দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদার সমাধান কি সৌরশক্তি?

নতুন একটি গবেষণা বলছে, যদি পরিকল্পনাকে অগ্রাধিকার দেয়া হয় তাহলে ২০৪১ সালের মধ্যে সৌরশক্তি থেকে বাংলাদেশ ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সহজেই উৎপাদন করতে পারবে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের মোট উৎপাদন ক্ষমতার ৫০ শতাংশ পাওয়া যাবে সৌরশক্তি থেকে।

তবে সমীক্ষা আরও বলছে, ‘বর্তমান অবস্থা’ বজায় থাকলে ২০৪১ সালের মধ্যে কমপক্ষে ৮ হাজার মেগাওয়াট এবং ‘মাঝারি ধরনের প্রচেষ্টা’ নেয়া হলে ২৫ হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন হতে পারে।

‘ন্যাশনাল সোলার এনার্জি অ্যাকশন প্ল্যান ২০২১-২০৪১’ শীর্ষক গবেষণাটি টেকসই এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (স্রেডা) জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহযোগিতায় পরিচালনা করেছে।

বিদ্যুৎ ব্যবস্থার বিদ্যমান মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৪১ সালের মধ্যে উৎপাদিত বিদ্যুতের ৩৫ শতাংশ করে আসবে আমদানিকৃত এলএনজি (তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) ও আমদানিকৃত কয়লা থেকে, ১৫ শতাংশ আসবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে, ১০ শতাংশ আসবে পারমাণবিক শক্তি থেকে ও পাঁচ শতাংশ আসবে জ্বালানি তেল থেকে এবং দেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াবে ৬০ হাজার মেগাওয়াট।

ন্যাশনাল সোলার এনার্জি অ্যাকশন প্ল্যান ২০২১-২০৪১ সম্পর্কে স্রেডার চেয়ারম্যান এবং বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আলাউদ্দিন বলেন, ‘এটি গবেষণার চূড়ান্ত প্রতিবেদনের খসড়া মাত্র এবং এর বাস্তবায়ন সরকারের কৌশলগত নীতিমালা গ্রহণের পদক্ষেপের ওপর নির্ভর করবে।’

তিনি বলেন, যেহেতু পরিকল্পনাটি দীর্ঘমেয়াদি তাই এটি দেশের ১০০ বছরের ‘ডেল্টা পরিকল্পনা ২১০০’র সাথে সংযুক্ত করতে হবে।

স্রেডার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের মোট উৎপাদন ক্ষমতা ২২ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে বর্তমানে বিভিন্ন নবায়নযোগ্য উৎস থেকে মোট ৬৪৯.৬১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এর মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ থেকে ৪১৫.৬৮ মেগাওয়াট, বায়ুশক্তি থেকে ০.৯ মেগাওয়াট, হাইড্রো থেকে ২৩০ মেগাওয়াট, বায়োগ্যাস থেকে ০.৬৩ মেগাওয়াট এবং বায়োমাস থেকে ০.৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে।

এনার্জি অ্যাকশন প্ল্যান ২০২১-২০৪১ অনুযায়ী, দেশে বড় আকারের সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাধা হিসেবে জমির সংকট দেখা দিয়েছে। তবে কমিটি সারা দেশে সম্ভাব্য বেশ কয়েকটি স্থান চিহ্নিত করেছে এবং এর জন্য কিছু প্রস্তাব দিয়েছে।

স্রেডার এক শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা ইউএনবিকে জানান, বৃহত্তম নদী যমুনা ও পদ্মাসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভূমির পুনরুদ্ধার এ সংকটের সম্ভাব্য সমাধান হতে পারে।

বিভিন্ন সংস্থা এবং জ্বালানি বিশেষজ্ঞ দেশের বর্তমান বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে নীতি নির্ধারকদের পরিচ্ছন্ন জ্বালানির উৎস হিসেবে সৌরবিদ্যুতের বিকাশে আরও বেশি মনোনিবেশ করার আহ্বান জানিয়ে আসছেন।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) সরকারকে ভবিষ্যতের কয়লা ও আমদানি করা এলএনজি-ভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পগুলো থেকে সরে সৌর ও অন্যান্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি-ভিত্তিক প্রকল্পে যেতে বলছে। কারণ নতুন প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যয় কমে যাচ্ছে।

স্রেডার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসআরইএ) সিনিয়র সহ-সভাপতি মুনাওয়ার এম মঈন বলেন, এ পরিকল্পনায় অবশ্যই বাজেট, তহবিলের সম্ভাব্য ক্ষেত্র, কয়লা ও ভারী জ্বালানি তেলের (এইচএফও) বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো সৌরশক্তি দিয়ে প্রতিস্থাপনের বিষয়গুলো চিহ্নিত করতে হবে। ‘শুরুর জন্য কিছু ক্ষেত্রে সোলার পাওয়ার স্টোরেজ ভালো উপায় হতে পারে।’

তিনি সৌরবিদ্যুতের বিভিন্ন ধরন যেমন ভূমি বা ছাদে স্থাপিত সোলার প্যানেলের গ্রিডে সংযোগ এবং সেচ পাম্প, কোল্ড স্টোরেজ ও এসএমই যন্ত্রপাতি তৈরির মতো উৎপাদনশীল কাজে সৌরশক্তি বিতরণের বিষয়গুলোও চিহ্নিত করার আহ্বান জানান।

মঈন যেকোনো জাতীয় সৌরশক্তি পরিকল্পনায় বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণেরও দাবি জানান।

সম্প্রতি বিশিষ্ট জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ইজাজ হোসেন এক সেমিনারে বলেন, দেশে প্রতিবেশী ভারতের মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে আরও বেশি করে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত।

তিনি বলেন, ‘সৌরবিদ্যুতের অগ্রগতি মোবাইল ফোনের অগ্রগতির মতো। ১০ বছর আগে কেউ কল্পনাও করতে পারেনি যে প্রত্যেকের হাতে স্মার্টফোন থাকবে। তাই, অদূর ভবিষ্যতে সৌরশক্তি হয়ত সবচেয়ে সস্তা জ্বালানির জায়গা দখল করে নেবে।।’