বুধবার ৩১ জানুয়ারি সারাদেশ থেকে পূর্ণগ্রাস চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে। একই সাথে পূর্ণগ্রাস ও চন্দ্রগ্রহণ একটি বিরল ঘটনা। শেষবার এমনটা ঘটেছিল ১৫২ বছর আগে। ঢাকার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৫টা ৩৭ মিনিটে চাঁদ দিগন্তের উপরে ওঠার পর থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা ৫টা ৪৮ মিনিটে আংশিক গ্রহণ ও ৬টা ৫১মিনিটে পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ শুরু হবে।
পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণের মধ্যবর্তী অংশ ৭টা ২৯ মিনিটে সংঘটিত হবে। পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ সর্বমোট এক ঘণ্টা ১৬ মিনিট স্থায়ী হবে। রাত ১০টা ৮ মিনিটে চন্দ্রগ্রহণের উপচ্ছায়া পর্যায় শেষ হবে।
এদিকে জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক ঘটনা দেখাতে দেশের বিজ্ঞান সংগঠন অনুসন্ধিৎসু চক্র নানা প্রস্তুতি নিয়েছে। রাজধানীর কেন্দ্রীয় ও বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ ক্যাম্পটি অনুষ্ঠিত হবে ঢাকার গ্রিন মডেল টাউন, মান্ডায়।
মেঘমুক্ত আকাশ থাকা সাপেক্ষে ক্যাম্প শুরু সন্ধ্যা ৫টা ৩৭ মিনিট থেকে। গ্রহণ শেষ হওয়া পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ ক্যাম্প সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
পূর্ণ চন্দ্রগ্রহণ যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য ক্যাম্পে ১৪ ইঞ্চি এবং আট ইঞ্চি মিড ক্যাসিগ্রেইন টেলিস্কোপ, ছয় ইঞ্চি ওরিয়ন টেলিস্কোপ ও ফটোমিটার থাকবে। এছাড়াও গ্রহণ চলাকালীন সময়ে কেন্দ্রীয় ক্যাম্পে বড় পর্দায় সরাসরি দেখানো হবে।
এছাড়াও অনুসন্ধিৎসু চক্রের ফেসবুক পেইজে সরাসরি সম্প্রচারের ব্যবস্থা থাকবে। এই ক্যাম্প থেকে ছবি ও বৈজ্ঞানিক তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
ঢাকার বাইরে অনুসন্ধিৎসু চক্র রাজশাহী শাখা ও অ্যাস্ট্রোনমি অ্যান্ড সায়েন্স সোসাইটি অব রুয়েট যৌথভাবে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে, অনুসন্ধিৎসু চক্র পঞ্চগড় শাখা পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন আইসিটি বিভাগের সহযোগিতায় পঞ্চগড় সদর সরকারি অডিটোরিয়াম প্রাঙ্গণে ও অনুসন্ধিৎসু চক্র বরিশাল শাখা বরিশাল বিএম কলেজ খেলার মাঠে চন্দ্রগ্রহণ পর্যবেক্ষণ ক্যাম্পের আয়োজন করেছে।
এই রাতে কক্ষপথে একইসঙ্গে পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্য নৃত্য করবে! এর ফলে ওই রাতে সুপারমুন বা চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে। এমনটা ঘটছে পৃথিবীকে কেন্দ্র করে চাঁদের অসম প্রদক্ষিণের কারণে। চাঁদ পৃথিবী থেকে গড়ে দুই লাখ ৩৯ হাজার মাইল দূর থেকে প্রদিক্ষণ করে। কিন্তু কক্ষপথে এর বৃত্ত পূর্ণ না। কখনও এটি পৃথিবীর অনেক কাছে চলে আসে (অনুভূ) আবার কখনও এটি দূরে সরে যায় (অপভূ)।
চাঁদের অনুভূর সময় সূর্য-চাঁদ-পৃথিবী কক্ষপথে সমান্তরালে থাকাবস্থায় সুপারমুন হয়। কেননা এটি পৃথিবীর দুই লাখ ২৩ হাজার ৬৯ মাইল কাছে চলে আসবে। এ কারণে ১৫ জানুয়ারির তুলনায় চাঁদ ১৩ শতাংশ চওড়া ও ২৮ শতাংশ বড় দেখা যাবে। সেদিন চাঁদ পৃথিবী থেকে সর্বোচ্চ দূরবর্তী অবস্থানে ছিল।
তবে সুপারমুনের ক্ষেত্রে চাঁদ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশকিছুটা বড় দেখা যায়। কিন্তু ৩১ জানুয়ারি এটিকে ব্লু সুপারমুন বলার কারণ হচ্ছে এটি চলতি মাসের দ্বিতীয় সুপারমুন। এ মাসের প্রথম দিন পূর্ণ চাঁদ দেখা যায়, যেটি ছিল বড় ও উজ্জ্বল সুপারমুন।
কিন্তু ব্লু মুন প্রতি ২ দশমিক ৭ বছর পর দেখা যায়। চাঁদের সঙ্গে দিনপঞ্জিকার অসামঞ্জস্যতার কারণে এটি দেখা যায়। পূর্ণিমা থেকে ক্ষয়িঞ্চু এই চক্র পূরণ করতে চাঁদের ২৯ দিন সময় লাগে। যা ক্যালেন্ডারের মাসের চেয়ে কিছুটা কম। ওইদিন রাতের শেষ আকর্ষণ হচ্ছে চন্দ্রগ্রহণ।
নাসা জানাচ্ছে, উত্তর আমেরিকা জুড়ে এই চন্দ্রগ্রহণ দেখা যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ব উপকূলের বাসিন্দারা দিনের প্রথম প্রহরে চাঁদ রক্তাভ আকার ধারণ করছে এমনটা দেখতে পাবেন। তবে পশ্চিম উপকূলের বাসিন্দারা এরচেয়েও বেশি কিছু দেখতে পাবেন।
তবে হাওয়াই, আলাস্কা, অস্ট্রেলিয়া ও পূর্ব এশিয়ার মানুষরা পুরো চন্দ্রগ্রহণটা দেখতে পাবেন। যদি আপনি বাইরে যেতে না পারেন কিংবা মেঘের কারণে দেখতে না পারেন তাহলেও চিন্তার কোনো কারণ নেই, কেননা নাসা টিভি পুরো ঘটনাটাই সম্প্রচারের পরিকল্পনা করেছে।
আজকের বাজার:এলকে/ ৩১ জানুয়ারি ২০১৮