জনগণের টাকা লুট করে কেউ পার পাবে না জানিয়ে নতুন বছরে বড় দুর্নীতিবাজদের তালিকা করে তাদেরকে ধরার ঘোষণা দিয়েছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন,সব দুর্নীতিবাজকে একসঙ্গে ধরা সম্ভব নয়। তবে আমরা আগামী বছর থেকে তদন্ত ও প্রমাণ সাপেক্ষে বড় বড় দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনতে আমরা অভিযান পরিচালনা করব।
শনিবার ৯ ডিসেম্বর সকালে সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সামনে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসের অনুষ্ঠানের উদ্বোধনের সময় এসব কথা বলেন দুদক চেয়ারম্যান।
ইকবাল মাহমুদ দুদক চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে কমিশনের কার্যক্রমে বেশ গতি এসেছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফাঁদ পেতে অভিযুক্তদের হাতেনাতে ধরার কাজ শুরু হয়েছে। বেশ কয়েকজন সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এই সময়ের মধ্যে আটক হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে মামলাও চলছে।
এই চেষ্টা তারা আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চান মন্তব্য করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন,আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই জনগণের টাকা লুটপাট করার দিন শেষ। জনগণের টাকা নিয়ে আর ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না। আগামী বছর থেকে সব খাতে তালিকা করে বড় বড় দুর্নীতিবাজদের ধরে আইনের আওতায় আনা হবে।
মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর বাংলাদেশে এবারই প্রথম দিবসটি জাতীয়ভাবে পালিত হচ্ছে। এর আগে শুধু দুদকে আভ্যন্তরীণ কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে দিনটিকে পালন করা হতো। আর এই সীমাবদ্ধতার অতিক্রম করায় উচ্ছ্বাসও প্রকাশ করেন দুদক চেয়ারম্যান। কারও একার পক্ষে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা সম্ভব নয় মন্তব্য করে এ জন্য সরকার, বিরোধী দল ও জনগণসহ সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বানও জানান দুদক চেয়ারম্যান।
বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চু ও সাবেক পরিচালকদের দুই দফায় জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়ে জানতে চাইলে দুদক প্রধান বলেন, বিষয়টি এখনো তদন্তাধীন। তাই এখনই কিছু বলা ঠিক হবে না। তবে জনগণের টাকা নিয়ে যারা ছিনিমিনি খেলছে তাদের রেহাই নেই।
‘বেসিক ব্যাংক শুধু নয়, দুর্নীতি করলে কেউই রেহাই পাবে না। অপরাধ করলে শাস্তি পেতেই হবে, এটাই আমাদের স্ট্যান্ড।’
ব্যাকিং খাতে যারা কাজ করছেন তাদের উদ্দেশ্যে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা একটি ম্যাসেজ দিতে চাই, আপনারা যারা জনগণের অর্থ নিয়ে কাজ-কারবার করছেন, আপনারা ন্যায়নীতি মানবেন, ব্যাংকি ল অ্যান্ড প্র্যাকটিস সম্পর্কে জানবেন এবং সে অনুযায়ী কাজ করবেন। জনগণের টাকা নিয়ে ছিনিমিনি খেলার দিন শেষ।’
‘বিদেশে পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে দুদকের কার্যক্রম চলছে। মামলা হচ্ছে, আরও মামলা হবে, তদন্ত হবে, চার্জশিট দিতে হবে। আমরা ইন্টারপোলের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেব’- বলেন দুদক প্রধান।
২০০৩ সালে ৯ ডিসেম্বরকে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবসটিকে ২০০৭ সাল থেকে পালন করতে শুরু দুদক। তবে দুদকের পক্ষ থেকে প্রতি বছর দিবসটি পালন করা হলেও দেশে সরকারিভাবে দিবসটি পালিত হতো না।
এ প্রেক্ষাপটে দুর্নীতি দমন কমিশন ৯ ডিসেম্বরকে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস পালনের অনুরোধ জানিয়ে ২০১৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে চিঠি দেয়। আর সরকার ২০১৭ সালের ১৮ জুলাই ৯ ডিসেম্বরকে ‘আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস’ ঘোষণা করে।
‘আসুন, দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হই’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে আজ দিবসটি পালন করছে দুদক। এ জন্য কমিশনের মিডিয়া সেন্টারে ৯ ডিসেম্বর হতে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত দুর্নীতিবিরোধী সর্বসাধারণের গণস্বাক্ষর কর্মসূচির ব্যবস্থা করা হয়।
আজকের বাজার:এলকে/এলকে ৯ ডিসেম্বর ২০১৭