি বলেন, মোরা চট্টগ্রাম উপকূলে ঘণ্টায় ১২৫ কিলোমিটার বেগে টেকনাফে ১৩৫ কিলোমিটার বেগে ও সেন্টমার্টিনে ১১৪ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে। ঘূর্ণিঝড় মোরা উত্তরদিকে অগ্রসর হয়ে মঙ্গলবার সকাল ৬টায় কুতুবদিয়ার নিকট দিয়ে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে শুরু করে।

এদিকে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় মোরার আঘাতে কক্সবাজারে দুইশতাধিক বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। একই সঙ্গে বেশ কিছু গাছপালা উপড়ে পড়েছে। ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের বেশি বাতাসের গতিবেগে কুতুবদিয়ার কাছ দিয়ে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করেছে এ ঘূর্ণিঝড়।

ঘূর্ণিঝড় মোরার প্রভাবে জড়ো বাতাস ও ভারি বৃষ্টিতে কক্সবাজার উপকূলের শত শত ঘরবাড়ি ধসে গেছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে এবং গাছ পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। একই সঙ্গে মোবাইল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। আর জলোচ্ছ্বাসের ফলে বহু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

তবে ঘূর্ণিঝড় মোরাকে কেন্দ্র করে সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলে ৩ হাজার ৪০২টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ৪ লাখ ৩৫ হাজার ৮২৯ জন মানুষ অবস্থান নিয়েছেন বলে জানা গেছে। আর শুধু কক্সবাজার জেলায় আনুমানিক ৬০০ আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়াও বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও ইউনিয়ন পরিষদে প্রায় ১ লাখ ২৮ হাজার মানুষ অবস্থান নিয়েছে বলে জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি।

মঙ্গলবার আবহওয়া অধিদফতরের সামুদ্রিক সতর্কবার্তায় উল্লেখ করা হয়, উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় ’মোরা’ উত্তরদিকে অগ্রসর হয়ে সকাল ৬টায় কুতুবদিয়ার নিকট দিয়ে কক্সবাজার-চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করে। এটি আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হতে পারে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড় ’মোরা’ এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কি. মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কি. মি. যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১৭ কি. মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরসমূহকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে। মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরসমূহকে ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৮ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

প্রবল ঘূর্ণিঝড় ’মোরা’-এর প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৪-৫ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় ’মোরা’ অতিক্রমের সময় কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর জেলাসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণসহ ঘণ্টায় ৮৯-১১৭কি. মি. বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

আজকের বাজার:এলকে/এলকে/৩০ মে ২০১৭