দেশের অগ্রগতিতে এখন সবচেয়ে বেশি দরকার একটি হিউম্যান রিসোর্স মিনিস্ট্রি

আনোয়ার আলম চৌধুরী পারভেজ। বিজিএমই-এর সাবেক সভাপতি। ইভিন্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। সফল ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী নেতা। দেশ নিয়ে ভাবেন; ভাবেন এ দেশের মানুষ নিয়ে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের সম্ভাবনা নিয়ে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পায়ন, শিক্ষাব্যবস্থা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, আমলাতন্ত্র, সামাজিক ব্যবস্থাপনার নানা কিছু নিয়ে বিস্তৃত তাঁর চিন্তার ভুবন। দিন কয়েক আগে বসেছিলেন আজকের বাজার পত্রিকা এবং এবি টিভির ক্যামেরার সামনে। বলেছেন তাঁর ব্যাপক বিস্তৃত অভিজ্ঞতার কথা, অনুধাবনের কথা, অনুভবের কথা, সম্ভাবনার কথা। আজকের বাজার-এর পাঠকদের সামনে সেই আলোচনার কিছু অংশ তুলে ধরা হলো।

দেশের অগ্রগতিতে এখন সবচেয়ে বেশি দরকার একটি হিউম্যান রিসোর্স মিনিস্ট্রি

ব্যবসা-বাণিজ্য বা অর্থনীতির দিক থেকে কোন দিকে যাচ্ছে বাংলাদেশ, এমন আলোচনা শুরুর আগে যদি বাংলাদেশের জিডিপি ফিগার দেখেন, বাংলাদেশের ইকোনমিক এক্টিভিটিস দেখেন, তবে বাংলাদেশ কিন্তু এগোচ্ছে। গত বছর আমাদের জিডিপি ৭.০২% গ্রোথ হয়েছে। এ বছরে টার্গেট আছে ৭.২-এ উন্নীত করার এবং সেই লক্ষ্যেই কিন্তু সরকার কাজ করে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় অহংকার আমার কাছে মনে হয়, নো ডাউট আমি আমার প্রাইম মিনিস্টারকে ক্রেডিট দিতে চাই, সেটা হলো, পদ্মা সেতুর মতো এমন একটা প্রজেক্ট নিজেদের উদ্যোগে বাস্তবায়ন করার যে চ্যালেঞ্জ তিনি নিয়েছেন এবং লক্ষ্য পূরণে যে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এখানে তিনি আমাদের দেশকে একটি বড় সাহস ও স্বপ্ন দেখাতে সাহায্য করেছেন। বাংলাদেশের ক্রেডিবিলিটি ও ভাবমূর্তি এখন অনেক বেড়ে গেছে।

এখন ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও আইএমএফের মতো সংস্থা বাংলাদেশের পেছনে দৌড়াচ্ছে। তারা চাচ্ছে বাংলাদেশে ইনভেস্ট করার জন্য। এটা কিন্তু বিকজ অব আওয়ার স্ট্রেন্থ, যেটা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ করেছেন। আমি খেয়াল করে দেখেছি, শি নোজ হার সাবজেক্ট ভেরি ওয়েল। যে জিনিসটা সবচেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আমার কাছে মনে হয়, ইনস্টিটিউশনগুলো। আমাদের দৈনন্দিন কাজের সহযোগিতার জন্য ইনস্টিটিউশনগুলোর সাপোর্ট যদি না থাকে, ইমপ্লিমেনটেশন স্টেইজ, মেইনটেনেন্স স্টেইজ, বাস্তবায়ন করা, মনিটরিং সঠিকভাবে সম্ভব হচ্ছে না। এই জায়গায় আমরা বেশ দুর্বল। এই জায়গাটা আমরা কিন্তু ওইভাবে ডেভেলপ করছি না।

বর্তমানে আমি খেয়াল করে দেখলাম, আমাদের বড় বড় প্রকল্প আর্মি দিয়ে বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। তবে কোনো কাজ আর্মিকে যখন দেওয়া হয়, আমি কিন্তু খুশি হই। কারণ এর বাস্তবায়ন হবে। তবে তাদের দিয়ে সব সময় এ ধরনের কাজ করানো সম্ভব না। অন্য প্রফেশন থেকে এসে কাজ করলে ধরেন রোডস অ্যান্ড হাইওয়ে, ওয়াসা, রেলওয়ে ওনারা কী কাজ করবে? ওই জায়গাগুলোর সক্ষমতার প্রয়োজনীয়তা কিন্তু রয়ে গেছে। সেই জায়গায় আমরা ব্যর্থ হচ্ছি। এটা আমাদের স্বীকার করতেই হবে যে আমাদের ট্রেনিং হচ্ছে না। ওই লেভেলের স্টুডেন্ট আমরা তৈরি করতে পারছি না। পড়াশোনা হয়ে যাচ্ছে সব বিবিএ আর এমবিএ-নির্ভর। আমাদের ইঞ্জিনিয়ার দরকার, আমাদের কেমিস্ট দরকার, আমাদের ফিজিক্সেও স্টুডেন্ট দরকার। আমাদের কোনো কিছুই কিন্তু হচ্ছে না। কেমন যেন একটা জগাখিচুড়ির মতো হয়ে গেছে।

এডুকেশনটা নিয়ে আসা উচিত জবের সাথে রিলেট করে। কেউ একটা ইন্ডাস্ট্রি করেছে, সেটা ফার্মাসিউটিক্যাল বা অন্য যেকোনো ইন্ডাস্ট্রি, সেখানে যোগ্য লোক নেই। আমরা শুধু সার্টিফিকেটগুলো ধরিয়ে দিচ্ছি। এমএ পাস করা একজন পিয়নের কাজ করছে, এটা তো হতে পারে না। এডুকেটেডদের মধ্যে বেকারের সংখ্যা এখন ৪৭%। এডুকেটেড ছেলেরা বেকার থাকবে, এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমি মনে করি, হিউম্যান রিসোর্স মিনিস্ট্রি হওয়া উচিত। তাহলে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী আমাদের কোর্স কারিকুলামগুলো ডেভেলপমেন্টে নিয়ে আসা সম্ভব হবে। বাজারের চাহিদা অনুযায়ী স্টুডেন্ট ডেভেলপ করা সম্ভব হবে।

একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ ছোট্ট একটা দেশ। এ দেশে ১৬ কোটি মানুষ। এ দেশে ইন্ডাস্ট্রি ছাড়া আমরা সাসটেইনেবল হতে পারব না। এবং ইন্ডাস্ট্রি যদি করতে হয়, আমাদের বিবিএ এমবিএ মাস্টার্স প্রোগ্রামের থেকে মেজরিটি আসা উচিত টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউশন। কেননা, ইন্ডাস্ট্রিতে ওদেরই জবের সংখ্যা বেশি।

একটা ম্যানেজারের অধীনে ১০০ জন কাজ করতে পারে। আমার ফিজিক্সে লোক দরকার, সায়েন্টিস্ট লোক দরকার, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার দরকার। ওদের সংখ্যা কিন্তু দেখা যাবে ইন্ডাস্ট্রির তুলনায় ১৫% থেকে ২০% বা ২৫%। আই থিঙ্ক উই হ্যাভ টু অল দ্য ব্রিলিয়ান্ট টু গো ইন ডিপ্লোমা। এ জন্য একটা সোশ্যাল মুভমেন্টও দরকার হবে। মাইন্ড সেটআপ ভাঙতে হবে। আজ আমরা ডিপ্লোমা শুনলে মেয়ে বিয়ে দিতে চাই না। অথচ যদি জার্মানিকে আমরা ফলো করি, দেখা যাবে যে সেখানে কিন্তু অধিকাংশ এ ধরনের কোর্স, টেকনিক্যাল। যে কারণে জার্মানি ইজ দি অনলি কান্ট্রি অব ইউরোপ, যে ইন্ডাস্ট্রি বেইজ ভার্সন। আমাকে কিন্তু ওইটা ফলো করা উচিত।

ইউরোপকে ফলো করে বা ইন্ডিয়াকে ফলো করে আমার লাভ নেই। আবার ইন্ডিয়াও কিন্তু এখন টেকনিক্যাল এডুকেশনের দিকে ঝুঁকছে। আমাদেরও কিন্তু ওইভাবে সার্ভিস সেক্টরকে বেইজ করে এডুকেশন পলিসি সাজানো উচিত। এটা  করবেন পলিসি মেকাররা। তাদের কিন্তু স্ট্রং করবে ব্যুরোক্রেসি।

ব্যুরোক্রেসি স্টাডি করে দেবে। সুতরাং ইনফরমেশন গ্যাদার করবে তারা। তাহলে পলিসি মেকাররা, মন্ত্রী হোন বা পার্লামেন্ট মেম্বার হোন, তাঁরা রাইট ইনফরমেশন নিতে পারবেন। বাংলাদেশ যেহেতু বড় ইকোনমি হয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে, তাই বাংলাদেশকে ভাবতে হবে, আমরা কিন্তু একা থাকতে পারব না। আমাদের রেস্ট অব দি ওয়ার্ল্ডকে নিয়ে থাকতে হবে। আমাদের এক্সপোর্ট বাড়াতে হবে, ট্রেডিং বাড়াতে হবে। এগুলো করতে হলে ব্যুরোক্রেসির ক্যাপাসিটি বাড়াতে হবে।

আজকে যদি বলি নেগোসিয়েশন, সেটা করতে গেলে ব্যুরোক্রেসি ক্যাপাসিটি লাগবে। যদি বলি আমেরিকায় একটি বিজনেস নেগোসিয়েশনের জন্য আমাদের যেতে হলো, টেবিলে আলোচনা হবে। কোটা বা জিএসপি নিয়ে। উই আর প্রিপেয়ার্ড অল দ্য পেপারস রিকোয়ার্ড? নো। যিনি আলোচনায় গেছেন, তা ফরেন মিনিস্ট্রি অর কমার্স মিনিস্ট্রি যাই হোক না কেন, তিনি কিন্তু মাত্র দুই বছর বা তিন বছর আছেন ওই চেয়ারে। অনেক পুরোনো বিষয় না-ও জানতে পারেন তিনি। কীভাবে তিনি আমার নীতিনির্ধারণী ব্যক্তিকে, মন্ত্রীকে বোঝাবেন যে আমেরিকা কী, তারা কী চায়?  আমি যদি ওদের কালচার না জানি, ওদের মানসিকতা না জানি, তবে আমি বুঝব না কোনভাবে কোন সময়ে প্রেস করতে হবে।  আমাকে নেগোসিয়েট করতে হলে এ বিষয়গুলো জানতে হবে। ওকে, আমি এটা দিয়ে কী নেব, সেটাও আমার জানা থাকতে হবে। আর এ বিষয়গুলো এক, দুই বা তিন বছর স্ট্যাডি করে জানা সম্ভব না। বাংলাদেশের একটা অ্যাম্বাসিতে যদি কোনো আমেরিকান চাকরি করতে আসেন, তবে কিন্তু তিনিও বাংলা শিখে আসেন। এটা তো এক দিনে সম্ভব না।

আজ যদি ইন্ডিয়ার দিকে দেখেন, যে সেক্রেটারি বা জয়েন সেক্রেটারি বাংলাদেশের ডেস্ক নিয়ে কাজ করছেন, দেখা যাবে তিনি ২৫-৩০ বছর বসে ওই একই ডেস্কে কাজ করেছেন। তাঁরা এতই অভিজ্ঞ যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কী চিন্তা করেন, প্রেসিডেন্ট কী চিন্তা করেন, একজন মন্ত্রী কী চিন্তা করেন, সেটাও তাঁরা জানেন। বাংলাদেশ কী পছন্দ করে বা অপছন্দ করে, বাংলাদেশকে কীভাবে পটানো যায়; এ বিষয়গুলো যখন তাদের নতুন মন্ত্রীকে সাপ্লিমেন্ট করতে পারছে, সেটার ওপর বেইজ করে মন্ত্রীরা পরে এসে নেগোসিয়েশন করছেন। আমাদের এখানে কি এ রকম কনফিডেন্ট কেউ দিতে পারছেন?

আমি কিন্তু সেই সেক্রেটারি বা জয়েন সেক্রেটারি বা দোজ হু আর ওয়ার্কিং ফর দি ইন্ডিয়ান মার্কেট, তাদের আন্ডারমাইন্ড করছি না। আমার কথা হচ্ছে, আমাদের ক্যাপাসিটি বিল্ডআপও ওই আলোকেই করা উচিত। আমাদের দেশের ওরা যখন ওখানে যাবে, ওখানকার কালচার আয়ত্ত করবে, ওখানকার ক্যারেক্টার জানবে, ওখানকার পলিটিক্যাল লোকদের ন্যাচার জানবে, নরমাল জনগণের ন্যাচার জানবে, আমি যে প্রোডাক্ট ওখানে দিতে চাই বা ওখান থেকে আনতে চাই, এগুলোকে ওখানকার মানুষ কীভাবে নেবে বা রিঅ্যাক্ট করবে; এই যে ইনফরমেশনগুলো যখন বিল্ডআপ করতে পারবে, তখন আমার প্রাইম মিনিস্টার বা আমার মন্ত্রীরা এনাফ কনফিডেন্ট অ্যান্ড রিচ থাকবেন। তখন কিন্তু নেগোসিয়েশন টেবিলে আসবে, ইন্ডিয়া কখন আমাকে কোথায় বাধা দিয়েছিল আর কখন কী দিতে চেয়েছিল। অথবা কেন দিতে চেয়েছিল বা কেন আমরা নিতে চেয়েছিলাম। আজ কিন্তু এই ইনফরমেশনগুলো ছাড়াই ওনাদেরকে টেবিলে বসতে হচ্ছে। একটা অ্যাজামশনের ভিত্তিতে। পরে আমরা বলছি ভুল হয়ে গেছে। তখন আমাদের আর শোধরানোর সময় থাকে না। কারণ এখানে সবাই সবার পার্সোনাল ইন্টারেস্ট দেখবে।

ঠিক সেইম জিনিস। নট অনলি ইন্ডিয়া, আজ আফ্রিকান কান্ট্রি নিয়েও ডিসকাস করতে হচ্ছে। আজ মিডিল ইস্ট নিয়ে, ইউরোপ নিয়ে, অর্থাৎ দেশগুলো ভাগ করে ক্যাপসিটি বিল্ডআপ, নেগোসিয়েশন বিল্ডআপ করতে হবে। এগুলো কিন্তু লিডারদের কাজ না। এগুলো ব্যুরোক্রেসির কাজ। এবং লিডাররা ওখান থেকে নেবেন। ‘সো আই ওয়ান্ট টু সে, ইনস্টিটিউশন ইজ দ্য ভেরি ভেরি ইম্পর্টেন্ট, হ্যাজ টু বি ইনডিপেনডেন্ট, হ্যাজ টু বি ট্রেনিং ওরিয়েন্টেড এবং ফিউচার সামনে রেখে এগুলোকে আসতে হবে। সাসটেইনেবল, কিপ অ্যান্ড গ্রোথ যদি আমরা ইন্ডিভিজ্যুয়ালি চাই, তাহলে সেই একই সেফ অ্যান্ড সিকিউরিটি ইস্যু।’

বাঙালির সবচেয়ে বড় জিনিস হলো, আমরা খারাপ জিনিস ভুলে যাই। তিন মাস আগেও যে দুর্ঘটনা ঘটে গেছে, দেখা যাবে যে সেটা আমরা এখনই ভুলে গেছি। বন্যা হলে ছাদে বসে থাকে, তবে ভিক্ষা করে না। যদি কেউ স্বেচ্ছায় কিছু দেয়, হাসতে হাসতে নেয়। আবার যখন পানি নেমে যায়, তখনো হাসতে হসতে পুনরায় ঘর নির্মাণ করে। যদিও সে জানে এটি পরবর্তী বছর আবারও ভেঙে যাবে। তবু হাসতে হাসতে নতুন ঘর তোলে, উইথ এ বিগ হোপ ইনশা আল্লাহ, আগামী বছর ঘরটি ভাঙবে না। আমরা সব সময়ই আশাবাদী জাতি। আমরা খুব চ্যালেঞ্জিং। ইজি গোয়িং জাতি। সুতরাং এখানে সাসটেইনেবল করতে গেলে এখন দরকার হচ্ছে পলিসি। যে পলিসিগুলো আসলে হেল্প করবে টু কিপ গ্রোয়িং। আমাকে গতকাল থাই এক ইনভেস্টর বলেছেন, বাংলাদেশে দেখছি সবাই খুব বড় চিন্তা করে। ছোট ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে ভাবে না। মনে করে, ইন্ডাস্ট্রি বড়ই হতে হবে। শুধু গার্মেন্টস বানালে হবে না; ওটার সাথে কাপড়ও বানাতে হবে, সুতাও বানাতে হবে।

আমি বললাম, উই থিঙ্ক বিগ। ফর ইন্ডাস্ট্রি গুড। উই আর নট সেইভার; উই আর স্পেন্ডার। আমরা সব সময় ভালো মেশিন আনি। আমাদের পাশের মানুষটিও দেখা যাবে, পছন্দ হয়ে গেলে ধার করে হলেও ভালো জিনিসটি কিনবে। এটাই আমাদের মানসিকতা। বাট এটাকে সাকসেসফুলে পৌঁছাতে হলে প্রয়োজন পলিসি। আর পলিসি তখনই সাকসেসফুল হবে, যখন ইনস্টিটিউশনগুলো স্ট্রেন্থদেন হবে। আজ ইনস্টিটিউশনগুলোর দিকে আমাদের নেত্রীকে দৃষ্টি দিতে হবে। আজ যদি ইনস্টিটিউশন স্ট্রং না হয়, যতই কমিটমেন্ট থাকুক, কাল কিন্তু আমার নেত্রীরও সাকসেস হতে কষ্ট হবে। ইট উইল বি ডিফিকাল্ট। কারণ মানুষকে তো সেইভাবে দায়িত্ব নিতে হবে। দায়িত্ব ওউন করতে হবে। আজ যদি আমাকে দায়িত্ব দেন আর আমার যদি দায়িত্ব পালনের ক্যাপাসিটি না থাকে, আমাকে পেটালেও কাজটা আমার থেকে নিতে পারবেন না।

হিউম্যান রিসোর্স মিনিস্ট্রি দরকার

আমাদের দেশের উন্নয়নের জন্য ক্যাপাসিটি বিল্ডআপ হওয়া দরকার এবং কারিগরি শিক্ষা দরকার। একই সাথে শিল্পনির্ভর অর্থনীতি দরকার। আমরা যতটুকু জানি, আমাদের দেশ এখন ডেমোগ্রাফি ডিভিডেন্ডের মধ্যে যাচ্ছে? অর্থাৎ, বেশিসংখ্যক কর্মক্ষম জনশক্তি রয়েছে। এখন দেখতে হবে যে এই জায়গাগুলোকে কীভাবে কাজে লাগাতে পারি। আমাদের হাতে আজ ১৫ থেকে ২৫ বছর বয়সের ইয়ুথ রয়ে গেছে ৫৭%। এবং এডুকেশনে কিন্তু ৭২% লিটারিসি এদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। দিস ইজ ইয়োর রাইট টাইম যে এখন আমাকে জানতে হবে নেক্সট ফাইভ থেকে টেন ইয়ার্স বা ফিফটিন ইয়ার্স বাংলাদেশ কোন ইন্ডাস্ট্রির দিকে যেতে পারে। এটা কিন্তু ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করলে বের হয়ে যাবে বা ডিফারেন্ট যে স্টেক হোল্ডার আছে, ওদের সাথে আলাপ করলে বের হয়ে যাবে। বাংলাদেশের ইকোনমি যে গ্রো করবে; কোথায় যাবে? বা কোন কোন ইন্ডাস্ট্রি গ্রো করবে?

এখানে বসে যদি আপনি চিন্তা করেন ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রি হয়ে যাবে; ইটস আ রং। বিকজ, ইন্ডাস্ট্রি করতে গেলে যে ইনভেস্ট করবে সে চিন্তা করবে, আমার টাকা কোথা থেকে আসবে। টেকনোলজিস্ট যেমন চিন্তা করবে, তার থেকেও বেশি চিন্তা করবে সেই মানুষগুলো পাবে কি না; যে এটি রান করতে পারবে। আজ কিন্তু সেই লোকের অভাব। সুতরাং যখন স্টেক হোল্ডারের সাথে কথা বলবে, তখন কিন্তু বের হয়ে যাবে কারা ইন্ডাস্ট্রি করতে চায়। কী ধরনের ইন্ডাস্ট্রি করতে চায়। এই স্টেক হোল্ডারই বলে দেবে যে আমি ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্ডাস্ট্রি করছি এবং ১০ বছর পর কার ইন্ডাস্ট্রিতে সাপ্লাই করব। কাজেই আপনি কিন্তু জানতে পারেছন, ওই ইন্ডাস্ট্রিতে কতগুলো লোক লাগতে পারে। টেকনিক্যালি হোক আর ম্যানেজারিয়াল হোক; সুতরাং, ওই অনুযায়ী হিউম্যান রিসোর্স মিনিস্ট্রি ক্যাটাগরাইজ করবে। করে তারা এডুকেশন মিনিস্ট্রিতে দেবে যে পাঁচ বছরে এতগুলো গার্মেন্টস ওয়ার্কার দরকার, এতগুলো সুপারভাইজার দরকার, এতগুলো প্রডাকশন ম্যানেজার দরকার। টেক্সটাইলে এতগুলো এই দরকার, এতগুলো ওই দরকার। এভাবে তারা আইডিন্টিফাই করবে।

এডুকেশন মিনিস্ট্রি তখন যতগুলো এডুকেশন ইনস্টিটিউশন আছে, সেখানে দেখবে তার ক্যাপাসিটি এখন কেমন আছে। তখন সেও কিন্তু চাকরির গ্যারান্টি দিতে পারবে। বুঝবে, এই মানুষগুলো এই নিয়ে পড়াশোনা করলে এই বিভাগে চাকরি করতে পারবে। সে যখন এগুলোকে ভাগ করে দেবে অথবা মার্কেটে বলবে এই পরিমাণ  এই ধরনের লোক লাগবে অথবা এতগুলো ইনস্টিটিউট লাগবে।  তোমরা এদিকে অ্যাটেনশন দাও। তখন কিন্তু হু হু করে ইনস্টিটিউটগুলো ডেভেলপ করবে।

মানুষ পড়তে চায় সেই সাবজেক্টে, যেখানে সে চাকরি পাবে। সো দি এডুকেশন হ্যাজ টু বেইজ অব দ্য জব। এই মাঝের কাজগুলো করবে হিউম্যান রিসোর্স মিনিস্ট্রি। হিউম্যান রিসোর্স মিনিস্ট্রিকে সাজাতে হবে যে আমার এই ইনস্টিটিউট থেকে এতগুলো স্টুডেন্ট বের হবে। এবং সেটার সাথে সাথে কিন্তু একটা সোশ্যাল মুভমেন্টের দরকার হবে; মানুষের মাইন্ডসেট ভাঙার জন্য।

আমাদের দেশে যখন ওয়ার্ল্ড ব্যাংক-আইএমএফের অনেক লোক আসে, তখন আমাদের দেশের মন্ত্রীরাও কিন্তু ওদের সঙ্গে মিটিং করে। আপনি খেয়াল করে দেখবেন, ওদের মেজরিটি কিন্তু ইউনিভার্সিটি গোয়িং না। ওরা কিন্তু ডিপ্লোমা কোর্স বা এক্সপেরিয়েন্সের ভিত্তিতে আজ একটা জায়গায় এসেছে। এবং ওই কনসালটেন্টরা ওদের সঙ্গে এনে এ দেশে মিটিং করে। আমরা তখন ওদের দেখে বাহবা দিই, অথচ নিজেদের ছেলেমেয়েদের ক্ষেত্রে এগুলো পাত্তা দিই না।

ইটস নাথিং রং। কেননা, আমাদের দেশ স্বাধীন হওয়ার আগ পর্যন্ত কিন্তু ব্যবসার প্রায়োরিটি ছিল না। প্রায়োরিটি ছিল গভর্নমেন্ট সার্ভিসে। গভর্নমেন্ট সার্ভিসে যেতে হলে কিন্তু বিবিএ, অনার্স, মাস্টার্স করার দরকার ছিল।

শিল্পায়নে বাধা

আমি সেদিন প্রাইম মিনিস্টারকে বলেছি যে আপা, আপনি কিন্তু ২০২১ সালের মধ্যে গার্মেন্টস সেক্টর থেকে ৫০ বিলিয়ন ডলার এক্সপোর্ট দেখতে চেয়েছেন এবং আমরাও বলেছি যে ৫০ বিলিয়ন না, আমরা আরও বেশি দেব। বাট উই নিড ওনলি ওয়ান থিং, গ্যারান্টি ফ্রম ইউ অ্যান্ড পলিসি সাপোর্ট। তখন উনি দাঁড়ালেন, দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, সেটি কী? আমি বললাম, বয়লারে গ্যাস কানেকশন। আপনি আমাকে বয়লারে গ্যাস কানেকশনটা শুধু দিয়ে দেন; এতেই এই আরএমজি সেক্টর আপনাকে গ্যারান্টি দিতে পারবে, ৫০ বিলিয়ন ডলারের এক্সপোর্ট ইন ২০২১; আমি এটকু বিশ^াস করি। অনেকে অনেক কথা বলবে, বাট আই নো একজাক্টলি আওয়ার ইন্ডাস্ট্রি। ইন গার্মেন্টস অ্যান্ড টেক্সটাইল, বয়লারের গ্যাসের বিকল্প কিন্তু তেল না। বাট ইন্ডাস্ট্রিতে বয়লার ইউজ করতেই হবে। এবং এই বয়লার যদি গ্যাস বেইজড না হয়, উই কান্ট অ্যাফোর্ড। বয়লার ছাড়া এগুলো চলবে না এবং বয়লারটা গ্যাস বেইজডই হতে হবে।

এটা যদি তেল বেইজড হয়, এটা যদি ইলেক্ট্রিসিটি বেইজড হয়, তখন খরচ বেড়ে যাবে। সো উই নিড ইট, যদি আপনি এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপের গ্রোথ কিপ অন দেখতে চান। আমরা কিন্তু গ্যাস আর সহজে দিতে পারব না। উই হ্যাভ অলরেডি ইট শর্টেইজ। আমাদের এলএনজি আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ডিউরিং দিস পিরিয়ড, আমি মনে করি একজিসটিং ইন্ডাস্ট্রি, অনেকগুলো একজিসটিং ইন্ডাস্ট্রি আছে, যেগুলো এক্সপানশন না করলে সিক হয়ে যাবে। সেগুলোকে রান করার জন্য যদি ওর লোডপাওয়ার দরকার হয়, তবে দিতে হবে। দেওয়া উচিত। তাহলে আপনি দেখবেন নেক্সট টু থ্রি ইয়ার্স এই পিরিয়ডের মধ্যে ব্যাংকে ডিফল্টারের লিস্ট কম পাবেন, ক্লাসিফায়েড একাউন্ট কমে যাবে;  ব্যাংকগুলোও হেলদি হবে, ইন্ডাস্ট্রিও ক্যান সার্ভাইভ। আবার যখন এলএনজি আসবে, তখন এগুলো না হলেও চলবে।

সেকেন্ড, আমি আবারও বলছি হিউম্যান রিসোর্স। আপনি বোথ প্রফেশনাল ম্যানেজার বলেন আর স্কিলড ওয়ার্কার বলেন, এ দুই জায়গাতেই আমার প্রচুর ঘাটতি রয়েছে।

থার্ড হচ্ছে, অবশ্যই অবশ্যই ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইজ ভেরি ইম্পর্টেন্ট এবং এই ইনফ্রাস্ট্রাকচার যদি টানতে হয়, আমাকে কয়েকটা জিনিস টানতে হবে। দেখেন, বাংলাদেশে ইকোনমি সাইজ যে রকম বড় হচ্ছে, তাতে ঢাকা-চিটাগং ফোর লাইন ইজ নট এনাফ। এটা বাড়াতে হবে। চিটাগং পোর্ট ক্যাপাসিটি বাড়ানোর চেয়েও এফিসিয়েনসি লেভেলকে আরও রিচ করাতে হবে।

গভর্নমেন্টের ইকোনমিক জোন করার যে উদ্যোগ; এটাকে স্বাগত জানাই। বাট এটা ইমপ্লিমেন্টেশন পিরিয়ড, ফ্রেইজারটাও, এগুলোও কিন্তু স্পেসেফিক করে দেওয়া উচিত। ম্যানেজার কিন্তু একটা জিনিস বোঝে, আমি করব এটাতে এনাফ না। হি ওয়ান্টস টু নো দ্য ডেইট অব ইমপ্লিমেন্টেশন ফিনিস। সবগুলোকে টাইম বেইজ সেট করে দিতে হবে। যদি না করেন, সবাই বসে থাকবে। কারণ, মানুষের এক্সপেরিয়েন্স খুব একটা ভালো না।

শিল্পায়নে প্রযুক্তির প্রভাব

বাংলাদেশের মানুষ যখন মেশিন কেনে, তখন ২০ বছর আগের মেশিন কেনে না। বরং আগামী ২০২০ সালে যে মেশিন হবে, সেটা যদি বাজারে পায়, তাহলে সেটা কেনার চেষ্টা করে। সো উই হ্যাভ দ্যাট অ্যাটিচিউড এবং উই রিয়েলি গো ফর ইট। কিন্তু প্রবলেমটা হয় মেনটেইন এবং হ্যান্ডেলিংয়ে। সেখানে কিন্তু আমার এনাফ ট্রেইন্ড লোক নেই। সব বিবিএ আর এমবিএ পড়–য়া। সেই দুঃখের কথাই কিন্তু কিছুক্ষণ আগে আমি বলেছি। নট অনলি ম্যানেজার। উই নিড আ ফিজিক্স স্টুডেন্ট, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, কেমিস্ট, বায়োলোজিক্যাল সায়েন্স। এখন ওগুলো কিন্তু কেউ পড়ছে না। অথচ সায়েন্স ইজ সো ইম্পর্টেন্ট।

যখন আপনার এই মোস্ট মডার্ন ক্যামেরা ডিস্টার্ব শুরু করে, তখন আমার মতো কেন, আমার থেকে এক্সপার্ট বিবিএ-এমবিএ করা লোক এনে বসাবেন; দেখবেন সে শুধু তাকাবেই; সে আর এটা পারবে না। আর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউট থেকে একটা বাচ্চা ছেলে নিয়ে আসেন, দেখবেন সে ঠিকই এটা ভালো করে দিচ্ছে। বিকজ হি ইজ ইঞ্জিনিয়ার। আজ আমাদের দেশে ওই জায়গাগুলোতে প্রচুর গ্যাপ হয়ে যাচ্ছে। সুতরাং আমার মাথায় রাখতে হবে, আমি যখন টেকনোলজি আনব, তখন কিছুদিনের জন্য হলেও প্রয়োজন হলে ফরেন টেকনিক্যাল লোক আনতে হবে। ওর সাথে সাথে আমার এডুকেশন যেন এনাফ স্টুডেন্ট বের করতে পারে, যারা তাদের সাথে থেকে থেকে ট্যাকনোলজি ক্যাপাসিটিটা বিল্ডআপ করতে পারে। এরপর ওরাই হবে আমাদের ফিউচার লিডার।

নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য করণীয়

বাঙালি কিন্তু বর্ন এন্টারপ্রেনার। এটা সব জেনারেশন। বাট সব সময় ইম্পর্টেন্ট যে জিনিস তা হলো, ব্লকড হওয়া উচিত না। এটাকে ওপেনআপ করে দেওয়া উচিত। নতুনরা যাই করুক, সেটা যেন সে এনজয় করে। যে প্রফেশনে এনভলব হচ্ছে, সেটার প্রতি যদি রেসপেক্ট না থাকে, ভালোবাসা না থাকে, জাস্ট মানি মেকিংয়ের কথা যদি চিন্তা করে, তবে সফল হবে না। সে যদি মনে করে সে এটাকে ভালোবাসতে পারবে, এনজয় করতে পারবে, রেসপেক্ট করতে পারবে, তবে এখানে আসা উচিত। এসেই তার মাথায় রাখতে হবে যে এখানে সময় দিতে হবে। মেশিন কেনা এবং হিউম্যান রিসোর্স টিমকে সেট করা দুটি কিন্তু দুই জিনিস। সে যখন হিউম্যান রিসোর্সটাকে সেট করে ফেলতে পারবে, দ্যান হি ক্যান ফ্লাই। এই পিরিয়ডটা কিন্তু ওকে দিতে হবে। যেখানে পেশার প্রতি পছন্দ ও দুর্বলতা আছে, সেই মানুষগুলোকেও জড়ো করতে হবে। না হলে ভাগ্য ভালো হলে সফল হতে পারবে অথবা ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

ইয়ুথরাই দেশের ভবিষ্যৎ

আমার মনে হয়, ইয়ুথদের সব কিছু আছে। তাদের কম্পিটেন্সি আছে, তারা চ্যালেঞ্জ অ্যাকসেপ্ট করতে পারে, দে ক্যান রিয়্যালি থিঙ্ক বিগ। এভরিথিং ইজ উইথ দেম। বাট ওয়ান থিং ইজ মিসিং। দ্যাট ইজ ইমোশন। এই ইমোশনকে যদি তারা অ্যাটাচ করতে পারে, তবে তারা পারফেক্ট লিডারে পরিণত হবে। নো ওয়ান ক্যান টাচ দেম। এই ইমোশন তাদের তিনটি জিনিস দেবে:

এক. হোয়াই হি ডিফারেন্ট টু এনি ম্যান। এটা তার মধ্যে ঢোকাবে। এবং সে সহজে কারও ক্ষতি করতে পারবে না। সে রেসপেক্ট করবে এবং রেসপেক্ট শেখাতে পারবে।

দুই. সাসটেইনিবিলিটি কিন্তু ডিপেন্ড করে উইথ ইমোশনাল টাচ। এটা কিন্তু শুধু ব্যবসার জন্য নয়। আমি ব্যবসা করলাম, তাই ওর সাথে সম্পর্ক থাকল এবং ব্যবসা করলাম না, সম্পর্কও থাকল না; এমন নয়।

তিন. হি ক্যান রিয়েলি এনজয় হিজ লাইফ। নাহলে সে কিন্তু সব সময় চোখের মধ্যে ডলার আর টাকাই দেখবে। বাট হি নিড সামটাইমস ফর হিজ ফ্যামিলি অ্যান্ড ফর হিমসেল্ফ। হুইচ উইল আল্টিমেটলি গিভ হিম আ ইনসেনটিভ টু ওয়ার্ক মোর অ্যান্ড মোর ফর দ্য নেক্সট ডে। এটার জন্য যে পিসফুল মেন্টালিটি দরকার, মাইন্ডসেট দরকার, সেটার জন্য কিন্তু ইমোশন ইজ নেসেসারি।