নক আউটে বাংলাদেশ

ইনজুরি টাইমের গোলে নক আউটে বাংলাদেশ

এশিয়ান গেমসে কাতারের বিরুদ্ধে এক অবিস্মরণীয় জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। আজ ফিফা র‍্যাংকিংয়ে প্রায় ১০০ তম ঘর এগিয়ে থাকা কাতারকে ১-০ গোলের ব্যবধানে হারিয়েছে জামাল ভুঁইয়ারা। আর এর মধ্য দিয়ে দেশের ফুটবল ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এশিয়ান গেমসের নক আউট পর্বে উঠেছে তারা।

ফিফা র‌্যাংকিংয়ে কাতারের অবস্থান ৯৮তম। বাংলাদেশ আছে ১৯৪তম স্থানে। এশিয়ার অন্যতম শক্তিশালী এই দলের বিরুদ্ধে এর আগে কখনোই জয়ের দেখা পায়নি বাংলাদেশ। অবশ্য অনূর্ধ ১৬ দলের বিরুদ্ধে একটি জয়ের রেকর্ড আছে বাংলাদেশের। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ ফুটবলে সেই জয়টি এসেছিল।

অবশ্য আজকের এ ম্যাচে ড্র করলেও নক আউট পর্বে উঠে যেতো বাংলাদেশ। কিন্তু কাতারকে হারিয়ে নক আউটে উঠায় এই অর্জন অনেক বেশি আনন্দময় হয়ে উঠেছে।

‘বি’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে উজবেকিস্তানের কাছে ৩-০ গোলে হার দিয়ে শুরু করেছিল জামাল ভূঁইয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল। দ্বিতীয় ম্যাচে এগিয়ে থেকেও ১-১ গোলে ড্র করতে হয় শক্তিশালী থাইল্যান্ডের বিপক্ষে।

বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টায় ইন্দোনেশিয়ার বেকাসির প্যাট্রিয়ট চন্দ্রভাগা স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হয়।

ম্যাচের শুরু থেকেই বল নিয়ন্ত্রণে রেখে একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে কাতার। এর বিপরীতে অনেকটাই নিষ্প্রভ ছিল কোচ জেমি ডে’র দল বাংলাদেশ।

শুরু থেকেই বেশকটি সুযোগও মিলেছে কাতারের। ম্যাচের ২১তম মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে ফ্রি-কিক পায় কাতার। ফ্রি-কিক থেকে আলসাদির নেয়া দুর্দান্ত শট থামিয়ে দেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা।

ম্যাচের ২৭ মিনিটে আবারও সুযোগ পেয়েছিল কাতার। তবে লক্ষ্যহীন শট খেলে সেই সুযোগ নষ্ট করেন মেশাল আলশামারি। এরপর আক্রমণ জোরালো হয় কাতারের। আর তাতেই ম্যাচের ৩৬তম মিনিটে গোলের দারুণ সুযোগ পেয়েছিল তারা। তবে সতীর্থের কাছ থেকে আসা বল পেলেও লক্ষ্যহীন শট খেলেন হাতিম হাসানিন। প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে হলুদ কার্ড দেখেন কাতারের আদেল আল আহমেদ। গোলশূন্য অবস্থাতেই বিরতিতে যায় দু’দল।

বিরতির পর ইনজুরির কারণে গোলরক্ষক মারওয়ান বাদরেলদিনের বদলি হিসেবে মোহাম্মদ ইব্রাহিমকে মাঠে নামান কাতারের কোচ উনাই মেলগোসা।

ম্যাচের ৪৯ মিনিটে আবদেল রহমানের ফাউলের শিকার হন শুশান্ত ত্রিপুরা। ছয় মিনিট পর আবারও তাকে ফাউল করেন হাতিম।

ম্যাচের ৬০ মিনিটে আরেকটি সুযোগ পেয়েছিল কাতার। কিন্তু ডি-বক্সের বাইরে থেকে হাজেম শেহাতার জোরালো শট পোস্টের ওপর দিয়ে চলে যায়।

এরপর ম্যাচের ৬৫ মিনিটে দারুণ এক সুযোগ পেয়েছিল বিপলো আহমেদ। ডি-বক্সে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়দের কাটিয়ে ডান পায়ের জোরালো এক শট নেন তিনি। তবে তার দুর্দান্ত শট থামিয়ে দেন কাতার গোলরক্ষক। এক মিনিট পর মাহবুবুর রহমানকে উঠিয়ে বদলি হিসেবে মাসুক মিয়া জনিকে মাঠে নামান কোচ জেমি ডে।

ম্যাচের ৭৪ মিনিটে আরেকটি দারুণ সুযোগ পেয়েছিলেন বিপলো। তবে ডি-বক্সে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়ের গায়ে লেগে বল মাঠের বাইরে চলে যায়।

নির্ধারিত সময় শেষে অতিরিক্ত মিনিটের খেলা চলছিল। মাসুক মিয়া জনির পাস থেকে বল ধরে বক্সে ঢুকে জামাল ভূঁইয়া গড়ানো শটে গোল করেন।

এরপর কাতার গোল পরিশোধে মরিয়া হলেও আর কোনও সুযোগ দেয়নি বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত ১-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে লাল-সবুজের জার্সিধারীরা।

১৯৭৮ সালে ব্যাংকক এশিয়ান গেমস থেকে শুরু। মাঝে দুই আসর (১৯৯৪ ও ১৯৯৮) ছাড়া এই এশিয়াডে নিয়মিতই অংশ নিয়ে আসছে বাংলাদেশ ফুটবল দল। এশিয়ার আঞ্চলিক এই বহু-ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় এ পর্যন্ত মোট ২৩টি ম্যাচ খেলে জয় পেয়েছে মাত্র তিনটিতে। বাকি ২০টিতেই হেরেছে। কোনোবারই প্রথম রাউন্ডের বাধা টপকাতে পারেনি। ‘বি’ গ্রুপে বাংলাদেশকে ৩-০ এবং কাতারকে ৬-০ গোলে হারিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে নকআউট পর্বে আগেই পা দিয়েছে উজবেকিস্তান।

নক আউট পর্বে আগামী ২৪ আগস্ট ইরানের মুখোমুখী হবে বাংলাদেশ।