নাইজেরিয়ানের প্রেমের টানে ঢাকায় এসে নিঃস্ব অস্ট্রেলিয়ার তরুণী

এক নাইজেরিয়ানের সঙ্গে অনলাইন ডেটিং অ্যাপে পরিচয়ের পর গড়া প্রেমের টানে ঢাকায় এসে প্রতারণার শিকার হয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার তরুণী কেইলাহ জেন সোমার্স (২৪)। কেইলাহর ভাষ্য, তিনি নাইজেরিয়ার তরুণ জর্জ একপুনবির টানে ঢাকায় আসেন। সেই জর্জ তাকে নির্যাতন করেছেন। শেষে তার ব্যাগ থেকে ডলার চুরি করে পালিয়েছেন।

কেইলাহ অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বাসিন্দা। জর্জ ঢাকার মিরপুর ডিওএইচএসে থাকতেন। ঢাকায় গার্মেন্টের ব্যবসা করেন বলে পরিচয় দিয়েছিলেন কেইলাহকে।

কেইলাহর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জর্জের ডাকে সাড়া দিয়ে গত ৩০ নভেম্বর তিনি ঢাকায় আসেন। মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় জর্জের ভাড়া বাসায় ওঠেন তিনি। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি তাদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ঢাকায় আসার কিছুদিনের মধেই জর্জের আচরণ বদলে যেতে থাকে। গত ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসের বাসাভাড়া থেকে শুরু করে খাওয়া, ঘোরাঘুরিসহ সব কিছুর খরচই কেইলাহকে দিতে হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া থেকে সঙ্গে আনা ১০ হাজার ডলারের বেশির ভাগই এভাবে খরচ হয়ে যায়।

কেইলাহ বলেন, এর মধ্যে তিনি বুঝতে পারেন জর্জ আসলে কোনো কাজ করেন না। এমনকি বাংলাদেশে তার ভিসার মেয়াদও অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জর্জ খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে শারীরিক নির্যাতন করেন। পরে ১৪ ফেব্রুয়ারির আগে জর্জ বাসা ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যান। আর যাওয়ার সময় তার ব্যাগে থাকা প্রায় দেড় হাজার ডলার চুরি করে নিয়ে যান। এরপর ১৭ ফেব্রুয়ারি তিনি জর্জের বাসা থেকে বেরিয়ে আলাদা থাকা শুরু করেন।

কেইলাহ বলেন, প্রথমে ভেবেছিলাম অস্ট্রেলিয়া ফিরে যাব। সেই ভাবনা থেকে ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ান দূতাবাসে যোগাযোগ করি। তারা বিমানভাড়া ও যাতায়াত খরচ বাবদ আমাকে আড়াই হাজার ডলার ঋণ দেয়। কিন্তু এরপর আমি বাংলাদেশেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। বর্তমানে দূতাবাসের দেওয়া লোনের অর্থ দিয়েই চলছি।

কেইলাহ জানালেন, তার বয়স যখন মাত্র চার বছর, তখনই তার মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়ে যায়। এরপর সিডনিতে বাবার সঙ্গেই বড় হতে থাকেন কেইলাহ। বাবার আচরণে ক্ষুব্ধ হয়ে ১৪ বছর বয়সে ঘর ছাড়েন তিনি। এরপর একেক সময় একেক ধরনের কাজ করে নিজের জীবন চালানো শুরু করেন। এভাবে জীবন চলছিল।

ঢাকায় এসে প্রতারণার শিকার হলেও বাংলাদেশের প্রকৃতি ও বাঙালির মায়ায় বাঁধা পড়েছেন কেইলাহ। তাই টুরিস্ট ভিসায় আসা কেইলাহ আর অস্ট্রেলিয়ায় না ফিরে এখানেই জীবনটা কাটিয়ে দিতে চান। ঢাকায় আসার পর ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে কেইলাহ নাম নিয়েছেন ‘ফাতেমা আমুল’।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসায় মুগ্ধ হয়ে গেছি। দেশের বেশির ভাগ মানুষের ধর্মটাকেই নিজের বলে মনে হয়েছে। মুসলিম মেয়েদের মতো হিজাব পরাও শুরু করেছি। জর্জের প্রতারণার বিচার চেয়ে কেইলাহ বলেন, আমি চাই না তিনি আবার আমার জীবনে ফিরে আসুন। তার বিচার হোক।

কেইলাহ জানালেন, এরই মধ্যে কয়েকটি বাংলা শব্দও শিখে ফেলেছেন। তার মধ্যে ‘জি’, ‘কাও (খাও)’, ‘এই মামা’ শব্দগুলো বলে নিজেই হাসতে শুরু করলেন তিনি। অভিযোগের বিষয়ে জানতে বাংলাদেশে ব্যবহৃত জর্জের মোবাইল নম্বরে ফোন দিয়ে বন্ধ পাওয়া গেছে। খবর-ডেইলি বাংলাদেশ

আজকের বাজার/আখনূর রহমান